X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে বেড়েছে আউশ-আমনের চাষাবাদ

রাজশাহী প্রতিনিধি
৩০ জুলাই ২০২০, ০৪:৫৪আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২০, ০৫:২৭

ধানক্ষেতে চাষ দিচ্ছেন কৃষক

বাজারে ধানের ভালো দাম ও ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে রাজশাহীতে এবার আউশ-আমনের আবাদ বেড়েছে। চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় ৫০ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যা বিগত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়া এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯২০ মেট্রিক টন।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, ২০০৯-১০ অর্থ বছরে ৩৬ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আউশের উৎপাদন হয়েছিল ৮৪ হাজার ১৫৩ মেট্রিক টন। যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আবাদকৃত জমির পরিমাণ ১৩ হাজার ৫৪৪ হেক্টর বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ হাজার ৯৪ হেক্টর। যার উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৪ মেট্রিক টন। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৫০ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে আউশের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯২০ মেট্রিক টন। ৩০ জুনের মধ্যে আউশ ধান জমিতে শতভাগ লাগানো হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১০ হেক্টর জমিতে বেশি লাগানো হয়েছে।

রাজশাহী অঞ্চলে ধান চাষের জন্য জমি তৈরিতে মহিষের ব্যবহার আছে এখনও।

২০০৯-১০ অর্থ বছরে ৮৪ হাজার ৮৬৮ হেক্টর জমিতে আমনের উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৯৯ হাজার ১৭৫ মেট্রিক টন। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৭৬ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৬০ হাজার ১০০ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে। এবার ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৭৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার ১৪৯ মেট্রিক টন। ২৬ জুলাই পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৮৮৮ হেক্টর জমিতে ৪৬ শতাংশ আমনের চারা রোপন করা হয়েছে। আগামী ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে আমন ধানের চারা রোপন করা যাবে।

রাজশাহীর পবা উপজেলার কৃষক আব্দুস সত্তার জানান, ধান উৎপাদনে খুব বেশি লাভ হয় না। এ অবস্থাতেও সামান্য লাভের আশায় প্রাকৃতিক দুর্যোগকে সঙ্গী করে অনেক কষ্ট করে তারা ধানের আবাদ করেন। এরপরও যদি দাম না থাকে তাহলে তারা কিভাবে আবাদ করবে এমন প্রশ্ন তার।

এই কৃষক বলেন, এবার বোরো ধানের জন্য দুই জমি প্রস্তুত করে এক বিঘা ধান করেছিলেন। ধান ওঠার পর বাজারে দাম দেখে আউশেও ভালো দাম পাবেন এমন আশায় ৩ বিঘা জমিতে আবাদ করা হয়েছে।

যারা একটু সামর্থ্যবান তারা জমি চাষ করেন যন্ত্রের সাহায্যে

দুর্গাপুর উপজেলার কৃষক সামিউল ইসলাম জানান, বর্তমানে বিরি-২৮ ধান বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০ টাকা মণ। এর আগে ধানের দাম এতো বেশি থাকতো না। তাই আগ্রহ পেতাম না ধান চাষে। কিন্তু এবার ধানের দাম ভালো থাকায় চার বিঘা আউশ ধান চাষ করছি।

গোদাগাড়ী উপজেলার রামনগরের কৃষক মিজানুর রহমান জানান, গতবারের চেয়ে এবার বেশি ধান লাগিয়েছি। ধানের দাম ভালো পাওয়া ও ফলন বেশি হওয়াতে আউশের আবাদ বাড়িয়েছি। এবার বৃষ্টির কারণে সেচের সমস্যা হচ্ছে না।

পৌর এলাকার হেলিপ্যাড লালবাগের কৃষক মজিবুর রহমান জানান, গতবার দুই বিঘা ধান আবাদ করে ছিলাম, এবার ধানের দাম বেশি হওয়াতে তিন বিঘা ধান আবাদ করেছি।

তানোর উপজেলার কৃষক জার্জিস খান জানান, ধানের দাম বাজারে ঠিক রাখলেই কৃষকরা আবাদ করতে উৎসাহ পাবে। কারণে খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে গিয়ে অনেক সমস্যা তৈরি হয়। তখন বিরক্ত হয়ে চাষিরা ধান চাষ বাদ দিয়ে অন্য ফসলের চিন্তা করে।

ধান রোপণ করছেন কৃষক

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এবার আউশের আবাদ লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ধানের দাম পাওয়াতে এবার আবাদ বেড়েছে। ধানের জন্য আবহাওয়া ভালো আছে। আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করছে। আশা করা যায় কৃষক আনন্দের সঙ্গে আউশ চাষাবাদ করছে এবং সরকারে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের পাশাপশি তারা ভূমিকা রাখবে।

বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গোদাগাড়ী জোনের সহকারী প্রকৌশলী মো. জিল্লার বারী জানান, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে গোদাগাড়ী উপজেলার কৃষকদের আউশ মৌসুমে সেচ প্রণোদনার জন্য ৪৬ লাখ ৯৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। যা উপজেলার ৭১৪টি গভীর নলকূপ ও ভূ-উপরিস্থ ৬০টি পাম্পের আওতায় প্রায় ২০ হাজার ৪৭০ জন কৃষক এই সুবিধা পাবেন। এই প্রণোদনা বরাদ্দ থেকে প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমি বিনামূল্যে সেচের আওতায় আসবে।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামছুল হক বলেন, কৃষিভিত্তিক এ অঞ্চলে সব সময় খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে। করোনাকালেও এর ব্যত্যয় হবে না। রাজশাহীতে আউশ আবাদের পরিমাণটা বেড়েছে। সরকারের কিছু বিষয় থাকে এবং আমাদের উত্তরবঙ্গে পানির একটা সমস্যা আছে। যার কারণে আমরা বোরো থেকে আউশ ও আমন মৌসুমে যাবো। এতে প্রতিবছর বোরো আবাদের পরিমাণ কমছে। এবার আমরা আউশ ও আমনের উৎপাদনের একটা লক্ষ্যমাত্রা ধরেছি। প্রতিবছরই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন বেশি হয়। এবারও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আউশ উৎপাদনের পরিমাণ অনেক বেশি হবে। এবার বাজারে ধানের দাম ভালো আছে। সেই সাথে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে করে অনেক উচু জমিতেও পানির জন্য ধানের চারা রোপন করতে কৃষকদের সমস্যা হচ্ছে না। সেই সাথে সরকার থেকে কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এতে করে তারা উৎসাহিত হচ্ছে।

 

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
নির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
শনিবার জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভানির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ