নওগাঁর বদলগাছীতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ১৫ পরিবারকে আধাপাকা ইটের বাড়ি উপহার হিসেবে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের হতদরিদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এসব পরিবার এমন বাড়ি পেয়ে আনন্দে অশ্রুসিক্ত। করোনাভাইরাসের এ দুর্যোগ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞা প্রকাশসহ তার সুস্থতা কামনা করেছেন হতদরিদ্র এ সুবিধাভোগীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে উপজেলায় ১৫টি সেমিপাকা (আধাপাকা) বাড়ি নির্মাণ করা হয়। যেখানে প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে চৌচালা টিনের ছাউনির দুইটি ঘর। যার মোট দৈর্ঘ্য ২২ ফুট এবং প্রস্থ ১০ ফুট। মেঝে পাকা করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ঘরে রয়েছে একটি করে কাঠের দরজা ও দুইটি করে জানালা। ঘরের একপাশে করে দেওয়া হয়েছে রান্নাঘর, টয়লেট, স্টোররুম এবং অপরপাশে একটি পাকা বারান্দা ও সিঁড়ি।
এই প্রকল্পে বরাদ্দ ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।
হতদরিদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আদি পেশা কৃষি। অন্যের বাড়িতে কাজ করে কষ্ট করে চলে তাদের জীবন জীবিকা। নুন আনতে পান্তা ফুরানো এসব পরিবার এই অবস্থাতেও আধা পাকা বাড়ি পেয়ে অশেষ কৃতজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। এ ব্যতিক্রম উদ্যোগ তাদের জন্য নতুন আশার আলো জাগিয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র আরও জানায়, পিছিয়ে পড়া এই প্রান্তি জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে তাদের বাড়ি দেওয়ার পাশাপাশি সন্তানদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হচ্ছে।
আধাইপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে সুবিধাভোগী বিজয় পাহান বলেন, তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছয়জন। বাপ-দাদারা বাঁশের বেড়া ও টিনের ছাউনির কুঁড়ো ঘরে বসবাস করে আসছিল। আমরা দীর্ঘ বছর থেকে এ কুঁড়ো ঘরে কষ্ট করে বসবাস করে আসছি। যেখানে ঝড়-বৃষ্টিতে ঘরে পানি পড়তো। বাচ্চাদের কষ্ট হতো। প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেওয়া বাড়িটি আমরা বিনামূল্যে পেয়েছি। গত একমাস থেকে সেই বাড়িতে পরিবার নিয়ে বসবাস করছি। আমরা বহুত খুশি।
একই গ্রামের বির্বল পাহান বলেন, বাবার জীবন কেটেছে বেড়ার ঘরে। বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে আমারও জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে বেড়ার ঘরে। আমাদের দিন আনা, দিন খেটে খাওয়া সংসার। কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি ইটের পাকা বাড়িতে ঘুমাতে পারবো। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদৌলতে আমাদের সেই স্বপ্নপূরণ হয়েছে। তাকে কৃতজ্ঞতা জানাই। এখন খেয়ে না খেয়ে হলেও ইটের বাড়িতে নিশ্চিন্তে সন্তানদের নিয়ে ঘুমাতে পারছি।
বালুভরা ইউনিয়নের নয়াগাঁও গ্রামের জগলু পাহান বলেন, তাদের অভাবের সংসার। সন্তানদের নিয়ে কুঁড়োঘরে গাদাগাদি করে বসবাস করতে হতো। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ইটের বাড়িতে এখন বসবাস করছেন।
বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু তাহির বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। ইতোপূর্বে বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে সুবিধাভোগীদের বাছাই করা হয়েছে। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী বাড়িগুলো তৈরি করে তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা বাড়িতে বসবাস শুরু করেছেন।
