X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বাবার কোলে চড়ে পরীক্ষা দিয়েও পাস করেছে নাইস

বগুড়া প্রতিনিধি
০৫ মে ২০১৭, ১৯:৩৯আপডেট : ০৫ মে ২০১৭, ১৯:৪১

বাবার কোলে চড়ে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে নাইস খাতুন বগুড়ার ধুনটের বহালগাছা গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী নাইস খাতুন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল বাবা কোলে চড়ে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সেই নাইস খাতুন এসএসসিতে জিপিএ-৩.৫৫ পেয়েছে। তার এই ফলাফলে পরিবারসহ গোটা বহালগাছা গ্রামেই ছড়িয়ে পড়েছে উচ্ছ্বাস।



লেখাপড়া শেষে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিতে চায় নাইস। সে চায় ভবিষ্যতে শিক্ষক হয়ে তার মতো অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেওয়ার।
বগুড়ার ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের বহালগাছা গ্রামের দরিদ্র কৃষক নজরুল ইসলামের মেয়ে দুই সন্তানের মধ্যে ছোট নাইস খাতুন। জন্ম থেকেই তার দুই পা থাকলেও হাঁটতে বা দাঁড়াতে পারে না। এছাড়া ডান হাতটিও অকেজো। তাই বাম হাত দিয়েই লিখতে হয় তাকে। হাঁটতে বা দাঁড়াতে না পারায় বাবা ও মায়ের কোলে চড়ে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয় নাইসকে। তারপরও দমে যায়নি তার মনোবল। বাবার কোলে চড়ে এভাবে ২০১৪ সালের জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৩.৬৭ পেয়েছিল। আর সে এভাবেই অদম্য ইচ্ছা শক্তি নিয়ে এগিয়ে চলছে। সে বিশ্বহরিগাছা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। কেন্দ্র ছিল ধুনট এনইউ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। বাবার কোলে চড়ে কেন্দ্রে এসে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেয়। তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক সেজাব উদ্দিন বলেন, নাইস খাতুন জিপিএ-৩.৫৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করায় আমরা খুব গর্বিত।
ফলাফল প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার বিকালে কথা হয় নাইস খাতুনের সঙ্গে। সে বলে, ‘ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। তাই মনের শক্তি নিয়েই শিক্ষা জীবন শুরু করেছি। কষ্ট হলেও লেখাপড়া শেষ করে শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নেবো।
শিক্ষক হতে পারলে আমার মতো অসহায় ও দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের দায়িত্ব নেবো।’
ডান হাত অকেজো থাকায় বাম হাত দিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে নাইস খাতুন ফলাফল বিষয়ে নাইস বলে, ‘রেজাল্ট আরও ভালো হলে খুব খুশি হতাম। এখন স্থানীয় জালশুকা হাবিবর রহমান ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হবো।’
মেয়ের ফলাফলে সন্তুষ্ট বাবা নজরুল ইসলাম জানান, জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী মেয়ে নাইস খাতুনকে সুস্থ করার জন্য অনেক চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু অর্থের অভাবে তাকে পুরোপুরি চিকিৎসা দেওয়া যায়নি।
তিনি বলেন,গত ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় নাইসকে নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছিল। এরপর জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অতিরিক্ত সচিব কামরুন নাহার খানম একটি হুইল চেয়ার উপহার দিয়েছিলেন। রংপুর জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা তাপস কুমার বর্মা বাড়িতে গিয়ে নাইসকে চেয়ারটি পৌঁছে দেন। এ সময় জেলা প্রতিবন্ধী সেবা সাহায্য কনসালটেন্ট ফারজানা ইয়াসমিন উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে এ চেয়ারে বসেই নাইস পরীক্ষা দিতে যায়। বর্তমানে এ চেয়ারেই সে চলাফেরা করে থাকে। বাবা নজরুল ইসলাম তার মেয়ের স্বপ্ন পূরণে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
/এআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় গভর্নরের নীরবতা রহস্যজনক: ১২ দলীয় জোট
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় গভর্নরের নীরবতা রহস্যজনক: ১২ দলীয় জোট
গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধাপরাধের তদন্ত চায় জর্ডান
গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধাপরাধের তদন্ত চায় জর্ডান
কোটি ভিউতে ফারহানের সেঞ্চুরি!
কোটি ভিউতে ফারহানের সেঞ্চুরি!
ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
সর্বাধিক পঠিত
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক