X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িগ্রাম হাসপাতালে চুরি: আয়াকে ইনজেকশনভর্তি ‘ব্যাগ দেন’ ইনচার্জ

আরিফুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম
১১ মে ২০২২, ১৫:০৬আপডেট : ১১ মে ২০২২, ১৬:৪৭

‘আমি নাইট ডিউটি করে সকালে বাড়ি গেছি। বেলা সাড়ে ১০-১১টার দিকে মেডিসিন ওয়ার্ডের ইনচার্জ শানু আপা ফোন দিয়ে বলেন, একটু আয় তো। আমি হাসপাতালে গিয়ে উনার সঙ্গে দেখা করলে আমার হাতে একটি ব্যাগ দিয়ে বলেন, আমার বাসায় এটা রেখে আয়। এ জন্য আমার হাতে উনি ১০০ টাকাও দেন। ব্যাগের ভেতর কী ছিল আমি দেখিনি।’

গত ১৭ মার্চ কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল থেকে রোগীদের জন্য সরকারিভাবে সরবরাহ করা ইনজেকশন পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হাসপাতালের মাস্টাররোলে কাজ করা সার্জারি ওয়ার্ডের আয়া রাশেদা বেগম (৩০) কথাগুলো বলছিলেন।

গত ৭ এপ্রিল তিনি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালত ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করে তাকে কারাগারে পাঠান। ঈদের আগে জামিনে বের হন রাশেদা। সরকারি ওষুধ-ইনজেকশন পাচারের ঘটনা সম্পর্কে সম্প্রতি এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় রাশেদার।

আরও পড়ুন: হাসপাতাল থেকে সরকারি ৩০০ ইনজেকশন পাচারকালে নারী আটক

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, রাশেদার স্বীকারোক্তিতে উল্লেখ করা শানুর পুরো নাম শাহানাজ সিদ্দিকা শানু। পাচারের সময় তিনি হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের (পুরুষ) ইনচার্জের দায়িত্বে ছিলেন। পরে তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

রাশেদা বলেন, ‘শানু আপার কাছ থেকে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে হাসপাতাল চত্বরে আমার গ্রামের বাড়ি এলাকার এক ভাবির (শাহেদা) দেখা পাই। ওনাকে বলি ব্যাগটা একটু ধরি থাক, আমি পান খায়া আসি। হাসপাতাল গেট থাকি পান নিয়া আসি দেখি ওই ভাবিক পুলিশ আটক করছে। তখন আমি শানু আপার কাছে গিয়া বলি, আপা আপনি যে ব্যাগ দিছেন সেই ব্যাগ পুলিশ আটক করছে। তখন শানু আপা আমাক বলে, তুই মোবাইল বন্ধ করি পালাও। তোর সঙ্গে পরে কথা হইবে। পরে আমি নম্বর বন্ধ করি পালাই।’

আপনি কিংবা ইনচার্জ শানু আগে কখনও ওষুধ পাচারে অংশ নিয়েছিলেন কি না- এমন প্রশ্নে রাশেদা বলেন, ‘আমি আগে কখনও এসব কাজ করি নাই। শানু আপা আগে কখনও করেছিলেন কিনা তাও জানি না।’

প্রথমে পলাতক থাকলেও পরে আত্মসমর্পণের কারণ সম্পর্কে বলেন, ‘আমি জানতাম না ব্যাগের ভেতর কী আছে। শানু আপা আমাকে ডেকে ব্যাগটা তার বাসায় রেখে আসতে বলেছে। আমার ব্যাগ না। আমি কেন দায় নেবো? এ জন্য আমি পুলিশের কাছে গিয়ে ধরা দিছি। পুলিশ ও আদালতের বিচারকের কাছে একই জবানবন্দি দিয়েছি।’

হাসপাতাল সূত্র জানায়, চুরির ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমাও দিয়েছে। তবে তদন্তে কাকে দায়ী করা হয়েছে তা জানায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঘটনার পর মেডিসিন ওয়ার্ডের ইনচার্জ শাহানাজ সিদ্দিকা শানুকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে অভিযুক্ত রাশেদা সার্জারি ওয়ার্ডের আয়া হওয়ায় ওই ওয়ার্ডের ইনচার্জ জ্যোৎস্না পারভীনকেও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, মূলত ওয়ার্ড ইনচার্জদের দেওয়া চাহিদার ভিত্তিতে প্রতি ওয়ার্ডে ১৫ দিনের জন্য বিভিন্ন মেডিসিন অর্ডার দেওয়া হয়। ওই ওষুধের দায়িত্বও ওয়ার্ড ইনচার্জদের। গত ১৭ মার্চ উদ্ধার হওয়া ইনজেকশন ওয়ার্ড ইনচার্জদের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল বলে হাসপাতালের একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এ বিষয়ে জানতে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে গেলে মেডিসিন ওয়ার্ডের সাবেক ইনচার্জ শাহানাজ সিদ্দিকা শানুকে পাওয়া যায়নি। হাসপাতাল সূত্র জানায়, অব্যাহতি দেওয়ার পর থেকে তিনি হাসপাতালে আসছেন না। শানুর মোবাইলফোনে কল দিলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।

দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়া ইনচার্জ জ্যোৎস্না পারভীন বলেন, আমি এই ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত নই। ঘটনার দিন আমি সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ১৭ মার্চের অনুষ্ঠানস্থলে ছিলাম। আমার সুপারভাইজারও সেটা জানেন। আমার ওয়ার্ডের আয়া ডিউটি শেষে গিয়ে কোনও অনৈতিক কাজ করলে সে দায় আমার নয়।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শহিদুল্লাহ লিংকন বলেন, ‘আয়া রাশেদা কার নাম বলেছে সেটা পুলিশ ভালো বলতে পারবে।’  

আপনাদের তদন্তে কার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে- এমন প্রশ্নে তত্ত্বাবধায়ক বলেন, ‘আমি নামাজে যাচ্ছি, পরে কথা বলি।’ এরপর তিনি ফোনের সংযোগ কেটে দেন।

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সদর থানা পুলিশের এসআই আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘অভিযুক্ত রাশেদা ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে হাসপাতালের এক ইনচার্জ তাকে মেডিসিন ভর্তি ব্যাগ দিয়েছে বলে জানিয়েছে। তদন্তের স্বার্থে আমরা ওই ইন চার্জের নাম প্রকাশ করছি না। তদন্ত শেষে এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হবে।’

এর আগে, ১৭ মার্চ শাহেদা বেগম নামে এক নারীকে ব্যাগভর্তি তিন শতাধিক সরকারি ইনজেকশনসহ হাতেনাতে আটক করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে মামলা করে। শাহেদা ও রাশেদার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে মামলায় আসামি করা হয়।

/এফআর/টিটি/
সম্পর্কিত
ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
গরমে হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী
সর্বশেষ খবর
দেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
সিনেমা সমালোচনাদেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন
ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন
রাজশাহীতে বইছে তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
রাজশাহীতে বইছে তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ