X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জীবন যুদ্ধ জয়ের পথটা সহজ ছিল না মোকসেদার

জাকির মোস্তাফিজ মিলু, ঠাকুরগাঁও
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:৫৩আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৪:০৫

নিজের বাড়িতে কাজ করছেন মোকসেদা (বাম দিক দিয়ে প্রথম) সেরা নারী উদ্যোক্তা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার কিংবা শ্রেষ্ঠ তৃণমূল নারী উদ্যোক্তার পুরস্কার প্রাপ্তিই ঠাকুরগাঁওয়ের মোকসেদা বেগমের জীবনে গল্প নয়। এই পুরস্কার পাওয়া এবং সমাজের নিজের স্থান করে নিতে তাকে অনেক চড়াই-উৎরাই পার হতে হয়েছে। পাড়ি দিতে হয়েছে বন্ধুর পথ। দীর্ঘদিনের চেষ্টার পর মোকসেদা আজ প্রতিষ্ঠিত। নিজের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেছেন। এছাড়া ২০০ নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করেছেন তিনি।

মোকসেদার এই অবস্থানে আসার গল্পটা খুব একটা সহজ নয়। কিশোরী বয়সে এক দিন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে এসে বিয়ের খবর পান। কোনও কিছু বলার সুযোগও পাননি। তার আগেই বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। বিয়ের ১০ বছরের মাথায় স্বামী মারা যান। এরপর শ্বশুর বাড়িতে ঠাঁয় হয়নি। আত্মসম্মানের কথা ভেবে বাবার বাড়িতেও যাননি। এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে অথৈই সমুদ্রে পড়েন তিনি। এরই মধ্যে স্থানীয় একটি এনজিওতে ছোট্ট কাজ জোটে তার। এতে সংসার চলছিল না। একসময় পরিকল্পনা করেন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। যেই ভাবনা সেই কাজ। সেজন্য পুঁজি ও কারিগরি শিক্ষা দুটোই প্রয়োজন। যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে ছয় মাসের সেলাই প্রশিক্ষণ নেন এবং ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন। এরপর তারই এলাকার ১০ জন অসহায় নারীকে সংগঠিত করে ২০০০ সালে শুরু করেন ‘অনন্যা শিল্প’ নামে একটি সেলাই কারখানা। নকশী কাঁথা,বালিশের কুশন,নারীদের ব্যাগ,চাদর, টুপি,মোবাইল ব্যাগ ইত্যাদি পণ্য তৈরি করছে মোকসেদা।

তিনি বলেন,  ‘আমার জীবনের গল্পটা মোটেই সহজ ছিল না।  নারী হিসেবে ব্যবসা করার বিষয়টি সমাজ খুব সহজভাবে মেনে নেয় না। তাও আবার গ্রামের মতো জায়গায়। পরিবার থেকেও সে সময় কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। স্বামী মারা যাওয়ার সময় তেমন কোনও সম্পদ রেখে যাননি। তবে যুব উন্নয়ন ও বিসিক অনেকটাই সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।’

নিজের বাড়িতে কাজ করছেন মোকসেদা (বাম দিক দিয়ে প্রথম)

ঢাকার বিভিন্ন হস্ত শিল্প মেলার জন্য পণ্য বানানোর মধ্যে দিয়ে কাজ শুরু করেন মোকসেদা। বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন,  ‘বর্তমান আমার এ প্রকল্পে কাজ করছে ২০০ নারী। এখন মেলার পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন শোরুমে পাইকার হিসেবে পণ্য সরবরাহ করি। এছাড়া বিজিবি বা সেনাবাহিনীর বিভিন্ন দোকানেও আমার পণ্য যায়। পাশাপাশি ঠাকুরগাঁও শহরে একটি শোরুম দিয়েছি। অনন্যা হস্তশিল্পের পণ্যের এখন চাহিদা অনেক বেশি। কারণ আমি নিজেই তাঁতির কাছে কাপড় বানিয়ে তার ওপর নকশা করি। যার কারণে আমার বানানো পণ্য কোথাও পাওয়া যায় না। তবে এ ব্যবসাকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে।’

বাংলাদেশের প্রান্তিক নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পেছনে সব চেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা অর্থ ও দিক নির্দেশনার অভাব বলে মনে করেন মোকসেদা। তিনি জানান, আসলে ব্যবসায় নামতে হলে কোন মাধ্যম থেকে পুঁজি ব্যবস্থা করা যাবে,সেটাই জানেন না অনেক নারী। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঋণ নিলে টানতে হয় চড়া সুদ।

তিনি বলেন, শুধু অর্থের জোগান হলেই হবে না। পণ্যের সঠিক বাজারজাতের পদ্ধতিও জানতে হবে। মোকসেদা তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন বেশ কিছু পুরস্কার। এর মধ্যে ২০১১ সালে হস্তশিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জাতীয় পুরস্কার নিয়েছে। ২০১৩ সলে নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রাস রুট উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউরস বাংলাদেশ’ তাকে দেয় শ্রেষ্ঠ তৃণমূল নারী উদ্যোক্তা পুরস্কার। এছাড়া ঠাকুরগাঁও জেলা জয়িতা পুরস্কারও পেয়েছেন।

মোকসেদা বলেন, সংগ্রাম করে এ পর্যন্ত এসেছি, বাকি জীবনটাও সংগ্রাম করে কেটে দেবো অসহায়দের পাশে থেকে। তার একমাত্র ছেলে মোকসেদুল ইসলাম ঠাকুরগাঁওয়ে তার পোশাক বিক্রয় কেন্দ্রেরে দেখাশোনা করে।

মোকসেদার ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য সেলিনা জাহান লিটা বলেন, ‘মোকসেদা নারী সংগ্রাম জয়ের প্রতীকে পরিণত হয়েছেন।’

 

 

/এসটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে: রাষ্ট্রপতি
কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে: রাষ্ট্রপতি
দিনাজপুরে একসঙ্গে ২০ হাজার কণ্ঠে গীতা পাঠ
দিনাজপুরে একসঙ্গে ২০ হাজার কণ্ঠে গীতা পাঠ
উপজেলা নির্বাচন আগের যে কোনও নির্বাচনের চেয়ে ভালো হবে: ইসি হাবিব
উপজেলা নির্বাচন আগের যে কোনও নির্বাচনের চেয়ে ভালো হবে: ইসি হাবিব
জেসি অনভিজ্ঞ বলেই আপত্তি ছিল মোহামেডান-প্রাইম ব্যাংকের
জেসি অনভিজ্ঞ বলেই আপত্তি ছিল মোহামেডান-প্রাইম ব্যাংকের
সর্বাধিক পঠিত
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই