X
বুধবার, ০১ মে ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীর ২৮ জায়গায় এডিস মশার লার্ভা, প্রতিরোধে নেই কার্যকর ব্যবস্থা

দুলাল আবদুল্লাহ, রাজশাহী
১৯ জুলাই ২০২৩, ০৮:০১আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২৩, ০৮:০১

সবুজ ও পরিচ্ছন্ন নগরীখ্যাত রাজশাহীতে বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। প্রতিদিন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। ইতোমধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এরই মধ্যে নগরীর পাঁচ ওয়ার্ডের ৭৫টি স্থানের লার্ভা সংগ্রহ করে ২৮টিতে মিলেছে এডিস মশার লার্ভা। তবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা ও উদ্যোগ না থাকায় ঝুঁকি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন নগরীর বাসিন্দারা।

নগরবাসী বলছেন, আষাঢ়ের বৃষ্টির পরপরই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকে। পরিত্যক্ত জায়গায় জমে থাকা পানিতে মশার উপদ্রব বেড়েছে। কিন্তু সেই পরিত্যক্ত জায়গায় পানি জমতে না দেওয়া কিংবা মশার প্রজনন ক্ষেত্র যেন তৈরি না হয়; সেদিকে লক্ষ্য রাখছে না সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা।

নগরীর কয়েকটি স্থাপনা ঘুরে দেখা গেছে, ব্যক্তিগত স্থাপনার চেয়ে সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থাপনা এবং পরিত্যক্ত জায়গা মশা প্রজননের ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও আশপাশের কয়েকটি ভবন। যেখানে মশার প্রজনন ক্ষেত্র আছে।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্থানীয় প্রশাসন

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের কিটতত্ত্ব বিভাগের জরিপের তথ্য অনুযায়ী, নগরীর ৩৮ শতাংশ পানিতে এডিস মশার লার্ভা পেয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে ক্ষতিকর এডিস মশা আছে ১৩ শতাংশ। ব্রুটো ইনডেক্স (এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক) রয়েছে ৪৬ শতাংশের ওপরে। এডিস মশার লার্ভা অনুসন্ধানে নগরীর ১৫টি এলাকার ৭৫টি বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে ২৮টিতেই এডিসের লার্ভা মিলেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের একটি দল সাত দিন ধরে এ নমুনা সংগ্রহ করে। পরে পরীক্ষায় লার্ভা পাওয়া যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ব্রুটো ইনডেক্সের পরিমাণ ২০ শতাংশের বেশি হলে সে অঞ্চলকে ডেঙ্গু ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়। আর রাজশাহী নগরীতে ব্রুটো ইনডেক্সের পরিমাণ ৪৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। সে হিসেবে ‘অধিকতর ঝুঁকির’ মধ্যে রয়েছে এই নগরী।

সোমবার রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের ভেতরে ঝোপঝাড় পরিষ্কারের কাজ চলছে। কিন্তু জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে মশা প্রজনন করছে। হাসপাতালের জরুরি ও বহির্বিভাগের বেশ কিছু জায়গায় এমন চিত্র দেখা গেছে। বিশেষ করে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের সামনে জমে থাকা ময়লা এবং শ্যাওলাযুক্ত পানিতে মশার বিচরণ দেখা গেছে। ওয়ার্ডের সামনে ডেঙ্গুর প্রজনন ক্ষেত্রকে ‘বাতির নিচে অন্ধকার’ বলছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও তাদের স্বজনরা।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা ও উদ্যোগ না থাকায় ঝুঁকি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন নগরীর বাসিন্দারা

ডেঙ্গু আক্রান্ত স্বজনকে দেখে হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বের হচ্ছিলেন নগরীর বাসিন্দা শাইলা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার চাচাতো ভাই ঢাকা থেকে আসার কয়েকদিন পর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। এরপর থেকে হাসপাতালে ভর্তি। এখানকার চিকিৎসা ভালো। কিন্তু বাইরের পরিবেশটা ভালো না। দুঃখজনক হলো ওয়ার্ডের সামনেই ময়লা-শ্যাওলা পানিতে মশা জন্ম নিচ্ছে। এদিকে নজর দেওয়া জরুরি দায়িত্বশীলদের।’

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আট জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩১ জন। এ পর্যন্ত ৯৩ জন ভর্তি হয়েছিলেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬১ জন। মারা গেছেন একজন।

সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, বছরে প্রায় কোটি টাকা শুধু মশা নিধনে ব্যয় করছে সিটি করপোরেশন। যার সুফল পাচ্ছেন নগরবাসী। তবে কিছু ক্ষেত্রে এর ভিন্ন দিক আছে। কিছু এলাকায় মশার উৎপাত বেশি।

সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীলরা বলছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সোমবার থেকে ১৫ দিনের বিশেষ অভিযান শুরু করেছে সিটি করপোরেশন। এই অভিযানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ড্রেন পরিষ্কার, লার্ভিসাইড দিয়ে মশার লার্ভা ধ্বংসসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক হাজার ৩০০ কর্মী এই কাজে নিয়োজিত থাকবেন।

মশার লার্ভা ধ্বংস করা হচ্ছে

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক আছি উল্লেখ করে রাসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. শরীফুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘১৫ দিনের বিশেষ অভিযান শুরু করেছি আমরা। তবে ডেঙ্গু প্রতিরোধ শুধু রাসিকের পক্ষে একা সম্ভব নয়। নগরবাসীকেও এগিয়ে আসতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, জনসচেতনতা এবং মশার বংশবিস্তার রোধের বিকল্প নেই। এসব বিষয়ে কার্যক্রম বাড়ানো হবে।’

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহম্মদ বলেন, ‘রামেক হাসপাতালে মশার প্রজনন ক্ষেত্র থাকার কথা না। আমি নিজে ঘুরে ঘুরে সবকিছু তদারকি করছি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ মেডিসিন দেওয়া হচ্ছে। তারপরও যদি কোথাও থাকে, বিষয়টি দেখবো।’

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাবিবুল আহসান তালুকদার বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে জমানো পানি সংগ্রহ করেছি আমরা। সেখানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগকে চিঠি দিয়েছি। চিঠিতে মানুষকে সচেতনতার জন্য পদক্ষেপ নিতে বলেছি আমরা।’

/এএম/
সম্পর্কিত
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিচিকিৎসকের ওপর হামলা ও রোগীর প্রতি অবহেলা সহ্য করা হবে না
১৬ শ্রমিকের উৎপাদিত স্যালাইন দিয়ে চলছে ৯ জেলার হাসপাতালযাদের স্যালাইনে বাঁচে প্রাণ, তাদের মজুরি বাড়ে না
গরমে বেড়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, রংপুর হাসপাতালে পাঁচ দিনে ২২ জনের মৃত্যু
সর্বশেষ খবর
ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের সভাপতি অনিক, সম্পাদক জাওহার
ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের সভাপতি অনিক, সম্পাদক জাওহার
মুম্বাইকে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলের তিনে লখনউ
মুম্বাইকে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলের তিনে লখনউ
তপ্ত রোদেও থামে না তাদের কাজ
আজ মহান মে দিবসতপ্ত রোদেও থামে না তাদের কাজ
মদ ছেড়ে বললেন, ‘মাইলফলক’
মদ ছেড়ে বললেন, ‘মাইলফলক’
সর্বাধিক পঠিত
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
এক ফ্রেমে এত ‘সুন্দরী’, স্মৃতিকাতর সকলেই!
এক ফ্রেমে এত ‘সুন্দরী’, স্মৃতিকাতর সকলেই!
সাতক্ষীরার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড 
সাতক্ষীরার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড 
আজকের আবহাওয়া: তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস