কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একজন করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা। পাশাপাশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন রোহিঙ্গা নেতারাও। উখিয়া নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনার সংক্রমণ হওয়া মানে এটি আমাদের জন্য ভয়ের বিষয়। কারণ, ক্যাম্পে অসংখ্য মানুষ কাজ করছেন। স্থানীয়দের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি অনেক সংস্থায় মানুষ চাকরি করেন। চাকরির সুবাধে ক্যাম্পের আসা-যাওয়া করেন তারা। ফলে খুব দ্রুতই স্থানীয়দের মধ্যে করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে।’
বৃহস্পতিবার (১৪ মে) কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজের ল্যাবে ১৮৬ জনের মধ্যে ১২ জনের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তাদের মধ্যে একজন রোহিঙ্গা। প্রথমে দু’জন আক্রান্তের কথা বলা হলেও পরে জানা যায় একজন রোহিঙ্গা, অপরজন স্থানীয়। ওই রোহিঙ্গা লম্বাশিয়া ১নং (পশ্চিম) রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকেন। অপরজন কুতুপালং বাজারের পাশে অবস্থিত ঘুমধুম ইউনিয়নের কচুবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পরিচয় গোপন করে রোহিঙ্গা সেজে স্থানীয় এমএসএফ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
রোহিঙ্গার করোনা আক্রান্তের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কারণ ওই অঞ্চলের স্থানীয়দের একমাত্র বাজার কুতুপালং। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘেঁষা কুতুপালং বাজার আগে সপ্তাহে দুদিন বসতো। রোহিঙ্গারা আসার পর সেখানে প্রতিদিন কেনাবেচা হয়। লকডাউন থাকার পরও বাজারে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের জনসমাগম চোখে পড়ার মতো। এছাড়া দেশি-বিদেশি হাজারো এনজিও কর্মীর আনাগোনা রয়েছে বাজারে।
কুতুপালং বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা করোনার ঝুঁকিতে রয়েছি। যেকোনও সময় আমরা আক্রান্ত হতে পারি। কারণ, এরইমধ্যে দু’জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের একজনের বাড়ি কুতুপালং বাজারের পূর্ব পাশে। আরেকজন কুতুপালং বাজারের পশ্চিমে। আমরা মাঝখানে অবস্থান করছি। কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে ৩৫০ স্থানীয় বাংলাদেশি পরিবার বাস করছে। তারা সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে। তাই খুব দ্রুত আগের মতো লকডাউন কড়াকড়ি না করলে করোনা থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।’
উখিয়ার কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কমিউনিটি নেতা ইউনুছ আরমান বলেন, ‘করোনা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশ মেনে সব কিছু করছি। পার্শ্ববর্তী লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনা রোগী শনাক্তের খবরে আমরা উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছি। এ কারণে আমাদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে এবং অন্যদের মাঝেও সচেতনতা বাড়াতে হবে’।
লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মোহাম্মদ আয়ুব মাঝি বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত রোহিঙ্গা নুরুল আলম ভয়ে প্রথমে বাসা ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে শুক্রবার সকালে রোহিঙ্গা নেতাদের সহায়তায় তাকে এবং পুরো পরিবারটিকে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন এসে নিয়ে গেছে।’
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী ডা. আবু মোহাম্মদ তোহা বলেন, কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতাল থেকে নমুনা আসায় প্রথমে আমরা দু’জন রোহিঙ্গা বলেছিলাম। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক ব্যক্তি রোহিঙ্গা নন। ভালো চিকিৎসা পাওয়ার জন্য রোহিঙ্গা পরিচয় দিয়ে এমএসএফ হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম কচুবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা তিনি। বর্তমানে তিনি নিজ বাড়িতেই আছেন। আক্রান্ত রোহিঙ্গাকে এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া বলেন, কক্সবাজারের করোনা শনাক্তকরণ ল্যাবে মোট ৩৩৬২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে জেলায় শনাক্ত হয়েছে ১৩২ জনের। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১৪ মে) ১২ জনের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তাদের মধ্যে একজন রোহিঙ্গা।
বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রায় এক হাজার ৯০০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার তৈরির কাজ চলছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৫০০ শয্যার কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়াও করোনা আক্রান্তদের জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার পরিচালিত হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিতে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।