ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে নির্মমভাবে পুড়িয়ে হত্যা মামলার রায়ের আজ (২৪ অক্টোবর) এক বছর পূর্ণ হলো। বর্তমানে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলাটি হাইকোর্টের আপিল বিভাগে ডেথ রেফারেন্স শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। করোনাভাইরাসের সংকটময় পরিস্থিতি কেটে গেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলাটির শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন ফেনীর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট হাফেজ আহমেদ।
অ্যাডভোকেট হাফেজ আহমেদ বলেন, ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য (ডেথ রেফারেন্স) মামলার যাবতীয় কার্যক্রম হাইকোর্টে পৌঁছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক (মামলার যাবতীয় নথি) ছাপানো শেষ করা হয়েছিল। পরে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে শুনানির জন্য মামলাটি প্রধান বিচারপতি বরাবর উপস্থাপন করা হয়। আপিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য বেঞ্চ গঠন করেছেন প্রধান বিচারপতি।
তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালের এ দিনে (২৪ অক্টোবর) রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা ঘটনায় প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলাসহ ১৬ জনের ফাঁসির রায় দেওয়া হয়। এছাড়া আসামিদের এক লাখ টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদ। এরপর ৪ জন আসামি খালাস চেয়ে উচ্চ আদালতে আইনজীবীদের মাধ্যমে আপিল করেছেন। বাকি ১২ জন আসামি কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জেল আপিল করেছেন।
ফেনী জেলা কারাগারের কারা কর্মকর্তা (জেলার) মো. শাহাদাত হোসেন জানান, মৃত্যৃদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে অন্য মামলা থাকায় উপজেলা আ.লীগের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন, পৌর কাউন্সিলর, সাবেক পৌর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মোকসুদ আলমকে ফেনী কারাগারে রাখা হয়েছে।
কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা কে রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে। সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন ও মোহাম্মদ শামীমকে রাখা হয়েছে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে।
রায়ের এক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নুসরাত জাহান রাফির মা শিরিনা আক্তার বলেন, খুনিরা আমার বুকের মানিক রাফিকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। আজ দেড় বছর আমি শান্তিতে ঘুমাতে পারি না। দুই চোখের পাতা বন্ধ করলে রাফির পোড়া শরীর আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির কাছে সবিনয় অনুরোধ জানাই, উচ্চ আদালতে মামলাটির কার্যক্রম দ্রুত শেষ করে খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হোক। কোনও অজুহাতেই যেন খুনিরা পার পেয়ে না যায়।
মামলার বাদী নুসরাত জাহান রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, আমরা আদালতের প্রতি শতভাগ আস্থাশীল। নিম্ন আদালতে আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। আশা করছি উচ্চ আদালতেও ন্যায়বিচার পাবো।
নুসরাতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার পরিবারের সদস্যদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাড়িটি এখনও পুলিশ পাহারা দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুসরাত জাহান রাফি। এই ঘটনার ২০০ দিনের মাথায় ৬১ কার্যদিবস শুনানির পর ৮৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ১৬ জনের ফাঁসির রায় ও প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ডের আদেশ দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদ।
