পরকীয়ার ঘটনা মেনে নিতে না পেরে সন্তানদের নিয়ে পরিকল্পিতভাবে স্বামী জামাল হোসেনকে হত্যা করেন স্ত্রী শারমিন আক্তার ডলি। বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পৃথক দুটি আদালতে সৌদি প্রবাসী জামাল হোসেনের স্ত্রী ও তার সন্তানেরা এ তথ্য দেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন স্ত্রী শারমিন আক্তার ডলি (৪০), মেয়ে সামিয়া আক্তার (২০) ও ছেলে তানভির হাসান ডালিম (১৮)। ফতুল্লা মডেল থানার (ওসি) মো. আসলাম হোসেন এ তথ্য জানান।
ওসি আসলাম জানান, ফতুল্লার দাপাইদ্রাকপুর এলাকার সৌদি প্রবাসী জামাল হোসেন (৫৪) দেড় বছর আগে দেশে ফিরে একই এলাকার এক নারীর সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ঘটনার দিন জামাল হোসেন ওই নারীর সঙ্গে দেখা করে বাসায় এসে গোসল করেন, এমন সন্দেহ করেন স্ত্রী ডলি বেগম। রাতেই স্বামীর পরকীয়ার বিষয়টি জানাতে নগরীর মাসদাইর থেকে মেয়ে সামিয়া আক্তারকে বাসায় ডেকে আনেন। পরে ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বামী জামাল হোসেনকে দুধের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খেতে দেন। এতে জামাল হোসেন দ্রুত ঘুমিয়ে পড়লে স্ত্রী শারমিন আক্তার ডলি হাতুড়ি দিয়ে স্বামীর মাথায় আঘাত করেন। পরে দুই সন্তানের সহায়তায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে স্বামীকে হত্যা করেন শারমিন। মৃত্যু নিশ্চিত করে টেনে নিয়ে লাশ রাখা হয় বাথরুমে। পরে ছেলে তানভির হাতুড়ি দিয়ে বাথরুমের কমোড ভেঙে বাড়ির ভাড়াটিয়াদের ডেকে তুলে জানায় তার বাবা বাথরুমে পড়ে মারা গেছেন। এভাবেই স্ত্রী-সন্তানদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন জামাল। নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আলম এবং আবতাবুজ্জামানের পৃথক আদালতে এ স্বীকারোক্তি দেন আসামিরা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর (তদন্ত) এস এম সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নিহতের স্ত্রী ও দুই সন্তানদের আটক করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রথম দিকে, একেক জন এককভাবে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিচ্ছিলো। এক পর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে। আজ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তারা।’
প্রসঙ্গত, ২৫ আগস্ট দিবাগত রাত আড়াইটায় নিজ বাড়ির বাথরুমে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় প্রবাসী জামাল হোসেনকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী লাশ নেওয়া হয়নি হাসপাতালে, দ্রুত লাশ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। তবে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেশীদের সন্দেহ হলে তারা পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ও স্ত্রী-সন্তানদের আটক করে।
আরও পড়ুন:
প্রবাসীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার, স্ত্রী-সন্তান আটক