X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডির ১৫ বছর: বাস্তবায়ন হয়নি ৬ দফা চুক্তি

বিপুল সরকার সানি, দিনাজপুর
২৬ আগস্ট ২০২১, ১০:৩৫আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২১, ১০:৩৫

আজ ২৬ আগস্ট। ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডির ১৫তম বার্ষিকী। ২০০৬ সালের এই দিনে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি প্রকল্প বাতিল, জাতীয় সম্পদ রক্ষা এবং বিদেশি কোম্পানি এশিয়া এনার্জিকে ফুলবাড়ী থেকে প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয়রা। বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর পুলিশ ও বিডিআর গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিন জন, আহত হন দুই শতাধিক মানুষ। ঘটনার ১৫ বছর হয়ে গেলেও এখনও বাস্তবায়ন হয়নি ফুলবাড়ীবাসীর সঙ্গে হওয়া ছয় দফা চুক্তি। 
 
স্থানীয়রা জানান, ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট সকাল থেকেই ফুলবাড়ীর ঢাকা মোড়ে ফুলবাড়ী, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ ও পার্বতীপুর উপজেলার হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হতে থাকেন। দুপুর ২টার দিকে তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ও ফুলবাড়ী রক্ষা কমিটির নেতৃত্বে বিশাল প্রতিবাদ মিছিল নিমতলা মোড়ের দিকে এগুতে থাকে। এসময় পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের বাধা পেয়ে বিশাল মিছিলটি বেড়িকেড ভেঙে সামনে এগুবার চেষ্টা করে। এসময় আন্দোলনকারীদের ওপর টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। 

গুলিতে প্রাণ হারান আল আমিন, সালেকীন ও তরিকুল। আহত হন দুই শতাধিক আন্দোলনকারী জনতা। আহতদের মধ্যে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। এরপর ফুলবাড়ীবাসী ধর্মঘটের মাধ্যমে এলাকায় অচলাবস্থার সৃষ্টি করেন। বাধ্য হয়ে তৎকালীন সরকার ফুলবাড়ীবাসীর সঙ্গে এশিয়া এনার্জিকে দেশ থেকে বহিষ্কার, দেশের কোথাও উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা যাবে না, গুলি চালানো আইনশঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ ছয় দফা চুক্তি করে। পরে স্থানীয়রা আন্দোলন থেকে সরে আসে। 

কিন্তু ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এই চুক্তি এখনও পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। বরং এখনও ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি হওয়ার পায়তারা চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

সেদিনে গুলিতে পঙ্গু হয়ে যাওয়া বাবলু রায় বলেন, যখন আমরা ব্রিজ পার হচ্ছিলাম তখন পুলিশ বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে যেতে চাইলে আমাদের পিছন দিক থেকে গুলি করা হয়। এরপর আমি আর কিছু বলতে পারি না। সেদিনের আন্দোলনে আমি পঙ্গু হয়ে গেছি। তবে এজন্য আক্ষেপ নেই, আক্ষেপ যে এখনও ছয় দফা চুক্তির বাস্তবায়ন হয়নি।

আন্দোলনকারীদের ওপর টিয়ারশেল ও গুলি চালানো হয় আন্দোলনে নিহত আমিনের মা রেহেনা খাতুন অভিযোগ করেন, আমার ছেলের মৃত্যুর পর একবারও আমাদের কেউ খোঁজ নেয়নি। বুকের রক্ত দিলো আমার ছেলে (সন্তান)। 

আন্দোলনে নিহত আমিনের বাবা আব্দুল হামিদ বলেন, কয়লা খনির আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে আমার ছেলে মারা যায়। পরে আমরা দিনাজপুর মেডিক্যাল থেকে তার মরদেহ নিয়ে আসি। আমরা এর বিচার চেয়েছিলাম, কিন্তু বিচার হয়নি। বিচার করেনি সরকার। আমরা জানতে চাই, কেন মেরে ফেলা হলো আমার ছেলেকে।

আন্দোলনে নিহত সালেকিনের মা বলেন, খুব কষ্ট করে আমার সংসার চলছে। যদি আমার ছেলেটি বেঁচে থাকতো তাহলে হয়তো কাজ করে সংসার চালাতো।

আন্দোলনে নিহত তরিকুলের বাবা মোখলেসার রহমান বলেন, আমি কোনও মামলা করিনি। আমি সরকারের নিকট আবেদন দিয়েছিলাম, আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যার ঘটনার বিচার যেন করা হয়। এই আবেদনের কোনও উত্তর আমি পাইনি, কোনও বিচার আমি পাইনি।

আন্দোলনের নেতা বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু বলেন, ২০০৬ সালে এশিয়া এনার্জি কৃষি এলাকায়, বসতভিটা, মসজিদ-মন্দির ধ্বংস করে কয়লা উত্তোলনের পায়তারা করলে গণঅভ্যুত্থান হয়। ওই সময়ে ছয় দফা চুক্তি করা হলেও এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। কিছু কিছু দাবি হয়তো বাস্তবায়িত হয়েছে। এখনও এশিয়া এনর্জি তাদের অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ফুলবাড়ী কোল প্রজেক্ট নামে লন্ডনে তারা শেয়ার মার্কেটে ব্যবসা করছে, আন্দোলনকারী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করছে। তাদের অফিস এখনও চালু রয়েছে, এবং নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, ৬ দফা চুক্তির অন্যতম ছিল কৃষি জমি ধ্বংস করে কোথাও উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি হবে না। ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি হলে অন্তত ৬৬৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা পানিশূন্য হবে। ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং চুক্তির শর্ত অনুযায়ী এশিয়া এনার্জিকে দেশ থেকে প্রত্যাহার করা হোক এই দাবি করছি।

প্রতিবছর তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি আজকের দিনটিকে ‘জাতীয় সম্পদ রক্ষা দিবস’ ও ফুলবাড়ীবাসী ‘ফুলবাড়ী শোক দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। দিনটি উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নেতৃবৃন্দ এসে অংশ নেন। তবে এবারে করোনার কারণে তাদের কর্মসূচি স্বল্প আকারে করা হবে বলে জানা গেছে।

 

/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পরীমণির মাদক মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ পেছালো
পরীমণির মাদক মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ পেছালো
রুমায় জঙ্গলে পড়ে ছিল গুলিবিদ্ধ দুই মরদেহ
রুমায় জঙ্গলে পড়ে ছিল গুলিবিদ্ধ দুই মরদেহ
বনানীতে বাসচাপায় আহত মোটরসাইকেলের চালক মারা গেছেন
বনানীতে বাসচাপায় আহত মোটরসাইকেলের চালক মারা গেছেন
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বিএনপির লজ্জা পাওয়া উচিত: কাদের
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বিএনপির লজ্জা পাওয়া উচিত: কাদের
সর্বাধিক পঠিত
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে