X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তিন দিন ধরে পানিবন্দি, পৌঁছায়নি ত্রাণ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
০২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৭:৩৯আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯:৪৪

উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ায় কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাশাপাশি এসব এলাকার বাড়িঘরে পানি ঢোকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বহু পরিবার। তবে ঠিক কত পরিবার পানিবন্দি তা জানাতে পারেনি জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা। পানি বাড়ার সঙ্গে ভাঙন বেড়ে যাওয়ায় বাস্তুহারা হচ্ছে একের পর এক পরিবার।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, বৃহস্পতিবার (০২ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ধরলা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকলেও একই সময়ে বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন ও পানি বাড়ায় সদর উপজেলার ভোগডাঙা, যাত্রাপুর, উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ, সাহেবের আলগা, হাতিয়া এবং চিলমারী উপজেলার চিলমারী, রমনা ও নয়ারহাট ইউনিয়নের এক হাজারেরও বেশি পরিবার চরম ভোগান্তিতে দিনাতিপাত করছেন বলে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। 

স্থানভেদে ৩-৪ দিন ধরে মানুষ পানিবন্দি জীবনযাপন করলেও এখনও ত্রাণ সহায়তা পাননি ভুক্তভোগীরা। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা বিতরণের খবর পাওয়া যায়নি।

বাড়িঘরে পানি ঢোকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ

চিলমারীর রমনা ইউনিয়নের নন্দির মোড়, জোরগাছ মাঝিপাড়াসহ ইউনিয়নের কয়েকশ বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে উপজেলা প্রশাসন থেকে এখনও বরাদ্দ না পাওয়ায় ভুক্তভোগীদের তালিকা প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন রমনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজগার আলী সরকার।

উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের কলেজশিক্ষার্থী শেখ তৌহিদ আহমেদ জানান, তার ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। তবে বন্যার চেয়ে ভয়াবহ রূপে শুরু হয়েছে নদীভাঙন। গত কয়েকদিনের ভাঙনে স্থানীয় বাসিন্দাদের আবাদি জমি ও বসতভিটাসহ ওই ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থাপনা ব্রহ্মপুত্রে বিলীন হয়েছে। বাস্তুহারা হচ্ছে একের পর এক পরিবার।

তৌহিদ আহমেদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে দক্ষিণ খাওরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাংশ নদের গর্ভে চলে গেছে। তীব্র ভাঙনে হুমকিতে রয়েছে আরও অর্ধশতাধিক পরিবার। কিন্তু ভাঙন প্রতিরোধ কিংবা ভুক্তভোগীদের সহায়তায় এখনও কেউ এগিয়ে আসেনি।’

ঘরে ঢুকেছে বন্যার পানি, চৌকির ওপর রান্না করছেন এক নারী

বন্যায় সবচেয়ে দুর্গত হয়ে পড়েছে উলিপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ। এর মধ্যে বেশি আক্রান্ত হয়েছে বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মানুষ। ব্রহ্মপুত্র বেষ্টিত হওয়ায় এই ইউনিয়ন পুরোটাই পানিবন্দি। এর মধ্যে নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেগমগঞ্জের বেশিরভাগ বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। যাদের বাড়িঘরে পানি ঢোকেনি তারাও পানিবন্দি হয়ে আছেন। তবে বন্যার পানির চেয়ে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে দিশাহারা স্থানীয়রা।

বেগমগঞ্জের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ইউনিয়নের রাস্তাঘাট এখন পানির নিচে। চলছে নদীভাঙন। বেশিরভাগ বাড়িতে পানি ঢুকেছে। মানুষ পানিবন্দি হলেও এখনও ত্রাণ সহায়তা মানুষের কাছে পৌঁছায়নি।

মিজানুর বলেন, ‘গত দুই দিনে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আয়নাল হক, বেলাল হোসেনসহ কয়েক পরিবার ভাঙনে বসতভিটা হারিয়েছে। এর মধ্যে বানের পানি ঢুকে পড়ায় স্থানীয়রা কূল খুঁজে পাচ্ছে না। আমাদের অবস্থা করুণ।’

বানভাসিদের অবস্থা করুণ হলেও বরাদ্দ পাওয়ার পরও এখনও বেশির ভাগ এলাকায় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শুরু করেননি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। বিতরণ দূরের কথা, ভুক্তভোগীদের তালিকা তৈরিতেও অনাগ্রহের খবর পাওয়া গেছে। এক সপ্তাহ ধরে জনপ্রতিনিধিদের কাছে দুর্গত মানুষের তালিকা চাওয়া হলেও বৃহস্পতিবার দুুপুর পর্যন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা। 

ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে দুর্গত মানুষেরা

বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের (পিআইও) সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বানভাসিদের জন্য খাদ্য সহায়তা বরাদ্দ দেওয়া হলেও তিন দিনেও তা বিতরণ করা সম্ভব হয়নি।

জেলা সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার বলেন, বানভাসিদের জন্য ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তবে তালিকা প্রস্তুত না হওয়ায় আগামী রবিবারের আগে তা বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

উলিপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সিরাজ-উদ-দৌলা বলেন, ‘আমরা বারবার তালিকা চাওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা তালিকা জমা দেননি। তবে উপজেলার জন্য ৫০ মেট্রিক টন চাল ও দুই লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। কিন্তু দুর্গত মানুষের মাঝে তা এখনও বিতরণ শুরু হয়নি।’ উপজেলায় কী পরিমাণ মানুষ পানিবন্দি কিংবা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন তারও তালিকা পাওয়া যায়নি বলে জানান পিআইও।

তবে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম দাবি করেছেন, কয়েকটি এলাকায় ইতোমধ্যে ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে। যেখানে এখনও শুরু হয়নি সেখানে শুক্রবার থেকে শুরু হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ধরলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। আগামীকাল শুক্রবার থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানিও স্থিতিশীল থেকে দু’একদিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি শুরু হতে পারে।

/এএম/
সম্পর্কিত
তলিয়ে গেছে দুবাই বিমানবন্দর, বিপাকে প্রবাসীরা
৭৫ বছরের মধ্যে রেকর্ড বৃষ্টি দেখলো আমিরাত, মরু শহর দুবাইয়ে বন্যা
কাজাখস্তানে ভয়াবহ বন্যা, প্রায় এক লাখ মানুষ স্থানান্তর
সর্বশেষ খবর
চীনে রুপা জিতে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সুকান্ত ও নয়ন
চীনে রুপা জিতে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সুকান্ত ও নয়ন
বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদকর্মীদের প্রবেশে বাধা: উদ্বিগ্ন টিআইবি
বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদকর্মীদের প্রবেশে বাধা: উদ্বিগ্ন টিআইবি
আপাতত গরমেই খেলতে হচ্ছে সাবিনা-সানজিদাদের
আপাতত গরমেই খেলতে হচ্ছে সাবিনা-সানজিদাদের
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সর্বাধিক পঠিত
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন