X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে শীতে বোরো বীজতলার ক্ষতির আশঙ্কা

রাজশাহী প্রতিনিধি
১৭ জানুয়ারি ২০১৮, ১০:৫৩আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০১৮, ১০:৫৪

রাজশাহীতে শীতে বোরো বীজতলার ক্ষতির আশঙ্কা রাজশাহীতে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় বোরো বীজতলাসহ শীতকালীন শাক-সবজির ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরকম আবহাওয়া কিছুদিন থাকলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিবিদরা।

বাঘা উপজেলার সবজি চাষি আলম হোসেন ৩৩ শতক জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন। তিনি জানান, কয়েক দিন ধরে রোদের মুখ দেখা যায়নি। ঘন কুয়াশার কারণে সবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্প্রে করেও ঠেকানো যাচ্ছে না।

বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌর এলাকার পেয়ারা চাষি অধ্যাপক কাজী শফিকুল ইসলাম বলেন, শীত ও ঘন কুয়াশায় পাঁচ বিঘা জমির পেয়ারা নষ্ট হয়ে গেছে। এতে আমার ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টাকা।

মোহনপুর উপজেলার বেলনা গ্রামের কৃষক নওশাদ আলী জানান, শীত মৌসুমে প্রতি বছর বোরো ধানের চারা নষ্ট হলেও এবারে ক্ষতির মাত্রা অনেকটা বেশি। কুয়াশার চাইতে শীতে চারাগাছের ক্ষতি বেশি হচ্ছে বলে ধারণা তার। এজন্য বীজতলা পলিথিনে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।

তানোর উপজেলার মোহনপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, গত বছর ৩০ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপন করেছিলাম। এই বছরও সেই পরিমাণ জমিতে চারা রোপন করবো। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু জমি তৈরির শুরুতেই হোঁচট খেলাম। জিরা জাতের ১২০ কেজি বীজতলা তৈরি করেছিলাম। বীজও ভালো হয়েছিল। অথচ কয়েকদিনের টানা ঘন কুয়াশায় বীজগুলো হলুদ ও লাল রং হয়ে পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে।

রাজশাহীতে শীতে বোরো বীজতলার ক্ষতির আশঙ্কা তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের চিমনা গ্রামের কৃষক আবুল কাসেম জানান, শীতের কারণে আলু খেতে ছত্রাক জাতীয় রোগ যাতে দেখা দিতে না পারে সেজন্য ছত্রাকনাশক ওষুধ স্প্রে করা হয়েছে। এতে বাড়তি টাকা ব্যয় হচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে এভাবে ওষুধ স্প্রে করতে হতো না।

মোহনপুর উপজেলার ধুরইল ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রামের পান চাষি দেলোয়ার হোসেন মন্টু জানান, তীব্র শীতে পান ঝরে যাচ্ছে। কোনও কীটনাশক ব্যবহার করেও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। পানের বরজ থেকে ভালো পান সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে এসে বাজারজাত করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগ পানের ওপরে কালো দাগ।

পানের বরজের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী বলেন, ‘সাধারণত শীতকালে পানের বরজের ক্ষতি হয়। তবে এই বছর এখন পর্যন্ত কোনও ক্ষতি হয়নি। কারণ এ বছর প্রথম থেকেই কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। যাতে বরজের উত্তরের দিকটা মজবুতভাবে ঘন করে বেড়া দেওয়া হয়। এছাড়া বেড়ার ছাদও মজবুত করে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।’

আমের মুকুলের ব্যাপারে দেব দুলাল ঢালী বলেন, ‘আগাম কিছুটা মুকুল এলেও তাতে কোনও ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তবে মুকুল ফোটার সময় এই আবহাওয়া বিরাজ করলে ছত্রাকের আক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা আছে। এছাড়া মসুর ও খেসারির উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।’

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) মোজদার হোসেন বলেন, ‘এ বছর শীতের শুরু থেকেই কৃষকদের সঠিক দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মাঠে নিয়মিত আমাদের প্রতিনিধিরা কাজ করেছেন। তাই এখন পর্যন্ত শীত ও ঘন কুয়াশায় ফসল ও শাক-সবজির কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে এই আবহাওয়া আরও কিছুদিন বিরাজ করলে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।’

রাজশাহীতে শীতে বোরো বীজতলার ক্ষতির আশঙ্কা গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মরিয়ম আহমেদ বলেন, ‘সকাল বেলায় বোরো ধানের বীজতলার পানি বের করে দিতে হবে। তাহলে বীজতলা ভালো থাকবে। কুয়াশা থেকে রক্ষার জন্য রাতের বেলায় বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। এছাড়া প্রয়োজনে কীটনাশক, স্প্রেসহ বীজতলা সুরক্ষার জন্য কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় বোরো ধানের বীজতলা রয়েছে ৭৮৫ হেক্টর, আলু এক হাজার ৭৮৫ হেক্টর ও শীতকালীন শাক-সবজি রয়েছে ৮০০ হেক্টর।’

মোহনপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রহিমা খাতুন জানান, মোহনপুর ছোট আয়তনের উপজেলা। এখানে সব ধরনের ফসলের চাষাবাদ হলেও বোরো ধানের পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার হেক্টর। শীতজনিত কারণে কিছু বীজতলায় রোগ দেখা দিয়েছে। তবে শীত কমলে দ্রুত এসব বীজতলা সেরে যাবে। মাঠপর্যায়ে ঘুরে সাদা পলিথিনের মাধ্যমে কৃষকদের বীজতলা ঢেকে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক দেবল কুমার মৈত্র বলেন, ‘মঙ্গলবার(১৬ জানুয়ারি) রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া ১ থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ৮ থেকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৭.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ফিরে আসবে।’

এদিকে শীতের কারণে শাক-সবজির উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে শাক-সবজির দাম বেড়ে গেছে বলে সবজি বিক্রেতারা জানান।

নগরীর সাহেব বাজার এলাকার বিক্রেতা মশিউর রহমান জানান, বাজারে প্রতি কেজি আলু ২০ থেকে ২৪ টাকা, পেঁপে ১৫ টাকা, পটল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, প্রতি হালি লেবু ১৫ থেকে ২০ টাকা, প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, শসা ২৫ থেকে ৩০ টাকা, প্রতি পিস লাউ ১৫ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, ফুলকপি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ৩০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতিটি ১৫ টাকা, মুলা ১৫ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সবজি ক্রেতা মুরশেদা খানম জানান, কয়েকদিন থেকে সবজির দাম অনেক বেড়েছে। ২০ থেকে ৩০ টাকার বেগুন ৪০-৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আলু বাদে সব সবজির দাম বেশি।

/এআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিএনপি নেতাদের কথা মাঠকর্মীরা শোনে না: ওবায়দুল কাদের
বিএনপি নেতাদের কথা মাঠকর্মীরা শোনে না: ওবায়দুল কাদের
কয়েকটি দেশেই আটকে আছে সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার
কয়েকটি দেশেই আটকে আছে সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার
আফসোসে পুড়ছেন হৃদয়
আফসোসে পুড়ছেন হৃদয়
কাজ শুরু করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস, রাতভর জ্বলবে সুন্দরবন
কাজ শুরু করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস, রাতভর জ্বলবে সুন্দরবন
সর্বাধিক পঠিত
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ