গরিবের ডাক্তার খ্যাত লুৎফর রহমান এবার মানিকগঞ্জে মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীরা যাতে স্বাস্থ্যসেবায় অবহেলা আর গাফিলাতি না করেন সেজন্য নতুন উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি ‘গুগল মিট’ এর মাধ্যমে সদর উপজেলায় উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রতিদিন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হাজিরা নিশ্চিত করেন। একইসঙ্গে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোয় আসা রোগীদের পরামর্শ ও সেবা নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সমস্যা নিয়েও আলোচনা করছেন তিনি।
জেলা সিভিল সার্জন আনোয়ারুল আমিন আখন্দ তার এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘আমার জানা মতে অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হাজিরা নিশ্চিতের ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ লুৎফর রহমান দেশে প্রথম শুরু করেছেন।’
সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানা গেছে, উপজেলায় চারটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ২৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ২৪০টি টিকাদান কেন্দ্র রয়েছে। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৯৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বাস্থ্য সেবায় কাজ করছেন। এক মাস আগে থেকে অনলাইন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সপ্তাহে ছয় দিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত তাদের কর্মস্থলে উপস্থিতি এবং পেশাগত দায়িত্ব নিশ্চিত করা হচ্ছে।
সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লুৎফর রহমানের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, গুগল মিটের মাধ্যমে তিনি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন। রোগীদের সেবা দিতে কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা, তাদের কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা তা নিয়ে আলোচনা করছিলেন।
এ বিষয়ে ডা. লুৎফর রহমান বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা হচ্ছে আমাদের মৌলিক চাহিদা। আমরা মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। করোনার সময় আমাদের কেউ যাতে এই সেবা প্রদানে গাফলতি না করেন এজন্য আমার এই প্রচেষ্টা। আমাদের অনেক ইতিবাচক কার্যক্রম আছে। যেমন অনলাইনে হাজিরা নিশ্চিতকরণ, করোনার পরিস্থিতিতে নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদান, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের বাড়িতে গিয়ে ওষুধ ও স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান, তাদের সার্বিক খোঁজখবর নেওয়া, লকডাউন নিশ্চিতকরণ এবং মৃত ব্যক্তিদের দাফনে সহযোগিতা করা।’
তিনি আরও বলেন, এছাড়া বন্যার সময় প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, স্বাভাবিক প্রসব ও মাতৃস্বাস্থ্য সেবা এবং সাধারণ রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত ছিল। পাশাপাশি প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে অভিযোগ বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। কেউ যদি স্বাস্থ্য প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ কিংবা সেবার মান বৃদ্ধির কোনও পরামর্শ দেন সেটিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে আঙিনায় বাগান ও সামাজিক বনায়নের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যা এর আগে কখনও করা হয়নি।’
গরীবের ডাক্তার বলেন, এসব কার্যক্রম যথাসময়ে এবং ঠিকভাবে সম্পন্ন করতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। অনলাইন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রতিমুহূর্তে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এই উদ্যোগে সুফলও মিলছে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মস্থলে উপস্থিতির হার এখন শতভাগ।
সিভিল সার্জন বলেন, কাজের প্রতি দায়িত্বশীলতার কারণে ইতোমধ্যে জেলা সদরে কর্মদক্ষতার শতভাগ সফলতা দেখিয়েছেন ডা. লুৎফর। এখন থেকে নিয়মিত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের শুধু হাজিরা নিশ্চিত করাই নয়, কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে কিছু কিছু জটিল-কঠিন রোগীকেও সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।