X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ময়লার ভাগাড় ও রাস্তায় পড়ে আছে চামড়া

দিনাজপুর প্রতিনিধি
২৩ জুলাই ২০২১, ১৪:২৬আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২১, ১৪:৪৫

সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশিতে চামড়া কেনার কথা বলেছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তবে তারা মুখে বেশি দামে চামড়া কেনার কথা বললেও, এখন উল্টোটা বলছেন সাধারণ জনগণ। এর মধ্যে গরুর চামড়ার মূল্য কিছুটা থাকলেও ছাগলের চামড়া বিক্রির পরিমাণ একেবারেই নেই। তাই এসব চামড়ার স্থান হয়েছে ময়লার ভাগাড় ও রাস্তার ধারে।

বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) দিনাজপুরের সর্ববৃহৎ চামড়ার বাজার রামনগরে দেখা যায়, রাস্তার ধারে ও ময়লার ভাগাড়ে ছাগলের চামড়া পড়ে আছে। এদিকে ব্যবসায়ীদের অভিযোগের তীর ট্যানারি মালিকদের দিকে। এ অবস্থায় বিভাগীয় পর্যায়ে ট্যানারি শিল্প প্রতিষ্ঠা ও তৃণমূল পর্যায়ে চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করার দাবি তাদের।

সরেজমিন দেখা যায়, রামনগর এলাকার চামড়ার বাজারে তিন থেকে চার জন এক জোট হয়ে চামড়া পরিষ্কার করা, লবণ প্রয়োগ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজে ব্যস্ত। কেউ ব্যস্ত গাড়ি থেকে চামড়া খালাসের কাজে। অন্যদিকে রাস্তায় পাশে স্তূপ করে ছাগলের চামড়া ফেলে রাখা হয়েছে। আবার ময়লার মধ্যে পড়ে রয়েছে চামড়া। পচে যাওয়া চামড়াগুলো স্তূপ করে রাখা হয়েছে। পৌরসভার ময়লা পরিবহন কাজে ব্যবহৃত গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেগুলো। এদিকে যারা ছাগলের চামড়া বিক্রি করতে আসছেন, এক ধরনের রসিকতা করেই তাদেরকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

পড়ে থাকা চামড়া পৌরসভার ময়লার গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে

চামড়া বিক্রি করতে আসা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা আগে যেই চামড়া তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতাম, সেগুলো এখন ১০০ থেকে দেড়শ টাকাও বলে না। এখন চামড়া মাটিতে পুঁতে দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই। কিন্তু কী করার, অটোর ভাড়া দিয়ে আসা, তাই যে দাম দেয় তাতেই দিয়ে চলে যাচ্ছি।’

আদনান হোসেন বলেন, ‘আমি ৭ নম্বর উপশহর থেকে এসেছি। যেই হিসাবে চামড়ার দাম আশা করেছিলাম, সেই হিসাবে পেলাম দাম না। আশা করছিলাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হবে। কিন্তু পেলাম ৩০০ টাকা।’

রনি নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি কারও নাম ধরে বলতে চাই না। কালকে (বুধবার) ছাগলের চামড়া কিছু কিনেছে, আজ সকালেও কিনলো। এখন আবার নিচ্ছে না। বড় বড় চামড়াগুলো ছয় ফুটের বেশি, তাও নিচ্ছে না। বড় বড় চামড়া ব্যবসায়ী যারা তাদের এটা সিন্ডিকেট। আমি খাসির চামড়া তিনটা নিয়ে আসছিলাম, একটাও নিলো না, সব ফেলে দিছে। ওরা না নিলে কী করবো, মারামারি তো আর করা যাবে না। গরিবের হক মারে খাচ্ছে।’

গ্রাম থেকে চামড়া সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করতে আসা ফারুক বলেন, ‘আমি চারটা ছাগলের চামড়া নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখানে ছাগলের চামড়া নিতেই চাচ্ছেন না। চামড়া যারা কিনবেন তারাই বলছেন, ফেলে দিয়ে চলে যান। সবটাই লস! অটো করে নিয়ে আসলাম, অটো ভাড়াটাও গেলো। ফেলে দেওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই।’

চামড়া বিক্রি করতে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গ্রাম থেকে চামড়া কিনে এই বাজারে বিক্রি করি। সরকার আমাদের ছোট চামড়ার ব্যবসায়ীদের জন্য কিছুই করে না। বাজারে চামড়ার দাম নেই। সরকার যেন এই বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখে। ট্যানারি শিল্প কী করছে? আমাদের দিকে কারও নজর নেই। জায়গা-জমি বিক্রি করে আজ এই ব্যবসা করছি। দুই বছর থেকে লাভের মুখ ভালো করে দেখতে পাই না। যা প্রণোদনা দিচ্ছে সব পায় ট্যানারি মালিকরা।’

এস কে লেদারের স্বত্বাধিকারী আব্দুল শুকুর বলেন, ‘আমি এখানে সারা বছরই চামড়ার ব্যবসা করি। কাল (বুধবার) থেকে খাসি, গরুর চামড়া কিনছি। লবণজাত করছি এখন। পরিষ্কার করা সময় দুই থেকে আড়াইশ চামড়া ফেলে দিতে হয়েছে। এখন দেখি আল্লাহ কী করেন। কোম্পানি যে কী দামে কিনবে তা তো জানি না। পত্রিকা পড়ে জানতে পারছি, বকরির (ছাগলের) চামড়া ১৫ থেকে ১৬ টাকা ফুট নেবে। সেই আশায় চামড়া কেনা।’

পচে যাওয়া চামড়াগুলো স্তূপ করে রাখা হয়েছে

তিনি আরও বলেন, ‘কোম্পানি আমাদের দর দেয়নি, যে তারা কোন দামে কিনবে। কোম্পানির আশায় কেনা, দেখি কোম্পানি কী করে। তাছাড়া আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখেই। যাদের টাকা বেশি তাদের ব্যবসা আছে। আমাদের মত পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে বসা ব্যবসায়ীদের লোকসান আর লোকসান।’

চামড়া ব্যবসায়ী মালিক গ্রুপের সভাপতি জুলফিকার আলি স্বপন বলেন, ‘আগে চামড়া ব্যবসায়ী কোটিপতি ছিল। এখন রাতে অনেকেই কাঁদে। এবার আমরা খালি হাতে ব্যবসায় নেমেছি। গত বছরের তুলনায় এবছর চামড়ার দাম বেশি। গত বছর যে চামড়া বিক্রি কিনেছি ৪০০ টাকায়, এবার সেটা কিনছি ৬০০ টাকায়। তবে এবার চামড়ার আমদানি কম, অনেকেই কোরবানি দেননি। তাই দাম বেশি থাকলেও বাজারে টাকার লেনদেন গত বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশ কম হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যারা তৃণমূল পর্যায়ে চামড়ার ব্যবসায়ী রয়েছি, তাদের জন্য ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা নেই। ব্যাংক ঋণ রয়েছে বড় বড় ব্যবসায়ীদের জন্য। আমরা সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে ফুট প্রতি এক-দুই টাকা বেশি দামে কিনছি। তবে আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, সরকার আমাদের কথা অর্থাৎ তৃণমূল পর্যায়ে যেন ব্যবসায়ীদের দিকে একটু নজর দেয়। আর চাই বিভাগীয় পর্যায়ে ট্যানারি শিল্প। তবেই আমরা প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকবো এবং চামড়া শিল্পকে ধরে রাখতে পারবো।’

/এসএইচ/
সম্পর্কিত
যাত্রী কল্যাণ সমিতিঈদুল আজহায় ২৭৭ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২৯৯, আহত ৫৪৪
পোস্তায় চামড়া বেশি এলেও মেলেনি সরকার নির্ধারিত দাম
রাজধানীর ফাঁকা রাস্তায় যাত্রীদের স্বস্তি
সর্বশেষ খবর
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা