বগুড়ায় এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ ও ৪/৫টি ককটেল বিস্ফোরণে কমপক্ষে আট জন আহত হয়েছেন। সোমবার (২৩ জুন) সন্ধ্যার পর সদর উপজেলার শাখারিয়া ইউনিয়নের পাঁচবাড়িয়া ও চালিতাবাড়ি গ্রামের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।
একপক্ষে ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি এখলাস হোসেন মন্ডল বাহিনী ও অন্যপক্ষে নির্যাতিত সাধারণ গ্রামবাসী ছিলেন।
আহতদের মধ্যে গুরুতর দুই জনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাতেই সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে এখলাস বাহিনীর তিন সদস্যকে গ্রেফতার এবং কয়েকটি ধারালো অস্ত্র ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে। নির্যাতনের শিকার চালিতাবাড়ি গ্রামের লোকজন বিএনপি নেতা এখলাস ও তার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতারের দাবিতে গত দুই দিন ধরে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও ডিসিকে স্মারকলিপি দেন।
বগুড়া জেলা ওসি ডিবি ইকবাল বাহার এসব তথ্য দেন।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, বগুড়া সদরের শাখারিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি ও পাঁচবাড়িয়া গ্রামের এখলাস হোসেন মন্ডল দলের নাম ভেঙে পাশের চালিতাবাড়ি গ্রামে প্রতিনিয়ত প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, অসহায় মানুষকে হত্যার হুমকি, মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি করছে। আর এতে তাকে সহযোগিতা করছেন, ভাতিজা সন্ত্রাসী সাগর, স্বপন, সোহেল, শিমুল, জয়, জিলহজ ও গালকাটা শিহাব। কিছু দিন পর পর চালিতাবাড়ি গ্রামের মানুষদের প্রকাশ্যে কুপিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। অনেকে অঙ্গ হারিয়েছেন। এখলাস বাহিনীর বিরুদ্ধে থানায় একাধিক অভিযোগ করা হলেও প্রশাসন এ বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে। চালিতাবাড়ি গ্রামবাসীরা এখলাস ও তার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতারের দাবিতে গত রবিবার এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। এতে রাতেই তার বাহিনীর সদস্যরা মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে গ্রামবাসীদের হুমকি দিয়ে আসেন। এর প্রতিবাদে সোমবার দুপুরে শহরের সাতমাথায় মানববন্ধন কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেন।
বগুড়া ডিবি পুলিশ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সোমবার সন্ধ্যার দিকে সদর উপজেলার শাখারিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি পাঁচবাড়িয়া গ্রামের এখলাস গ্রুপের লোকজন ও চালিতাবাড়ি গ্রামের লোকজনের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও মারামারির ঘটনা ঘটে।
এর আগে এখলাস বাহিনী মসজিদের মাইকে সংঘর্ষের ঘোষণা দেন। এখলাস বাহিনী ৪/৫টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। আধা ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে চালিতাবাড়ি গ্রামের কমপক্ষে আট জন আহত হন। তাদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় দুই জনকে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাতেই সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা যৌথ অভিযান চালিয়ে রামদা, চাপাতিসহ বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে। এ সময় হামলায় জড়িত এখলাস পক্ষের মন্ডলধরন গ্রামের রহমান আলী (২৭), কুটুরবাড়ি গ্রামের রোকন মিয়া (২৮) ও একই গ্রামের রকি মিয়াকে (২৭) গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
বগুড়া সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাফতুন আহমেদ খান রুবেল জানান, এখলাস হোসেন মন্ডল শাখারিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি। তার ভাতিজাদের সঙ্গে পাশের চালিতাবাড়ি গ্রামের মানুষের সঙ্গে বিরোধ রয়েছে।
বিএনপি নেতা এখলাস মোবাইল ফোন বন্ধ ও এলাকায় না থাকায় এ হামলার বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।