গরুহাটে ক্রেতা নেই, খামারেও আসছে না তেমন কেউ। দু’একজন এলেও কাঙ্খিত দাম না বলায় গরু বিক্রি করতে পারছেন না খামারিরা। অনলাইনেও কোনও সাড়া মিলছে না ক্রেতার। এমন পরিস্থিতিতে বেশ দুঃশ্চিন্তায় যশোরের খামারিরা।
তবে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলছেন, ইতোমধ্যে অনলাইনে গরু বিক্রির জন্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে- এই খরা কেটে যাবে ঈদের দু’চারদিন আগেই।
কথা হয় যশোরের চৌগাছা উপজেলার মসিয়ূরনগরের বাসিন্দা খামারি আলাউদ্দিনের সঙ্গে। কোরবানির বাজারকে সামনে রেখে প্রায় দশ বছর ধরে গরু লালন পালন করে আসছেন তিনি। বলেন, এ বছরই ব্যতিক্রম। ঈদের প্রাক্কালে এই সময়ে খামারে একটা গরুও অবিক্রিত থাকতো না। অথচ গেল সপ্তাহে মোটে একজন পার্টি এসে ঘুরে গেছেন। গরুর যে দাম বলছেন, তাতে ক্রয়মূল্যও থাকছে না।
এ বছর তার খামারে দেশি ও ক্রস মিলিয়ে ৩৫টি গরু । যার মধ্যে দামড়া (দেশি) ১৫টি। ৬ মাস আগে প্রতিটি কেনা ১ থেকে দেড়লাখ টাকায়। প্রতিটির পেছনে মাসিক খাবার খরচ সাড়ে ৮ হাজার টাকারও বেশি। কিন্তু দাম ওঠেছে গড়ে ১ লাখ ত্রিশ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, গত বছর যে গরু বিক্রি করেছি ২ লাখ ৮০ হাজার থেকে তিন লাখ টাকায়; এবার সেটির দাম ১ লাখ ত্রিশের বেশি উঠছে না। গরু বিক্রি না হলে কী যে হবে- তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছি।
যশোর সদরের বড় শেখহাটি গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন। সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা আনতে দোকানের পাশাপাশি নিজ বাড়িতে প্রতি বছর ৪-৫টি গরু হৃষ্টপুষ্ট করে থাকেন। গত কয়েক বছর ব্যবসা ভালো হলেও করোনার কারণে এ বছর বিক্রি নিয়ে সংশয়ে আছেন। মাত্র দু’জন ক্রেতা এলেও তারা তেমন কোনও দাম বলেননি।
যশোরের প্রায় সকল খামারির একই অবস্থা। করোনার পরিস্থিতে খামার কিংবা হাট কোথাও দেখা মিলছে না ক্রেতার। বিক্রির উদ্দেশে হাটে গরু নিয়ে গেলেও বিক্রি করতে না পেরে দিনশেষে ফিরে যাচ্ছেন। তাদের মতে, মানুষের মধ্যে ঈদ নিয়ে কোনও আগ্রহই নেই। কেননা গত বছর এই সময়ে রাস্তায়, হাটে, খামারে ক্রেতারা কোরবানির জন্যে ঘোরাঘুরি করেছে; কিন্তু এবার কারোরই দেখা মিলছে না।
চৌগাছা উপজেলার কোমরপুর হাটের ইজারাদার আতাউর রহমান লাল বলেন, হাটে কোনও ভারতীয় গরু আসছে না। সবই খামারের এবং বাড়ির পোষা। কিন্তু করোনার প্রভাবে লোকজনের উপস্থিতি খুবই নগণ্য। গত বছর এই সময়ে হাটে বিকিকিনি একশ’ হলে এবার একই সময়ে ৩০ শতাংশও হয়নি। তাছাড়া গত তিনমাস হাট প্রায় বন্ধ ছিল। এবার হাটের ইজারা মূল্য উঠবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছি।
যশোরের অন্যতম বৃহৎ গরুর হাট শার্শা উপজেলার সাতমাইল বাজার। শনি ও মঙ্গলবার এখানে হাট বসে। যশোর ছাড়াও সাতক্ষীরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে এই হাটে পশু আনা হয় বিক্রির জন্যে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাররা এখান থেকে পশু কিনে নিয়ে যান। করোনায় বন্ধ থাকার পর হাট খোলা হলেও লোকসমাগম খুব সামান্য। খামারি ও বিক্রেতারা বলছেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ক্রেতা মিলছে না। দু’একজন যা আসছেন- তাদের দাম কাঙ্খিত নয়। সে কারণে গরু বিক্রি না করেই বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
এই হাটের অন্যতম ইজারাদার নাজমুল হাসান বলেন, আগে প্রতি হাটে কমপক্ষে পাঁচ হাজার পশু বিক্রি হলেও এখন তা এক থেকে দেড়শ’র বেশি নয়। গত ১০ বছরে এমন অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে মরণ ছাড়া কোনও গতি থাকবে না।
যশোরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শফিউল আলম বলেন, এই মুহূর্তে হাটে ক্রেতা কম ঠিকই কিন্তু ঈদ যত সামনে আসবে, কোরবানির পশুর চাহিদাও বাড়বে। তাছাড়া ইতোমধ্যে ফেসবুকের মাধ্যমে কোরবানির পশু বিক্রির একটি প্লাটফর্ম করা হয়েছে। সেখানে খামারিরা তাদের গরুর বিস্তারিত আপলোড করছে। খামারিদের এই হতাশা খুব শিগগিরই লাঘব হবে; কোরাবানির সময় ঘনিয়ে এলে গরু বিক্রির সংখ্যা বাড়বে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য মতে, এ বছর যশোরের ১০ হাজার ২৮২টি খামারে ৬৭ হাজার ৯৭৫টি গরু ও ছাগল হৃষ্টপুষ্ট করা হয়েছে।
