X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে গবাদিপশুতে ছড়াচ্ছে লাম্পি স্কিন, প্রতিষেধক নেই 

আরিফুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:৩০আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২৩:৩৬

কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গবাদিপশুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএস‌ডি)। জেলার সদর, নাগেশ্বরী ও উলিপুর উপজেলার বেশ কিছু ইউনিয়নের গৃহস্থদের গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। মূলত আফ্রিকান ভাইরাস ঘটিত এই রোগ গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের গবাদিপশুতে দেখা যাচ্ছে। কুড়িগ্রামের কিছু এলাকায় গত কয়েক দিনে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে অন্তত চারটি গরু মারা যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তবে প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, কয়েক মাস ধরে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও আক্রান্ত পশুর মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই। কোনও এলাকায় গবাদিপশু আক্রান্ত হলে তারা ওই এলাকায় ভ্যাকসিন কার্যক্রম পরিচালনা করেন বলে দাবি করেছেন কর্মকর্তারা।

সরকা‌রের কৃ‌ষি তথ্য সা‌র্ভিসের ও‌য়েবসাই‌টে দেওয়া তথ্যম‌তে, মূলত এক প্রকার পক্স ভাইরাস বা এলএসডি ভাইরাসের সংক্রমণে গবাদিপশুতে এই রোগ দেখা দেয়। এই রোগ গরু থেকে আরেক গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগে গরুর চামড়ার উপরিভাগে শরীরজুড়ে গোটা সৃষ্টি হয়। সাধারণত বর্ষার শেষে, শরতের শুরুতে অথবা বসন্তের শুরুতে মশা-মাছির কামড়ে এই প্রাণঘাতী রোগ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দু‌ধ ও লালার মাধ্যমেও এ‌টি আক্রান্ত গরু বা ম‌হিষ থে‌কে বাছু‌রে ছড়া‌তে পা‌রে।  এর চিকিৎসায় এখনও সুনির্দিষ্ট কোনও টিকা আমাদের দেশে আসেনি। ত‌বে মানু‌ষ এ‌তে আক্রান্ত হয় না। 

জেলার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার এলাকায় অনেক গরুর মধ্যে লাম্পি স্কিন ডিজিজ দেখা দিয়েছে। আমি নিজেও এই এলাকায় পশুর চিকিৎসা করি। অনেকে আমার কাছে আক্রান্ত পশু নিয়ে এসে চিকিৎসা নিয়েছেন।’

‘বৃহস্পতিবার সকালেও মশালের চর এলাকা থেকে এক ব্যক্তি আক্রান্ত গরু নিয়ে এসেছিলেন। চরাঞ্চলের গরুও এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে’, যোগ করেন এই পল্লি পশু চিকিৎসক।

সফিকুল ইসলামের দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে রসুলপুর গ্রামের নজর আলী ও বাদশার বাড়িতে গিয়ে লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত গরু পাওয়া যায়।

বাদশার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘প্রায় এক মাস ধরে দুটি গরুর গায়ে এই রোগ দেখা দিছে। অনেক টাকা খরচ করি চিকিৎসা করিয়াও ভালো হইতেছে না। এখন আর চিকিৎসা করতেছি না। ইয়ার মধ্যে গরুর পায়ের খুরাত ঘা হইছে। হলুদ-টলুদ দিয়া রাখতেছি।’

প্রায় ১৫ দিন আগে রসুলপুর গ্রামের রেজিয়া বেগমের একটি গরুর বাছুরের গায়ে গোটা বের হতে শুরু করে। পরে তিনি স্থানীয় পল্লি চিকিৎসক সফিকুল ইসলামের দ্বারস্থ হন। কিন্তু তার গরুর বাছুরের শরীরে গোটার পরিমাণ কমেনি। বরং তার বাছুরটি দিন দিন আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে। 

রেজিয়া বেগম বলেন, ‘বাছুরের গায়ে গোটা উঠছে। সফি মেম্বারের কাছে ওষুধ নিয়া চিকিৎসা করাইছি, কিন্তু গোটা ভালো হয় নাই। এখন মেম্বার আর ওষুধ দেয় না। বলছে গোটা ফুটি না বেড়াইলে  (ফেটে না গেলে) আর ওষুধ দেওয়া যাবার নয়। এলা বাছুরটা অমনে আছে।’

এদিকে উলিপুরের দলদলিয়া, বজরা ও মাঝবিল এলাকায় এ রোগে আক্রান্ত হয়ে অন্তত চারটি গরুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

তবে আক্রান্ত পশুর মৃত্যুর কোনও তথ্য জানাতে পারেননি উলিপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রেজওয়ানুর হক। তিনি বলেন, ‘গত তিন চার মাসে উপজেলায় অন্তত সাত থেকে আটশ’ গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। চিকিৎসায় অনেক গরু সুস্থ হয়েছে। এখনও এই রোগে গবাদিপশু আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা আক্রান্তের খবর পেলে ওইসব এলাকায় ভ্যাকসিন কার্যক্রম পরিচালনা করি।’

আক্রান্ত গরুকে উপজেলা প্রা‌ণিসম্পদ হাসপাতালে নিয়ে আসার পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘যারা আমাদের কাছে না এসে গ্রামের চিকিৎসক কিংবা কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের অনেকের গরু মারা গিয়ে থাকতে পারে। তবে আমাদের কাছে সেই তথ্য নেই। আমরা তথ্য সংগ্রহের কাজ করছি। মূলত অনেকে এই রোগে আক্রান্ত গরুকে ব্যথার ওষুধ খাওয়াচ্ছেন। এতে আক্রান্ত পশু আরও দুর্বল হয়ে মারা গিয়ে থাকতে পারে।’

রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিষেধক সম্পর্কে জানতে চাইলে এই প্রাণী চিকিৎসক বলেন, ‘এই রোগ প্রতিরোধে আমরা ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। আর আক্রান্ত পশুর জন্য আমরা লক্ষণভিত্তিক সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা দিচ্ছি। পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করারও চেষ্টা করছি। তবে আগামী দুই-এক মাসের মধ্যে শীত এলে এমনিতেই এর প্রাদুর্ভাব কমে আসবে।’

নাগেশ্বরী উপজেলাতেও একই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. আশিকুজ্জামান বলেন, ‘আমার উপজেলায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই দুই-একটি আক্রান্ত পশু নিয়ে ভুক্তভোগী কৃষকরা প্রাণিসম্পদ অফিসে আসছেন। আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. মো. ইউনুছ আলী বলেন, দুই বছর ধরে দেশে এই রোগ দেখা যাচ্ছে। এ বছর জেলায় বেশ কিছু স্থানে এই রোগে গবাদিপশু আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। আমরা কৃষকদের প্রাণিসম্পদ অফিসে এসে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।

‘এটি ভাইরাস জনিত রোগ। এই রোগে গরুর চামড়ার উপরিভাগে শরীরজুড়ে গোটা সৃষ্টি হয়। মশা ও মাছির কামড়ে এক পশু থেকে আরেক পশুতে ছড়ায়। এর চিকিৎসায় এখনও সুনির্দিষ্ট কোনও টিকা আমাদের দেশে আসেনি। এই রোগ প্রতিরোধে আমরা গোট পক্স ভ্যাকসিন দিয়ে থাকি। এতে আক্রান্ত পশুর সুস্থ হওয়ার হার প্রায় ৮০ ভাগ। আর আক্রান্ত পশুকে আমরা লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা দিয়ে থাকি।’ 

রো‌গের লক্ষণ দেখা দি‌লে রে‌জিস্টার্ড চি‌কিৎস‌ক অথবা প্রা‌ণিসম্পদ দফতরের পরামর্শক্রমে গবা‌দিপশুর চি‌কিৎসার পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।

 

/টিটি/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী