X
শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫
২৬ বৈশাখ ১৪৩২

সাবেক ইউপি সদস্যের সাজা খাটছেন রিকশাচালক, বের হলেই পাবেন ‘রিকশা-টাকা’

রাজশাহী প্রতিনিধি
২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:৫১আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:৫২

রাজশাহীর আদালতে কারাদণ্ড হয়েছে সেতাউর রহমানের (৩৯) নামের সাবেক এক ইউপি সদস্যের। অথচ সেতাউর সেজে কারাগারে সাজা খাটছেন মিঠুন (৩২) নামের এক মাদকাসক্ত রিকশাচালক! ‘আয়নাবাজি’ সিনেমার মতোই চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একটি রিকশা আর কিছু টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মাদকসেবী মিঠুনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সেতাউর রহমান। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। অথচ সেতাউর তার নিজ এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

এরপর এই মামলার কারাগারে ভাড়া খাটা আসামিকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রাজশাহী মহানগর যুগ্ম দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক বেগম লুনা ফেরদৌস এ নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী নূরে আলম।

তিনি জানান, রাজশাহী মহানগর যুগ্ম দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক কারাগারে থাকা আসামিকে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু কবে হাজির হবে এমন তারিখ জানাতে পারেননি এই আইনজীবী।

সেতাউরের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিশ্বনাথপুর গ্রামে। তিনি কানসাট ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য। শিবগঞ্জে তার বেকারি কারখানা রয়েছে। মিঠুনের বাড়িও বিশ্বনাথপুর গ্রামে। গত আড়াই মাস ধরে তিনি সেতাউরের হয়ে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে সাজা খাটছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর বায়া এলাকার এফএম অটোরাইস অ্যান্ড ফ্লাওয়ার মিলের স্বত্বাধিকারী মো. আজিজ ৭০ লাখ টাকার চেক জালিয়াতির অভিযোগে সেতাউর রহমানের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। গত বছরের ১৮ এপ্রিল রাজশাহীর যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মোছা. রুবিনা পারভীন ওই মামলার রায়ে তাকে এক বছরের কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি তাকে ৭০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

মামলার রায় ঘোষণার সময় আসামি সেতাউর পলাতক ছিলেন। এরপর গত বছরের ২৭ অক্টোবর মিঠুনকে আসামি সেতাউর সাজিয়ে রাজশাহীর আদালতে আত্মসমর্পণ করানো হয়। আদালতকে মিঠুন তার নাম জানান সেতাউর। পরে আদালত তাকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠান।

এদিকে, সেতাউরের বিরুদ্ধে ৭৫ হাজার টাকার চেক জালিয়াতির অভিযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি মামলা করেছিলেন আবদুল মালেক নামের এক ব্যক্তি। আবদুল মালেক নিজেই একজন আইনজীবী। তার মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিনে ছিলেন সেতাউর। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী সেতাউর তাকে টাকা পরিশোধ করেননি। ফলে আবদুল মালেক বিষয়টি চাঁপাইনবাবগঞ্জ যুগ্ম দায়রা জজ আদালত-২-এর নজরে আনেন।

সম্প্রতি তিনি আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন। আদালত তার আবেদন মঞ্জুর করে শিবগঞ্জ থানায় গ্রেফতারি পরোয়ানা পাঠান। পরে আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় আইনজীবী আবদুল মালেক শিবগঞ্জ থানায় যান। তখন পুলিশ তাকে জানায়, মালেকের মামলার আসামি অন্য আরেক মামলায় রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি।

এতে সন্দেহ হয় আইনজীবী মালেকের। তিনি কারাগারে থাকা আসামিকে আদালতে হাজির করার জন্য আবেদন জানান। সে অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) চাঁপাইনবাবগঞ্জের আদালতে আসামি সেতাউর হিসেবে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মিঠুনকে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় আইনজীবী আবদুল মালেক তার নিযুক্ত আইনজীবীকে জানান, এই আসামি সেতাউর নয়, তিনি অন্য কেউ। এ সময় মিঠুনও আদালতে স্বীকার করেন যে তিনি সেতাউর নন। টাকার লোভে তিনি সেতাউর সেজে কারাগারে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেতাউর তাকে শুধু কারাগারের পিসি বইতে ছয় হাজার টাকা দিয়েছেন। আর কোনও টাকা তাকে দেওয়া হয়নি।

আইনজীবী আবদুল মালেক বলেন, ‘আদালত নিশ্চিত হয়েছেন যে অন্য মামলায় সেতাউর সেজে মিঠুন কারাগারে জেল খাটছেন। এ কারণে তাকে আমার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়নি। মিঠুনকে আবার কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি এখনও কারাগারে।’

মিঠুনের স্ত্রী আশা খাতুন জানান, তার স্বামী মাদকাসক্ত। স্ত্রী-সন্তানদের খোঁজ নেন না। তাই তিনি বাবার বাড়িতে থাকেন। তিনি শুনেছিলেন, তার স্বামী কারাগারে আছেন। কিন্তু কোন মামলায় তা জানতেন না। গত বৃহস্পতিবার জেনেছেন, সেতাউর সেজে তিনি কারাগারে। তিনি স্বামীর সঙ্গে দেখা করেছেন। মিঠুন এ সময় তাকে বলেন, কারাগারে থাকলে মাদকাসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে বলে সেতাউর তাকে এখানে পাঠিয়েছে। কিছুদিন পর তাকে বের করা হবে। কারাগারে নিয়মিত টাকা দেওয়া হবে। এরই মধ্যে ছয় হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। কারাগার থেকে বের হলে একটি রিকশা দেওয়ার লোভও তার স্বামীকে দেখান সেতাউর।

সেতাউর রহমানের সঙ্গে মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে দাবি করেন, এটি সেতাউরের নম্বর নয়। তিনি নিজের নাম সবুজ দাবি করেন। নম্বরটি নিশ্চিত হয়েই ফোন করা হয়েছে জানালে কথা বলার জন্য তিনি পাঁচ মিনিট সময় নেন। তিন মিনিট পর তিনি কল ব্যাক করে বলেন, ‘ভাই, আমি এসব কিছুই জানি না। আমার মামলায় কে জেলে গেছে সেটাও আমি বলতে পারবো না। আমার নামে দু-তিনটা মামলা ছিল, শেষ হয়ে গেছে।’

রাজশাহী মহানগর দায়রা ও জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আলী আশরাফ মাসুম বলেন, ‘যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে, তাহলে মিঠুনকেই প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি সেতাউর নন। তা না হলে তার মুক্তি নেই। যদি স্বেচ্ছায় টাকার বিনিময়ে মিঠুন কারাগারে যান তাহলে তিনি নিজেই অপরাধী। যে ব্যক্তি পাঠিয়েছেন তিনিও অপরাধী।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে আইনজীবীর মাধ্যমে মিঠুন সেতাউর সেজে আত্মসমর্পণ করেছিলেন, তার মিঠুনকে চেনার কথা নয়। তারপরও বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আদালতের নজরে এলে আদালত তাকেও কারণ দর্শাতে পারেন। কারণ, এগুলো যেমন অপরাধ তেমনি একজন ব্যক্তির মানবাধিকারেরও লঙ্ঘন।’

/কেএইচটি/
সম্পর্কিত
রিমান্ড শেষে কারাগারে সাবেক এমপি জাফর 
ফরিদপুরে বিস্ফোরক মামলায় আওয়ামী লীগের ৫ নেতাকর্মী গ্রেফতার
পারভেজ হত্যা মামলায় ৩ দিনের রিমান্ডে টিনা
সর্বশেষ খবর
এনসিপির কর্মসূচিতে আসেননি কোনও দলের শীর্ষ নেতা
এনসিপির কর্মসূচিতে আসেননি কোনও দলের শীর্ষ নেতা
গাজায় ত্রাণ বিতরণের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা
গাজায় ত্রাণ বিতরণের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা
আ.লীগের বিচারের আগে কোনও নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না: চরমোনাই পীর
আ.লীগের বিচারের আগে কোনও নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না: চরমোনাই পীর
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে কুড়িগ্রামে বিক্ষোভ
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে কুড়িগ্রামে বিক্ষোভ
সর্বাধিক পঠিত
জার্সি পরেই যমুনার সামনে দায়িত্বে রমনার ডিসি মাসুদ আলম
জার্সি পরেই যমুনার সামনে দায়িত্বে রমনার ডিসি মাসুদ আলম
সাবেক শিবির নেতাদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ
সাবেক শিবির নেতাদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ
তিন শিক্ষক আর পাঁচ শিক্ষার্থী দিয়ে চলছে সরকারি বিদ্যালয়
তিন শিক্ষক আর পাঁচ শিক্ষার্থী দিয়ে চলছে সরকারি বিদ্যালয়
যেভাবে বানাবেন কাঁচা আমের টক-মিষ্টি-ঝাল আমসত্ত্ব 
যেভাবে বানাবেন কাঁচা আমের টক-মিষ্টি-ঝাল আমসত্ত্ব 
রাতভর নাটকীয়তার পর সকালে গ্রেফতার আইভী, দিলেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান
রাতভর নাটকীয়তার পর সকালে গ্রেফতার আইভী, দিলেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান