X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রংপুরে খাদ্য বিভাগের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
০৩ জুলাই ২০২০, ১৮:০৪আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২০, ১৮:০৪

রংপুর রংপুরে খাদ্য বিভাগের ধান চাল সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। খাদ্য বিভাগের দেওয়া টার্গেটের এক শতাংশ ধানও কিনতে পারেনি তারা। চাল সংগ্রহও চলছে ধীর গতিতে। এর জন্য খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতা, অনিয়ম, দুর্নীতিকে অনেকাংশে দায়ী করা হচ্ছে। তবে ধনের দাম বেশি হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

রংপুর জেলা খাদ্য কর্মকর্তার দফতরের গত ৩০ জুনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেলার ৮ উপজেলায় বোরো মৌসুমে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৪ হাজার ১০৮ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ধান কেনা হয়েছে মাত্র ২২০ দশমিক ৮০ মেট্রিক টন। অন্যদিকে, চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৯ হাজার ২৭৬ মেট্রিক টন। এর মধ্যে চাল কেনা হয়েছে মাত্র ৭ হাজার ৫২২ মেট্রিক টন। আতপ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৯৩ মেট্রিক টন, কেনা হয়েছে মাত্র ১৩ মেট্রিক টন।

উপজেলাওয়ারী—সদর উপজেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৮৮৮ মেট্রিক টন, কেনা হয়েছে মাত্র ৩১ মেট্রিক টন; চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ২৫৮ মেট্রিক টন, কেনা হয়েছে এক হাজার ৪৬৭ মেট্রিক টন। বদরগঞ্জে ধান চাল সংগ্রহ কার্যক্রম খুবই হতাশাজনক। সেখানে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ১৬৬ মেট্রিক টন, কেনা হয়েছে মাত্র এক মেট্রিক টন। চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ২৯৭ মেট্রিক টন, কেনা হয়েছে মাত্র ৩০৩ মেট্রিক টন। মিঠাপুকুরে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ২৯০ মেট্রিক টন, কেনা হয়েছে মাত্র ৮ মেট্রিক টন; চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ৪৮১ মেট্রিকটন, কেনা হয়েছে এক হাজার ৫১৫ মেট্রিক টন।

এছাড়া, পীরগঞ্জে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৬৫৬ মেট্রিক টন, কেনা হয়েছে ১৩ মেট্রিক টন; চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭০৮৮ মেট্রিক টন, কেনা হয়েছে ২ হাজার ৬৭৯ মেট্রিক টন। তারাগঞ্জে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা এক হাজার ১৭ মেট্রিক টন, কেনা হয়েছে ১৬ মেট্রিক টন; চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ২৩০ মেট্রিক টন, কেনা হয়েছে ৫৯৮ মেট্রিক টন। গঙ্গাচড়ায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ১৭৬ মেট্রিক টন, কেনা হয়েছে মাত্র ৮ মেট্রিক টন; চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা এক হাজার ৪৪৩ মেট্রিক টন, কেনা হয়েছে ৩৬৪ মেট্রিক টন। কাউনিয়া উপজেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা এক হাজার ৫০৭ মেট্রিক টন, কেনা হয়েছে মাত্র ২৫ মেট্রিক টন; চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা এক হাজার ৯৩৩ মেট্রিক টন, কেনা হয়েছে মাত্র ২১৪ মেট্রিক টন। পীরগাছায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৪০৬ মেট্রিক টন, কেনা হয়েছে ১১৮ মেট্রিক টন। চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৫৪৬ মেট্রিক টন, কেনা হয়েছে মাত্র ৩৭৮ মেট্রিক টন।

জেলা খাদ্য কর্মকর্তা কার্যালয়ের দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, বদরগঞ্জ, কাউনিয়া, গঙ্গাচড়া ও পীরগাছা উপজেলায় চাল সংগ্রহ করার পরিমাণ খুবই কম। অন্যদিকে, ধান কেনার ক্ষেত্রে রংপুর খাদ্য বিভাগ বরাবরের মতো চরম উদাসীন। এবারও তারা জেলার ৮ উপজেলায় মাত্র ২২০ মেট্রিক টন ধান কেনা দেখিয়েছে।

এ ব্যাপারে রংপুর সদর উপজেলার মমিনপুর গ্রামের কৃষক গোলজার হোসেন অভিযোগ করেন, রংপুর সদর উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ধান কেনার চেয়ে মিলারদের কাছ থেকে চাল কেনার জন্য বেশি উৎসাহী। কৃষকরা ধান নিয়ে গেলে ময়েশচারের দোহাই দিয়ে ধান কিনতে অনীহা প্রকাশ করেন তিনি। এবার ধানের দাম এমনিতেই বাজারে প্রতি মণ ৮শ' থেকে সাড়ে ৮শ' টাকা; ফলে খাদ্য গুদামে ধান দিলে একটু বেশি দাম পাওয়া গেলেও আমরা সেই ঝামেলায় যেতে চাই না। একই কথা বলেন, তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালির এক কৃষক। এছাড়া এবার ধান কাটা মাড়াইয়ের পর জেলার বিভিন্ন খাদ্য গুদামে ধর্না দিয়েও ধান বিক্রয় করতে পারেনি বলে অভিযোগ বেশ কয়েকজন কৃষকের।

হাসকিং ও অটোমেটিক রাইস মিলের বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন, এবার বাজারে ধানের দাম বেশি, ফলে সরকারি খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করতে গেলে কেজি প্রতি দুই টাকা ক্ষতি হয়। ফলে তারা ইচ্ছে থাকলেও চাল দিতে পারেননি। তার ওপর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাদের আবদার রক্ষা করতে হয়, সেটাও এক ধরনের সমস্যা বলে জানান তারা।

এ ব্যাপারে পীরগাছা উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা আকলিমা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ধান চাল সংগ্রহ অভিযান একটু স্লো হয়েছে—স্বীকার করে বলেন, 'বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় এবার কৃষকরা ধান দিতে উৎসাহী না। অন্যদিকে আবহাওয়াগত কারণেও ধান শুকনো সিদ্ধ করে চাল দেওয়া একটু সময় লাগছে।'

তিনি বলেন, '৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময় আছে, দেখা যাক।' তবে খাদ্য বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা বলছেন, এবার ধান চাল সংগ্রহ অভিযান পুরোপুরি সফল না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

সার্বিক বিষয়ে জেলা খাদ্য কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বলেন, 'খাদ্য সংগ্রহ অভিযান নিয়ে আমরা মহাবিপদে আছি। আমরা হাসকিং ও অটোমেটিক রাইস মিলের মিলারদের চাপ দিচ্ছি। তারা আমাদের সঙ্গে চুক্তি করেছে; নির্দিষ্ট পরিমাণ জামানত আছে।' ফলে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যেই চাল সংগ্রহ করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তবে ধান সংগ্রহ অভিযান সম্পর্কে কোনও আশার বাণী শোনাতে পারেননি তিনি। তিনি বলেন, ‘কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হচ্ছে।’

/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!