X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরাঞ্চলে চায়ের মৌসুম শুরু, এবার পঞ্চগড়ে অকশন চান বাগান মালিকরা

সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, পঞ্চগড় 
০১ মার্চ ২০২১, ২০:০৮আপডেট : ০১ মার্চ ২০২১, ২০:০৮

পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায়  আজ আবার শুরু হলো চায়ের মৌসুম। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর মৌসুমের শেষদিনে  চা কারখানাগুলোতে  চা উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে চা পাতা উত্তোলন বন্ধ ছিল। দুই মাস বিরতির পর আবারও এ বছরের সোমবার (১ মার্চ) থেকে চা উৎপাদন মৌসুম শুরু হয়েছে। শীতের কারণে বর্তমানে বাগানের চা গাছগুলোতে পাতা কম, নতুন কুঁড়ি মাত্র ফুটতে শুরু করেছে। এ কারণে আজ দুয়েকটি চা কারখানা চালু হয়েছে। তবে মধ্য মার্চ থেকে পুরোপুরি সব চা কারখানায় চা উৎপাদন শুরু হবে।

এবছর প্রায় ৬ কোটি কাঁচা চা পাতা থেকে ১ কোটি ২০ লাখ কেজি তৈরি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে চা বোর্ড অফিস জানিয়েছেন। চা চাষের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর মানুষের যেমন একদিকে দারিদ্র বিমোচন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে, তেমনি ব্যাপক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে।

পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ড অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাও, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলায় ১০ হাজার ১৭০ একর জমিতে চা চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি নিবন্ধিত ও ১৭টি অনিবন্ধিত চা বাগান এবং ৭ হাজার ৩শ’ ১০ জন ক্ষুদ্র চা চাষি চা উৎপাদন করছেন। চা উৎপাদন মৌসুমে ৪২টি অকশন হয়ে থাকে।

উত্তরবঙ্গের মঙ্গা পীড়িত পঞ্চগড় এলাকার মানুষ চা বাগানে কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে

পঞ্চগড়ে উৎপাদিত চায়ের নিলাম বা অকশন চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গলে হয়ে থাকে। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৩৯ থেকে ৪০টি অকশন সম্পন্ন হয়েছে।

গত চা উৎপাদন মৌসুমে পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় ৮ হাজার ৬শ’৮০ একর জমিতে চা চাষ করা হয়েছিল। ৫ কোটি ১২ লাখ কাঁচা চা পাতা উৎপাদন হয়েছে। পঞ্চগড়ের কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট, মৈত্রী টি কারখানা, নর্থবেঙ্গল সেন্ট্রাল চা কারখানা, করতোয়া চা কারখানা, গ্রিন কেয়ার চা কারখানা, তেঁতুলিয়া টি কোম্পানি, বাংলা টি ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি, ইম্পেরিয়াল টি এস্টেট, স্যালিল্যান্ড টি এস্টেট, মরগ্যান টি এস্টেট, সাজেদা রফিক টি এস্টেট, নাহিদ টি এস্টেট, ফাবিহা টি এস্টেট, পপুলার টি এস্টেট, গ্রিণ ফিল্ড টি এস্টেট, এমএমটি এস্টেট, উত্তরা গ্রিন টি এস্টেট, মলি টি এস্টেট ও সবুজ এগ্রো টি এস্টেটসহ ১৮টি চা কারখানায় চা প্রক্রিয়াজাত করে গত বছর ৯৫ লাখ কেজি তৈরি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। করোনা পরিস্থিতিতেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ কোটি ৩ লাখ কেজি তৈরি চা বেশি উৎপাদন হয়েছে এখানে।

পঞ্চগড়ের মৈত্রী টি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মোজাহিদুল হান্নান নিপুন জানান, তাদের চা কারখানা একটি বৃহৎ কারখানা। বিক্রম ইন্ডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এই চা কারখানায় দৈনিক ৮০ হাজার কেজি কাঁচা পাতা প্রয়োজন। এই মুহুর্তে এত পাতা নেই। তাই দুয়েকদিন পরে কারখানা চালু করা হবে। এই কারখানায় সর্বনিম্ন ২০ হাজার কেজি কাঁচা চা পাতা প্রয়োজন হয়।

পঞ্চগড় সদরের করতোয়া চা কারখানার নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম, তেঁতুলিয়ার ইম্পেরিয়াল টি এস্টেটের ম্যানেজার মো. মিজানুর রহমান, পঞ্চগড় সদরের স্যালিল্যান্ড টি এস্টেটের ম্যানেজার মো. আব্দুস সালাম জানান, চা উৎপাদন মৌসুম শুরু হয়েছে। কাঁচা চা পাতার ওপর নির্ভর করে চা কারখানা চালু করা হয়ে থাকে। দুয়েকদিন পর থেকে কাঁচা চা পাতা সংগ্রহ করা হবে। এরপর থেকে কারখানা চালু করা হবে। তবে মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে অধিকাংশ চা কারখানায় চা উৎপাদন শুরু হবে।

তেঁতুলিয়ার গ্রিন কেয়ার চা কারখানার ম্যানেজার মো. মনজুর আলম জানান, কাঁচা চা পাতা মজুতের কাজ শেষ হলে কারখানা চালু হবে। পাতা সংগ্রহ চলছে। আগামীকাল চা কারখানা চালু করার সম্ভাবনা রয়েছে। আমার কারখানায় দৈনিক সর্বনিম্ন ১০ হাজার কেজি থেকে সবোর্চ্চ ৫০ হাজার কেজি কাঁচা চা পাতা প্রয়োজন হয়।

জেমকন গ্রুপের কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেটের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) সৈয়দ শোয়েব আহমেদ জানান, পঞ্চগড়ে অর্গনিক চা চাষ করছেন জেমকন গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট। এই টি এস্টেটটি ২০০৩ সালে স্থাপিত হয়। কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেটে চা আবাদের জন্য প্রায় সাড়ে ৪ হাজার একর জমি রয়েছে। বর্তমানে প্রায় ১৫শ’একর জমিতে অর্গানিক চা চাষ করা হচ্ছে।

তিনি জানান, কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেটের নিজস্ব চা কারখানায় নিজেদের চা বাগানের পাতা দিয়ে অর্গানিক চা তৈরি করা হয়ে থাকে। এখানে বাইরের চা বাগানের পাতা কেনা হয় না। প্রথমে সপ্তাহে একদিন, এরপর সপ্তাহে ৩ দিন এভাবে চা উৎপাদন শুরু হবে।

সৈয়দ শোয়েব আহমেদ আরও জানান, অর্গানিক চায়ের আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে একমাত্র জেমকন গ্রুপের কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট। জেমকন গ্রুপের অর্গানিক চায়ের গ্লোবাল ব্র্যান্ড হচ্ছে ‘টিটুলিয়া’। এই ব্র্যান্ডের অর্গানিক চা ইউরোপ, আমেরিকা ও জাপানে বাজারজাত করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, জেমকন গ্রুপ দেশ, অঞ্চল ও প্রোডাক্ট এই ৩টি বিষয়কে ব্র্যান্ডিং করছে। আন্তর্জাতিক অর্গানিক টি গার্ডেন সার্টিফিকেটসহ ৬টি আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেট রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের।

তবে চায়ের চাষ বেড়ে গেলেও উত্তরবঙ্গে এখনও চায়ের নিলাম বাজার গড়ে ওঠেনি। তাই দেশের তৃতীয় চা চাষ এলাকা হিসেবে পঞ্চগড়ে চায়ের নিলাম বাজার স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন চা চাষি ও চা কারখানা মালিকরা। এখানে নিলাম বাজার করা হলে চায়ের প্রকৃত বাজার পেতে চা চাষিদের আর কোনও সমস্যায় পড়তে হবে না।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার আলী আহসান প্রধান নাহিদ, জেলার আটোয়ারী উপজেলার সোনাপাতিলা এলাকার ক্ষুদ্র চা চাষি মতিয়ার রহমান, পঞ্চগড় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট, পঞ্চগড় জেলা স্মল টি গার্ডেন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিরুল হক খোকন জানান, পঞ্চগড়ে প্রতিবছর চা চাষ ও চায়ের উৎপাদন বাড়ছে। চায়ের গুণগতমানও বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলের ৫ জেলায় প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতা ১৬ টাকা থেকে ১৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে উৎপাদন খরচের বিবেচনায় চা পাতার মূল্য আরও বাড়ানো প্রয়োজন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে পঞ্চগড়ে চায়ের নিলাম বাজার স্থাপন করা হলে চা চাষিরা উপকৃত হবে।

পঞ্চগড়স্থ বাংলাদেশ চা বোর্ড আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও নর্দান বাংলাদেশ প্রকল্পের পরিচালক ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন জানান, প্রতি বছর পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় চা আবাদি জমির পরিমাণ বাড়ছে। গত বছর ৮ হাজার ৬শ’ ৮০ একর জমিতে চা আবাদ করা হয়েছিল। এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ১৭০ একর জমি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় এবং বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. জহিরুল ইসলামের ব্যবস্থাপনায় ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে পঞ্চগড়সহ উঞ্চরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় ‘ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুল’ চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে চা আবাদ বিষয়ে চাষিদের মাঠে গিয়ে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে একটি করে এ পর্যন্ত ২৫টি ‘ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুল’ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সম্পন্ন হয়েছে। 

তিনি আরও জানান, সল্পমূল্যে উন্নত জাতের চারা ও আধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহ করে চা চাষ সম্প্রসারণের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এছাড়া চাষিদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান দিতে ইতিমধ্যে ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপস চালু, পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ে পেস্ট ম্যানেজমেন্ট ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। চা চাষিদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান, চাষের নানান রোগবালাই ও পোকা দমনে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে ফিরেছে অস্ট্রেলিয়া
টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে ফিরেছে অস্ট্রেলিয়া
গাজায় ৪০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিলো ইসরায়েল
গাজায় ৪০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিলো ইসরায়েল
সবজির কেজি এখনও ৬০ টাকার বেশি, ২০০ ছাড়িয়েছে ব্রয়লার
সবজির কেজি এখনও ৬০ টাকার বেশি, ২০০ ছাড়িয়েছে ব্রয়লার
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ