X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘এইহানে থাকলে নদীতে ভাইসা যাইতে হইবো’

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
২০ জুন ২০২২, ০২:১০আপডেট : ২০ জুন ২০২২, ১৬:০৩

অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে কুড়িগ্রামের ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার উপজেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে চলমান বন্যায় জেলার ২১ হাজার পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে ব্রহ্মপুত্রের গ্রাসে পড়েছে উলিপুর উপজেলার একটি সরকারি আবাসন। ভাঙন আতঙ্কে থাকা ওই আবাসনের অনেকে আবাসন ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটছেন।

এদিকে, প্লাবিত এলাকার পরিধি বাড়ায় পানিবন্দি পরিবারগুলোতে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারি পর্যায়ে ত্রাণ সহায়তা বরাদ্দ দেওয়া হলেও বিতরণের ধীরগতিতে বেশিরভাগ এলাকার দুর্গতদের কাছে সহায়তা পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

ঝুঁকিতে পড়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, রবিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বেড়েছে দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি। ব্রহ্মপুত্র নদ নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। নদ-নদীর পানি বেড়ে জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে পাউবো।

ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত এলাকার বেশ কিছু গ্রামে দুর্ভোগে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন। এই নদের তীব্র ভাঙনে উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ফকিরের চর সরকারি আবাসন প্রকল্পের কিছু অংশ নদের গর্ভে চলে গেছে। আগ্রাসী এ নদের ভাঙন আতঙ্কে বাসিন্দারা আবাসনের ঘরের টিন ও ইটসহ নিজেদের গৃহস্থালী সরঞ্জাম সরিয়ে নিচ্ছেন। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে অনেকে আবাসন ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

রুস্তম আলী, হাকিমুদ্দিন, রাসেল ও আশরাফসহ ভাঙন ঝুঁকিতে থাকা ফকিরের চর আবাসনের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এই আবাসন প্রকল্পে মোট ৮০ পরিবারের বসতি। আবাসনের উত্তর অংশে ব্রহ্মপুত্রের তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে তাতে আবাসন এলাকা তাদের বসবাসের জন্য কোনোভাবেই নিরাপদ নয়। তারা সংসারের জিনিসপত্র নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ নিজেদের নামে বরাদ্দ আবাসনের ঘরের টিন ও ইট খুলে নিয়ে যাচ্ছেন।

‘এইহানে থাকলে নদীতে ভাইসা যাইতে হইবো। যে ভাঙন শুরু হইছে তাতে এইহানে কিছুই থাকবো না। আমরা জিনিসপত্র নিয়া অন্য চরে চইলা যাইতাছি।’ নৌকায় মালপত্র বোঝাই করতে করতে বলছিলেন ভাঙনে আবাসন ছেড়ে চলে যাওয়া রাসেল নামে এক বাসিন্দা।

ফকিরের চর আবাসনের বাসিন্দা ও বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবু বক্কর খান বলেন, ‘এইহানে আর থাকতে পারবো না। নদীর অবস্থা খুব খারাপ। দুই-একদিনের মধ্যে আবাসনের উত্তর অংশ চইলা যাইবো (বিলীন হবে)। দক্ষিণ অংশও থাকবো না। মানুষ খুব আতঙ্কে আছে। কেউ কেউ আবাসন ছাইড়া যাচ্ছে। অনেকের যাওয়ার জায়গাও নাই।’ বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান এই ইউপি সদস্য।

মানুষের শেষ সম্বল রক্ষার চেষ্টা

এদিকে, প্লাবিত এলাকা বাড়ায় কুড়িগ্রাম সদর ও উলিপুর উপজেলার অনেক পরিবারের ঘরবাড়িতে হাঁটু থেকে কোমর উচ্চতায় পানি প্রবেশ করেছে। জীবন বাঁচাতে অনেকে বাড়ি ছেড়ে বাঁধ ও বিভিন্ন স্কুলে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন। এসব ভুক্তভোগী পরিবারে এখনও খাদ্য সহায়তা পৌঁছেনি বলে অভিযোগ দুর্গতদের।

বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে অন্তত তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি। এর মধ্যে ফকিরের চর আবাসনে ভাঙন শুরু হওয়ায় অনেকে ওই আবাসন ছেড়ে চলে যাচ্ছে। বিষয়টি ইউএনওকে জানানো হয়েছে।’ তবে ভাঙন আতঙ্কে থাকা বাসিন্দাদের স্থানান্তরে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে জানান এই ইউপি চেয়ারম্যান।

ইউনিয়নের দুর্গতদের সহায়তায় ৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পেয়েছেন জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই চাল দিয়ে ৬০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া যাবে। এটা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।’

উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ও ভাঙনের কবলে পড়া পরিবারগুলোকে উদ্ধারে প্রশাসনের গৃহীত উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপুল কুমারকে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি।

জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা জানায়, রবিবার পাওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী জেলায় প্রায় ২১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যাদুর্গতদের জন্য এ পর্যন্ত ৩১৩ মেট্রিক টন চাল, ১৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা ও এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিশু খাদ্যের জন্য ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এবং গো খাদ্যের জন্য ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন এসব বরাদ্দ দুর্গতদের মাঝে বিতরণ করবে।

/জেজে/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
দক্ষিণখানে ভবনের চার তলা থেকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
দক্ষিণখানে ভবনের চার তলা থেকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট হলেন ১৯ জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট হলেন ১৯ জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী