X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

শীতেও ফসল নিয়ে শঙ্কায় রাজশাহী অঞ্চলের চাষিরা

দুলাল আবদুল্লাহ, রাজশাহী
২০ জানুয়ারি ২০১৮, ১৪:২৪আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০১৮, ১৯:১৭

শীতে হলুদ হয়ে যাচ্ছে ধানের বীজতলা চার বিঘা জমিতে আউশ ধান চাষ করেছিলেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গোবিন্দপাড়া ইউনিয়নের সন্তোষ কুমার।  গত বর্ষায় ধান কাটার এক সপ্তাহ আগেই বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় জমি। সেই ক্ষতি কাটাতে এবার সাত বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। এজন্য ১০ কাঠা জমিতে বীজতলা করেছেন। তবে শীত আর ঘন কুয়াশায় বীজতলা হলদে হয়ে যাচ্ছে। তাই বন্যার মতো শীতেও ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কায় আছেন তিনি।

শুধু সন্তোষ কুমার নন, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোরের হাজারো কৃষক প্রকৃতির কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, সংকট এড়াতে কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার বন্যায় জেলায় ১৬ হাজার ৪০৮ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির শিকার হয়েছেন ৫১ হাজার ৩৭৭ জন কৃষক। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বাগমারা উপজেলায়। শীতে হলুদ হয়ে যাচ্ছে ধানের বীজতলা

সূত্রটি আরও জানায়, এবার জেলায় ২৬ হাজার ৩১৯ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে এক হাজার ৯২৬ হেক্টর জমিতে। বোরোর বীজতলা করা হয়েছে ৪ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে। এছাড়া ৪২ হাজার ১৫০ হেক্টর  জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও চাষ হয়েছে ৪০ হাজার ৩৬১ হেক্টর জমিতে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের পুনর্বাসনে চলতি রবি মৌসুমে গম, ভুট্টা, সরিষা ও বোরো ধান চাষ করতে বিনামূল্যে সার, বীজ বিতরণ করা হয়েছে। রাজশাহী জেলায় ৫১ হাজার ৩৭৭ জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের মধ্যে ১০ হাজার ৬০০ জনকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। কৃষক প্রতি ২০ কেজি গম, ২ কেজি ভুট্টা, সরিষা ১ কেজি ও বোরো ধান ৫ কেজি করে দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে প্রতিটি ফসলের জন্য ২০ কেজি ডিএপি, ১০ কেজি পটাশ সার দেওয়া হয়েছে বলে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানায়।

বোরো চাষের জন্য এবার নওগাঁ জেলায় ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৫৯ হেক্টর, নাটোর ৫৫ হাজার ৪৪৭ হেক্টর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৪৪ হাজার ৮৯৬ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে রাজশাহীর কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের  প্রধান ও অতিরিক্ত পরিচালক এসএম মোস্তাফিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সব সময় তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছি। আগে থেকেই কৃষকদের সতর্ক করা হয়েছে। শীতের শুরু থেকেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাই আমরা এটা ক্ষতি হিসেবে দেখছি না। কৃষকরাও আসলে ক্ষতির বিষয়টি ভাবছেন না। আর তাপমাত্রাও বাড়তে শুরু করেছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অন্য বছরের তুলনায় এ বছর আমনের ফলন ভালো হয়েছে। বন্যায় মাঠে পলি পড়ে ধানের ফলন ভালো হয়েছে। সেইসঙ্গে চারাসহ চাষাবাদের বিভিন্ন উপকরণ সহায়তা দিয়েছি, তাতে কৃষকের ক্ষতিটা পুষিয়ে গেছে।’

শীতে কৃষকরা আবার ক্ষতির মুখে পড়লে কোনও পদক্ষেপ নেবেন কিনা জানতে চাইলে এই কৃষিবিদ বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সরকার থেকে এখন পর্যন্ত তেমন কোনও নির্দেশনা পাইনি। আর এই শীতে বড় ধরনের ক্ষতির মতো পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়নি। আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী কৃষকরা ঠিকমতো পরিচর্যা করায় ফলন ভালো হবে বলে আশা করছি। রাজশাহী অঞ্চলে ৩ লাখ ৫২ হাজার জমিতে চাষাবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা আছে সেটি অর্জন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’ শীতে নেতিয়ে পড়ছে রবিশস্য

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কৃষক আগের থেকে এখন অনেক সচেতন। তাই আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে আমরা কৃষকদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছি। তারা যাতে কৃষি থেকে বিমুখ না হয় এজন্য জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আমাদের কর্মীরা তৎপর রয়েছেন।’

জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সারোয়ার জাহান বলেন, ‘শীতে এবার ৫০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। এ বছর বেশি বৃষ্টি হয়েছে। প্রচণ্ড গরম পড়েছে। শীতের তীব্রতাও ছিল বেশি। বর্ষার পরে এবার ভাদ্র মাসে ভালো রোদ পড়েনি। ভেজা অবস্থার কারণে মাটি গরম হয়নি, যার কারণে শীতের অনুভূতি বেশি হচ্ছে।’

তবে জলবায়ুর এ পরিবর্তন মানবসৃষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন একই বিভাগের আরেক অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি হচ্ছে তা স্বাভাবিক হিসেবে দেখতে হবে। শীতের এই অবস্থা যদি ২০-৩০ বছর ধরে চলে তবে তাকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘটেছে বলা যেতে পারে।’

অধ্যাপক তাপু বলেন, ‘প্রকৃতির খামখেয়ালিতে এধরনের আবহাওয়া আমরা দেখতে পাচ্ছি। তবে কৃষি ক্ষেত্রটাকে রক্ষা করতে আমাদের ভাবতে হবে। যাতে করে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কৃষিসহ অনুকূল পরিবেশের কথাও চিন্তা করতে হবে।’

 

 

/এসটি/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ওডেসায় একটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ৫
ওডেসায় একটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ৫
বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যায়পাল নিয়োগের পরামর্শ ইউজিসির
বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যায়পাল নিয়োগের পরামর্শ ইউজিসির
‘৭ জানুয়ারি নৌকার প্রার্থীকে জেতানোর জন্য আমরা অনেক অপকর্ম করেছি’
‘৭ জানুয়ারি নৌকার প্রার্থীকে জেতানোর জন্য আমরা অনেক অপকর্ম করেছি’
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সর্বাধিক পঠিত
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
ফালুর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন
ফালুর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন
১০ দিনে ভরিতে কমলো ৮ হাজার টাকা
সোনার দাম১০ দিনে ভরিতে কমলো ৮ হাজার টাকা
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম