গত তিনদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও তিস্তা সহ কুড়িগ্রামের সবকটি নদ-নদীর পানি বেড়েছে। এসব নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ধরলা নদীর পানি বেড়ে কুড়িগ্রাম ফেরি ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সদর উপজেলার যাত্রাপুর, পাঁচগাছী ইউনিয়নসহ ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদ তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে এসব এলাকার জমির ফসল।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, জেলার সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। জেলার কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (১২ আগস্ট) সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় ৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ও পাঁচগাছী ইউনিয়ন, উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ, হাতিয়া ইউনিয়নসহ চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোর মানুষ আবারও বন্যার হুমকিতে পড়েছে। রাত-দিন চলমান বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষ কাজে বের হতে পারছেন না। গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে জেলার হাজারো পরিবার।
এদিকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় চরাঞ্চলসহ নদী তীরবর্তী এলাকার কয়েক হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, দু’এক দিনের মধ্যে পানি নেমে না গেলে এসব জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, খামারবাড়ী কুড়িগ্রামের উপ-পরিচালক মো. মকবুল হোসেন জানান, এবার আমন মৌসুমে জেলায় প্রায় ৮২ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন লাগানো হয়েছে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চলের কিছু জমির রোপা আমন পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। তবে দু'এক দিনের মধ্যে পানি নেমে গেলে এসব ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, তার ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলে পানি বেড়ে ঘর-বাড়িতে প্রবেশের উপক্রম দেখা দিয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে যেকোনও মুহূর্তে বন্যা দেখা দিতে পারে।
পাঁচগাছী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলওয়ার হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের কিছু ঘর-বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। পানির নিচে ডুবে আছে অনেক জমির ফসল।
তবে জেলা প্রশাসন বলছে,পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা মোকাবিলার যাবতীয় প্রস্তুতি রয়েছে প্রশাসনের।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইতোমধ্যে ধরলার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী দুই দিনের মধ্যে জেলার সব নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করাসহ জেলার নদী তীরবর্তী এলাকায় বন্যা দেখা দিতে পারে।’
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বলেন, ‘আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। যেকোনও ধরণের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।’
/এফএস/
আরও পড়ুন-
টানা বৃষ্টিতে তিস্তাসহ নীলফামারীর বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত
বন্যায় হাকালুকি হাওরে ৪৮টি বিদ্যালয়ের বেহাল দশা