দরপত্রের শর্তভঙ্গ করে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙামোড় ইউনিয়নে রাবাইতারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রাবাইতারী এসবি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিয়মিত গরু-ছাগলসহ সাপ্তাহিক হাট বসানোর অভিযোগ উঠেছে ইজারাদারের বিরুদ্ধে। এতে গরু ছাগলের মল-মূত্রের দুর্গন্ধ আর মাঠ কর্দমাক্ত হওয়ায় বিদ্যালয়ে পড়াশোনার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। এ নিয়ে গত ১৮ এপ্রিল এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন নুর ইসলাম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। প্রতি সোম ও শুক্রবার খড়িবাড়ি হাট বসে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
অভিযোগ উঠেছে, ইজারাদার রাবাইতারী এসবি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পরিবারের সদস্য ও প্রভাবশালী হওয়ায় ঝামেলা এড়াতে এ নিয়ে দুই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কেউই প্রকাশ্যে অভিযোগ দেওয়ার সাহস পান না।
অভিযোগকারী নুর ইসলাম বলেন, ‘ওই বিদ্যালয়ে আমার দুই নাতি ও নাতনি পড়াশোনা করে। মাঠে গরু ছাগলের হাট বসানোয় বিদ্যালয়ের পরিবেশ এতটাই খারাপ হয়েছে যা না দেখলে বোঝানো মুশকিল। তাছাড়া ইজারার শর্তেও বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে হাট বসানো যাবে না। কিন্তু ইজারাদার প্রধান শিক্ষকের ভাতিজা হওয়ায় তারা যোগসাজশে স্কুল মাঠে হাট বসাচ্ছেন। এ নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রকাশ্যে অভিযোগ দেওয়ার সাহস পান না। আমি প্রতিকার চেয়ে ইউএনও বরাবর অভিযোগ দিয়েছি।’
বিদ্যালয় দুইটির কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ইজারাদার রেদওয়ান শেখ লিংকন রাবাইতারী এসবি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজাউর রহমান শেখের আপন ভাতিজা। প্রধান শিক্ষকের আপন জেঠাতো ভাই মালেক সরকার ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি। মূলত প্রধান শিক্ষকের মদতেই স্কুল মাঠে হাট বসানো হচ্ছে। করোনার বাহানায় বিগত এক বছর টানা স্কুল মাঠে হাট বসানো হয়েছে। এ বছরও তারা হাটের ইজারা নিয়ে স্কুল মাঠেই গরু ছাগলের হাট বসাচ্ছে। এতে গরু ছাগলের মল-মূত্রের দুর্গন্ধ সৃষ্টি হচ্ছে। আর বৃষ্টিতে কাদা হয়ে বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। মাঠ নোংরা থাকায় ছেলে-মেয়েরা স্কুলে এসে খেলাধুলাও করতে পারে না। স্কুল আসলেই তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
মাঠে গরু ছাগলের হাট বসানোর বিষয়ে জানতে চাইলে রাবাইতারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আয়েশা খাতুন বলেন, ‘আগেও এমন অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করে ঝামেলায় পড়তে চাই না। শুধু এটুকু বলি, গরু ছাগলের হাট বসানোর কারণে স্কুলের বাচ্চাদের পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে। প্রশাসনিক কাজ চালাতেও সমস্যা হচ্ছে।’
বিদ্যালয় মাঠে গরু ছাগলের হাট বসানোর কথা স্বীকার করেছেন ইজারাদার রেদওয়ান শেখ লিংকন। তিনি বলেন, ‘করোনাকালে হাট বাজার সম্প্রসারিত করতে বলায় স্কুল মাঠে হাট নেওয়া হয়েছে। এখন কর্তৃপক্ষ আমাদের সরিয়ে নিতে বললে আমরা নেবো।’
ইজারাদার নিজের ভাতিজা স্বীকার করে রাবাইতারী এসবি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজাউর রহমান শেখ বলেন, ‘এই হাট আগে থেকে স্কুল মাঠে হয়ে আসছে।’
সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও মাঠে গরু ছাগলের হাট বসানো ঠিক হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘দেখি কী করা যায়। বিভাগীয় নির্দেশ আছে কি না দেখবো।’
গত ১৮ এপ্রিল ইউএনও অফিসে অভিযোগ জমা দিলেও বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত অভিযোগ হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন ইউএনও সুমন দাস। তিনি বলেন, ‘আমি এখনও অভিযোগ হাতে পাইনি। হাতে পেলে দেখে ব্যবস্থা নেবো।’
