জয়পুরহাট চিনিকল থেকে আখ বিক্রির টাকা না পেয়ে কৃষকরা রোপণ করা ফসল নষ্ট করে অন্য ফসল চাষের দিকে ঝুঁকছেন। ৬ হাজার কৃষককে তিন মাস ধরে তারিখের পর তারিখ দিয়ে যাচ্ছেন চিনিকল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আখের দাম পরিশোধ করতে পারছেন না। এ কারণে আখক্ষেত নষ্ট করে অন্য ফসল চাষ করছেন চাষিরা। এরইমধ্যে চিনিকলের আওতাভুক্ত সাড়ে তিনশ’ একর জমির আখের চারা নষ্ট করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ অভিযোগ স্বীকার করে চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, তারা চিনিকলে মজুত চিনি যত দ্রুত সম্ভব বিক্রি করে আখ চাষিদের টাকা পরিশোধের চেষ্টা করছেন।
কৃষকরা জানান, গত মাড়াই মৌসুমের (ডিসেম্বর মাসে) জয়পুরহাট চিনিকল কৃষকদের কাছ থেকে বাকিতে প্রতি কুইন্টাল সাড়ে তিনশ’ টাকা দরে আখ কিনেছে। মৌসুম চলাকালে কিছু টাকা পরিশোধ করেছে। মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ার পরও চিনিকলের কাছে ৬ হাজার কৃষকের মোট বকেয়া ১৬ কোটি টাকা। যা গত তিন মাসেও পরিশোধ করতে পারেনি চিনিকল কর্তৃপক্ষ। কৃষকদের দাবি, আখ হলো দীর্ঘমেয়াদি ফসল। অনেক টাকা খরচ করে তারা আখ চাষ করেন। সেই আখ চিনিকলে বিক্রি করার পর তিন মাস ধরে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, ‘এছাড়াও এক গাড়ি আখ জমি থেকে চিনিকল পর্যন্ত পৌঁছাতে তাদের শ্রমিক ও পরিবহনের জন্য বাড়তি টাকা খরচ করতে হয়। আখ বিক্রির টাকা পাওয়ার পর তারা ওই টাকা পরিশোধ করেন। চিনিকল কর্তৃপক্ষ টাকা না দেওয়ায় তারা শ্রমিক ও পরিবহনের টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না।’
জয়পুরহাট পৌরসভার নাপিতপাড়া মহল্লার আখচাষি হাফিজার রহমান বলেন, ‘সাত বিঘা জমিতে আখ চাষ করে গত ডিসেম্বর মাসে চিনিকলে বিক্রি করেছি। এখনও চিনিকলের কাছে আড়াই লাখ টাকার ওপরে পাবো। তারিখের পর তারিখ দিচ্ছে। তাই রাগ করে ৬ বিঘায় আখের চারা নষ্ট করে ধান রোপণ করেছি।’
একই এলাকার মোশারফ হোসেনও তার দেড় বিঘা জমিতে রোপণ করা আখের চারা নষ্ট করে ধান রোপণ করেছেন। জিতারপুর গ্রামের কৃষক বেলাল হোসেন বলেন, ‘আখ বিক্রির ৭৭ হাজার টাকা তিনি এখনও পাননি। অথচ এই টাকা না পাওয়ায় ধারদেনা করে সংসার চালাতে হচ্ছে।’
চিনিকলের আওতাভুক্ত নওগাঁর চকজামাল গ্রামের কৃষক মাসুদ আলী বলেন, ‘জয়পুরহাট চিনিকলের কাছে তার আখ বিক্রির সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। তিন মাস ধরনা দিয়ে সেই টাকা তিনি তুলতে পারেননি। এজন্য তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আর আখ চাষ করবেন না। এরইমধ্যে ১৭ বিঘায় ফলানো আখের চারা তিনি নষ্ট করে অন্য ফসল ফলিয়েছেন। শুধু মাসুদ নয়, একই এলাকার ছায়ের আলীর ৭ বিঘা, শহিদের ৩ বিঘা ও কায়েমের ১০ বিঘাসহ এলাকায় অন্তত ৬০ বিঘা জমির আখের চারা নষ্ট করে ধান ও অন্য ফসল ফলানো হয়েছে।
চিনিকলের কৃষি ব্যবস্থাপক আব্দুল বারী বলেন, ‘গত মৌসুমে ছয় হাজার একর জমিতে আখ চাষ হলেও কৃষকরা সময়মতো আখের মূল্য না পাওয়ায় এবার সাড়ে চার হাজার একর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। অনেক কৃষক ক্ষুব্ধ হয়ে প্রায় সাড়ে তিনশ’ একর আখের চারা নষ্ট করে অন্য ফসল চাষ করছেন।’
চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল ফারুক বলেন, ‘জয়পুরহাট চিনিকলে ১৯ কোটি টাকার চিনি এবং ৪ কোটি টাকার চিটাগুড় মজুত আছে, যা বিক্রির প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে কৃষকদের সমস্যার সমাধান হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আখের বর্তমান মূল্যে কৃষকরা লাভবান হলেও টাকা পরিশোধে গড়িমসি করার কারণে আখ চাষে তারা উৎসাহ হারাচ্ছেন।’