X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক কছির উদ্দিন আকন্দ

‘বেঁচে থাকতেই স্বীকৃতি চাই’

আব্দুর রউফ পাভেল, নওগাঁ
২১ জুলাই ২০২২, ০৮:০০আপডেট : ২১ জুলাই ২০২২, ০৮:০০

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তৎকালীন ব্রিটিশ-ভারতীয় পূর্ববাংলার অনেক সৈনিক রেখেছিলেন বীরত্বপূর্ণ অবদান। তাদের কয়েকজন স্মৃতির ঝাঁপি মেলে ধরেছেন বাংলা ট্রিবিউন-এর কাছে। ধারাবাহিক আয়োজনের তৃতীয় পর্বে আজ রইলো নওগাঁর কছির উদ্দিন আকন্দের গল্প।

 

ব্রিটিশ বাহিনীর হয়ে বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়া নওগাঁ সদর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নের নগর কুসুম্বি গ্রামের কছির উদ্দিন আকন্দের বয়স একশ ছুঁই ছুঁই। ১৯২৫ সালে জন্ম নেওয়া এ সৈনিক এখন কালের সাক্ষী। ইতিহাসের ভয়াবহতম এক যুদ্ধের বীর সৈনিক তিনি। বীরত্বের জন্য পেয়েছেন পদকও।

কছির উদ্দিন আকন্দ এখনও কারও সহায়তা ছাড়াই চলাফেরা করেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন মসজিদে গিয়েই। চশমা ছাড়াই পড়েন পবিত্র কোরান ও পত্রিকা। স্মরণশক্তিও আছে আগের মতো।

১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মির হয়ে লড়াইকারী পূর্ববাংলার যুদ্ধফেরত ৯ বাংলাদেশি সৈনিকের মধ্যে তিনিও একজন। বিশ্বযুদ্ধে অবদান ও ব্রিটিশ সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক সদস্য হিসেবে এখনও ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে পাচ্ছেন ভাতা। কছির উদ্দিন আকন্দ ছিলেন বাহিনীর পিএনআর (পাইওনিয়ার কোর)।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে আকন্দ জানান, ১৯৪৪ সালের ৫ মার্চ সৈনিক হিসেবে নিয়োগ পান। কলকাতায় এক মাসের ট্রেনিংয়ের পর ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মির পাইওনিয়ার পদে যুক্ত হন। তখনকার বোম্বেতে (বর্তমান মুম্বাই) জাপানি বিমান হামলার পর বেশ কিছুদিন শহরটির পুনর্নিমাণ কাজে অংশ নেন।

এরপর পুনেতে সম্মুখসমরের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাকে পাঠানো হয় বার্মায় (মিয়ানমার)। সেখানকার সুবিশাল ঘন অরণ্যে হিংস্র জীবজন্তুর মধ্যেই কষ্টকর দিন কেটেছে আকন্দ ও তার সহযোদ্ধাদের। ভাষাগত কারণে কারও সঙ্গে কথা চালানোও ছিল কঠিন কাজ। কারণ, সেখানে ১১টি দেশের সৈনিকদের দিয়ে তাদের ইউনিটটি গড়ে তোলা হয়েছিল। প্রায় একবছর জঙ্গলে থেকে যুদ্ধ করার পর জাপানিদের দমন করেন তারা।

পরে একমাসের ছুটি নিয়ে নওগাঁয় নিজের বাড়িতে চলে আসেন আকন্দ। ছুটি কাটানোর পর তিনি যোগ দেন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে। এরপর আবারও ডাক পড়ে বার্মায়। সেখানে গিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা পুনর্গঠনে যুক্ত হন তিনি।

কছির উদ্দিন বলেন, ‘যুদ্ধে অংশগ্রহণের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৩৯-৪৫ স্টার, বার্মা স্টার মেডেল, ওয়ার মেডেল ১৯৩৯-৪৫ পেয়েছি। ১৯৪৮ সালের ১৭ আগস্ট সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসর নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি। এখন তিন মাস পরপর সশস্ত্রবাহিনী রাজশাহী ডিএএসবি অফিস থেকে ১৬ হাজার টাকা ভাতা পাই। সেটা দিয়েই কোনোভাবে খাবার ও ওষুধ কিনি। বয়স হয়েছে ৯৭ বছর। বার্ধক্যজনিত রোগব্যাধিও দানা বাঁধছে শরীরে।’

তিনি আরও বলেন, যুদ্ধ শেষে তাকে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার। তবে দেশের টানে আর বিদেশে যাননি। আক্ষেপ নিয়ে বললেন, ‘আমাকে কেউ মূল্যায়ন করছে না। কেউ আমার খোঁজও নেয় না। মৃত্যুর পরে নয়। বেঁচে থাকতেই স্বীকৃতি চাই।’

নওগাঁ জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান পিএএ বলেন, ‘দেশের প্রতিটি বয়স্ক নাগরিকের জন্য আমাদের সহানুভূতি ও সহযোগিতার ব্যবস্থা সবসময় থাকে। ব্রিটিশ বাহিনীর হয়ে বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়া কছির উদ্দিন আকন্দের অবদানকে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। তবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমরা যেসব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকি তা মূলত একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। অন্য কোনও যুদ্ধের জন্য নয়। কছির উদ্দিন ব্রিটিশ সরকারের পাঠানো এবং বাংলাদেশ সরকারের সশস্ত্রবাহিনী সম্মানি ভাতা পাচ্ছেন। এটাও বড় স্বীকৃতি। তারপরও জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে  যা করা সম্ভব সবটুকু করার চেষ্টা করবো।’

 

আরও পড়ুন

‘ব্রিটিশ রানি আমার চিঠির উত্তর দিলেন’

ফল-পাতা খেয়ে লড়াই করেছেন দিনের পর দিন

/এফএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
কোরিওগ্রাফার ইভানের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ২৩ মে
কোরিওগ্রাফার ইভানের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ২৩ মে
শহর থেকে গ্রামে ফেরা মানুষের সংখ্যা দুই বছরে দ্বিগুণ
শহর থেকে গ্রামে ফেরা মানুষের সংখ্যা দুই বছরে দ্বিগুণ
টানা দ্বিতীয় জয়ের খোঁজে সন্ধ্যায় মাঠে নামছে বাংলাদেশ
টানা দ্বিতীয় জয়ের খোঁজে সন্ধ্যায় মাঠে নামছে বাংলাদেশ
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি