ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ উপজেলায় মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে দুই শিশুকে নির্মম নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামি হিসেবে অভিযুক্ত পীরগঞ্জ উপজেলার সেনগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জহিরুল ইসলাম গুড (৪৮) কে আটক করেছে র্যাব। জেলার রাণীশংকৈলের গাজিরহাট এলাকা থেকে রবিবার (১৪ জুন) ভোরে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এ নিয়ে দুই আসামিকে গ্রেফতার করা হলো।
র্যাব-১৩ ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি-১, দিনাজপুর এর একটি আভিযানিক দলের ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট মামুন রবিবার দুপুরে জহিরুলকে আটকের কথা নিশ্চিত করেছেন।
আটক জহিরুল জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার দেওধা গ্রামের সোহরাব আলীর ছেলে। জিজ্ঞাসাবাদে আসামি শিশু নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা র্যাবের কাছে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
উল্লেখ্য, এ মামলা আসামি করা হয়েছে মোট ৭ জনকে। এরমধ্যে জিয়াবুল (৫৬) নামের একজনকে আগেই গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। গত ৫ জুন এ মামলা দায়েরের পর প্রথমে থানা পুলিশ মামলাটির তদন্ত কাজ শুরু করে। তবে প্রথম ৮ দিনে তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে মামলাটি শনিবার দুপুরে ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তীতে র্যাবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এদিকে, নির্যাতনের শিকার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে এ ঘটনার মূলহোতা তাদেরই প্রতিবেশী ও মামলার দুই নম্বর আসামি মোতালেব আলী। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলার মূল আসামি মোতালেবকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে তাকেসহ অন্য আসামিদের গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মোতালেব আলী তারই প্রতিবেশী গৃহবধূ সরিফা খাতুনকে যৌন হয়রানিসহ কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। এতে সাড়া না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি সরিফার ছেলে সুমন (১৩) ও ভাতিজা কমিরুল ইসলামের (১৬) বিরুদ্ধে মোবাইল চুরির অপবাদ দেন। গত ২২ মে স্থানীয় ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলামের উপস্থিতিতে মোতালেব আলীসহ আরও ৭ জন মিলে ওই দুই শিশুকে আটক করে। এরপর তারা এক সালিশ বৈঠকের আয়োজন করে। পরিকল্পিত ওই সালিশে হাত-পা বেঁধে ও পায়ের ভেতরে লাঠি ঢুকিয়ে ওই দুই শিশুকে নির্মমভাবে মারধর করে। ইউপি সদস্যসহ মোতালেব ও তাদের সহযোগীদের ওই মারধরের চিত্র মোবাইল ফোনে ধারণও করা হয়। এতেই শেষ হয়নি তাদের নির্যাতন। পরে তারা ওই ভিডিও চিত্র গৃহবধূ সরিফা খাতুনকে দেখিয়ে তা ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে ইউপি সদস্য, মোতালেব ও তার সহযোগীরা মিলে সরিফা খাতুনকেও মারপিট ও শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। পরে গৃহবধূর বাড়ি থেকে একটি গরু নিয়ে যায় তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এরপর আসামিদের পক্ষভুক্ত কেউ একজন এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করলে তা ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর এ ঘটনায় শুক্রবার (৫ জুন) রাতে পীরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন নির্যাতনের শিকার সরিফা খাতুন। মামলা গ্রহণ করলেও আসামি গ্রেফতার না করার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। এরপর গত সপ্তাহের শনিবার ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক ড. কে. এম কামরুজ্জামন সেলিম পীরগঞ্জ উপজেলার সেনগাঁও ইউনিয়নে নির্মম নির্যাতনের শিকার সুমন ও কামরুলের বাড়িতে যান। তিনি সরিফা খাতুন ও দুই শিশুর কাছে পুরো ঘটনা শোনেন এবং ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এসময় অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে আসেন জেলা প্রশাসক।
