অতি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরের খরচার হাওরের দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। ক্রমশ বাড়ছে হাওরের পানি। এতে হাওরের নিচু এলাকার জমির ধান হুমকিতে পড়েছে। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিশ্বম্ভরপুর বাজারের দক্ষিণ দিকে ফসল রক্ষা বাঁধের পাশে কৃষক কোমর পানিতে নেমে জমির আধাপাকা ধান কাটছেন। কৃষকরা জানান, হাওরের উঁচু এলাকা থেকে নিচের দিকে পানি প্রবাহিত হওয়ায় এবং কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তাদের জমির আধাপাকা ধান পানিতে ডুবে গেছে। এজন্য তারা ধান কেটে নিচ্ছেন।
কৃষ্ণনগর গ্রামের কৃষক নারায়ণ বর্মন বলেন, প্রতিবছর হাওরের জমিতে জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। তার জমির ধান অর্ধেক পেকেছে ডুবে যাওয়া আশঙ্কায় তিনি জমির ধান কাটছেন।
নারায়ণ বিশ্বাস বলেন, হাওরের পানি কম। তবে নদীর পানি বেশি হওয়ায় পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
একই গ্রামের আসকর আলী বলেন, তিনি জমিতে ২৯ জাতের ধান লাগিয়েছেন। ধান পুরোপুরি পাকতে সময় লেগেছে। ধান পাকার আগেই উঁচু এলাকার পানি নেমে আসার কারণে তার জমি তলিয়ে যাওয়ার আগেই তিনি ধান কাটাচ্ছেন।
মঞ্জু বর্মন বলেন, জমিতে পানি জমে যাওয়ায় শ্রমিকরা ধান কাটতে চায় না। তাই বেশি দামে শ্রমিক নিয়ে জমির ধান কাটাচ্ছেন।
শ্রীবাস চন্দ্র বর্মন বলেন, হাওরের ভেতরে পানি প্রবাহের চ্যানেলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। তাই উঁচু জায়গার পানি নিচে নেমে যাওয়া ছাড়া বিকল্প কোনও উপায় নেই। এজন্য টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সফর উদ্দিন বলেন, ‘অতি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির জন্য এ সমস্যা হয়েছে। এটি প্রতিবছর হয়। তবে জলাবদ্ধতার কারণে কোনও কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তাদেরকে সহযোগিতা করা হবে।’
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার দাস বলেন, আগাম বন্যার আশঙ্কায় কৃষক জমি থেকে আধাপাকা ধান কাটছেন। এজন্য তেমন কোনও ক্ষতি হবে না। উপজেলার ১৮২০ হেক্টর জমির মধ্যে ১৬২০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। এরকম জলাবদ্ধতার স্বীকার হতে পারে ১০ বিঘা জমি। আবহাওয়া ভালো থাকলে সব কৃষক নিচু এলাকার ধান কাটতে পারবেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যসহকারী আল আমিন বলেন, হাওর থেকে নদীতে বেশি পানি। তাই রাবার ড্যাম নিচু করে দিলে নদী থেকে হাওরে পানি ঢুকবে। এ কারণে হাওরের নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।