X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

করতোয়ার পানিবৃদ্ধি, দুর্ভোগে গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দারা

জিল্লুর রহমান পলাশ, গাইবান্ধা
২১ আগস্ট ২০১৭, ২০:০১আপডেট : ২১ আগস্ট ২০১৭, ২০:০১

 

করতোয়ার পানিবৃদ্ধি, দুর্ভোগে গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দারা করতোয়া নদীর পানিবৃদ্ধি এবার বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ পৌর শহরে। বন্যার জলে হাবুডুবু খাচ্ছে পৌরসভার বাসিন্দারা। শুধু পৌরশহর নয়, পানিতে প্লাবিত হয়েছে এ উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম। ডুবে গেছে গোবিন্দগঞ্জ-ঘোড়াঘাট আঞ্চলিক মহাসড়ক। ফলে এ সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। ইটপাথরের দালান কোঠার ভেতরে পানি ঢুকে পড়ায় দুর্ভোগের শেষ নেই তাদের। এদিকে ব্রক্ষপুত্র, তিস্তা ও ঘাঘটের পানি কমায় অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে গাইবান্ধা জেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের পানিবন্দি লাখো মানুষ।

উজানের ঢলে মরা করতোয়া নদী যেন ফুঁসে উঠেছে। পৌর এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়ার দুই কূলে উপচে পানি ঢুকে পড়ায় তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, বাড়িঘরসহ অলিগলি। বাদ পড়েনি ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালতও। এছাড়া গোবিন্দগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চত্বরেও এখন হাঁটু পানি। এতে করে রোগী ও চিকিৎসকরা পড়েছেন সীমাহীন দুর্ভোগে।

গত ১০ দিনে পানির প্রবল চাপে ইতোমধ্যে কাটাখালির হাওয়াখানা, রঘুনাথপুরসহ বেশ কয়েক জায়গার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। মূলত বাঁধ ভাঙার কারণে পৌর শহরসহ প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। অন্যদিকে এখনও মারত্মক ঝুঁকির মুখে রয়েছে করতোয়া ও বাঙালি নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বেশ কিছু জায়গা।

গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দা জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন ফকু বলেন, ‘এর আগে ১৯৮৮ ও ২০০৫ সালে বন্যায় এতো পানি দেখতে হয়েছিল। তারপর থেকে আর কখনও এমন পানি দেখেনি পৌরবাসী। পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় পৌরবাসীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এখানকার মানুষের ঘরে ঘরে খাবার থাকলেও রান্না করতে পারছেন না তারা। পানির কারণে হাটাচলার কোনও উপায় নেই।’

পৌর শহরের ৪নং ওয়ার্ডের পানিবন্দি আনোয়ার মিয়া, রহিম উদ্দিন ও মনোয়ারা বেগম জানান, পৌরসভার প্রতিটি বাসাবাড়ি, টিউবয়েল, টয়লেটসহ অলিগলি পানির নিচে তলিয়ে আছে। গত ৬ দিন এ পানিবন্দি থাকায় অনেকে ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। করতোয়ার পানিবৃদ্ধি, দুর্ভোগে গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দারা

এদিকে পানিবন্দি কেউ কেউ সহায়-সম্বল রেখে বাড়িঘর ছাড়তে না পারলেও অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু জায়গায়। এরমধ্যে পৌরসভার সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস চত্বরসহ বেশ কিছু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন শত শত মানুষ। তবে তাদের অভিযোগ, বানের জলে ভেসে বেড়ানো মানুষগুলোর পাশে আঁকড়ে ধরার মতো খড়কুটো হয়েও দাঁড়ায়নি কেউ।

সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস চত্বরে আশ্রয় নেওয়া রহিমা বেগম বলেন, ‘তিনদিন ধরে খেয়ে না খেয়ে এখানে পড়ে আছি। কিন্তু এখনও কেউ আমাদের খোঁজখবর নিতে আসেনি। এমনকি সোমবার দুপুর পর্যন্ত কোনও ত্রাণ সহায়তাও পাইনি।’

পানিবন্দি আনোয়ার মিয়া বলেন, ‘ঘর, ঘরের উঠান, রান্নাঘর সব পানির নিচে। এভাবে পানিতে হাটাচলা করায় স্ত্রী ও ছেলের হাত পায়ে ঘাঁ দেখা দিয়েছে। দুই-একদিনের মধ্যে পানি না নামলে দুর্ভোগ আরও বাড়বে।’

পৌর মেয়র আতাউর রহমান বলেন, ‘উজানের ঢল ও বাঁধ ভাঙার কারণে পৌর শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। পানিতে পৌরসভার ৫টি ওয়ার্ডের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিবন্দি এসব মানুষের সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবরসহ তাদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ অব্যহত রয়েছে।’

এ বিষয়ে গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বন্যায় প্লাবিত পৌরশহরসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এরমধ্যে পৌরসভায় পানিবন্দিদের জন্য ইতোমধ্যে মেয়রের কাছে ১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাঁধ না ভাঙলে পৌরশহরসহ এ উপজেলার অনেক ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হতো না। এর আগেও বাঁধ মেরামত করা হয়েছিল, কিন্তু স্থায়ী না হওয়ায় এবার বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে শহরসহ গ্রামে। শুষ্ক মৌসুমে বাঁধগুলো স্থায়ীভাবে মেরামতের জন্য বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হবে।’

এদিকে নদ-নদীর পানি কমা অব্যাহত থাকায় জেলার সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা উপজেলার ১৬৫টি চর ও দ্বিপচরসহ নিম্নাঞ্চল থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বাড়িঘর থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় অনেকে বাড়ি ফিরছেন। তবে আশ্রয়কেন্দ্র, উঁচু জায়গাসহ জেলার বানভাসি প্রায় ৪ লাখ মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। বানভাসিদের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এছাড়া ১৩ দিন ধরে পানিবন্দি মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।

তবে জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল বলেন, ‘বানভাসিদের মধ্যে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকবে। এছাড়া বানভাসি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া পানিবাহিত রোগ মোকাবিলায় মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। তবে প্রয়োজনে আরও মেডিক্যাল টিম বাড়ানো হবে।’

/এআর/

/এআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মেরিনার ইয়াংসে নতুন গভর্নিং বডি
মেরিনার ইয়াংসে নতুন গভর্নিং বডি
বানিয়ে ফেলুন ৪ স্বাদের লাচ্ছি
বানিয়ে ফেলুন ৪ স্বাদের লাচ্ছি
১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পেলো স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড-চ্যানেল আই কৃষি পুরস্কার
১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পেলো স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড-চ্যানেল আই কৃষি পুরস্কার
ফালুর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন
ফালুর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ