ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যকে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার সড়াতৈল এলাকায় মা ও দাদির কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে। বুধবার (১৪ মে) রাত সাড়ে ১০টায় নিজ গ্রামের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে রাত ১০টায় ওই গ্রামের জান্নাতুল বাকি কবরস্থান সংলগ্ন হাফিজিয়া মাদ্রাসা মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বুধবার রাত পৌনে ৮টার দিকে ঢাকা থেকে সাম্যের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স তার গ্রামের বাড়ি এসে পৌঁছায়। এ সময় শত শত মানুষ তাকে শেষবারের মতো এক নজর দেখার জন্য ভিড় জমান। আত্মীয়-স্বজনসহ অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। শোকের ছায়া নেমে আসে চারদিকে। রাত ১০টার দিকে সড়াতৈল জান্নাতুল বাকি কবরস্থান ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে সেখানে মা ও দাদির কবরের পাশে দাফন করা হয়।
জানাজা পড়ান সাম্যের মামা মাওলানা জাহিদুল ইসলাম। জানাজায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জুনায়েদ হোসেন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক সেরাজুল ইসলাম সেরাজসহ বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
জানাজার আগে বক্তব্যে ছাত্রদল নেতারা সাম্য হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, সাম্যের এই নিষ্ঠুর হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না। ছাত্রদল এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছে। আমরা মাঠে আছি এবং থাকবো।
পরিবারের পক্ষে সাম্যের চাচা মো. মাহবুব বলেন, আমার ভাতিজাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা চাই সব সত্য দ্রুত প্রকাশ হোক।
সাম্যের বন্ধু এস এম নাহিয়ার ইসলাম বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সাম্য সম্মুখ সারিতে থেকে লড়াই করেছে। নতুন করে স্বাধীন হওয়া এদেশের রাজপথেই তাকে বিদায় নিতে হলো। এটা মেনে নেওয়া যায় না।
সাম্যের বড় ভাই সর্দার আমিনুল ইসলাম বলেন, ঢাকা থেকে তার এতো বন্ধু এসেছে, আমি কল্পনাও করিনি। সবাই ওকে ভালোবাসতো, ওর জন্য দোয়া করবেন।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী বিভাগ) আমিরুল ইসলাম খান বলেন, সাম্য আমাদের গণতন্ত্রের লড়াইয়ের সাহসী সৈনিক ছিল। তার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমরা এ হত্যার বিচার চাই।
বেলকুচি থানার ওসি মো. জাকারিয়া বলেন, সাম্যের মরদেহ রাত পৌনে ৮টার দিকে গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছে। জানাজা শেষে রাত সাড়ে ১০টায় সড়াতৈল জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় ছুরিকাঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার নিহত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায়। এ ঘটনায় শাহরিয়ারের বড় ভাই এস এ এম শরিফুল আলম শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন।
পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত তিন আসামি তামিম, সম্রাট ও পলাশের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। বুধবার সকালে শেরেবাংলা নগর থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।