শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির ডাকা পরিবহন ধর্মঘটে একাত্মতা নেই বলে জানিয়েছেন কুড়িগ্রাম জেলা মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. লুৎফর রহমান বকসি। এছাড়া রংপুরে গাড়ি পাঠালে সেগুলো আটকে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কুড়িগ্রামের পরিবহন মালিক সমিতির এক নেতা। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রংপুরে আমাদের ৯টি গাড়ি আটকানো আছে। এ অবস্থায় আমরা গাড়ি চালাবো কিনা তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি।
এদিকে বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনকে কুড়িগ্রাম জেলা মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. লুৎফর রহমান বকসি বলেন, ‘আমরা কোনও ধর্মঘট আহ্বান করিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে ধর্মঘটের সমর্থনে কোনও নির্দেশনা নেই। তবে রংপুরের ডাকা ধর্মঘটে আমাদের জেলার মোটর মালিকরা গাড়ি চালাবেন কিনা সে সিদ্ধান্ত তাদের (মালিকদের)। গাড়িগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন। আমরা বলে দিয়েছি, যারা গাড়ি চালাতে চাইবেন তারা চাইলে সড়কে নামতে পারেন। আমাদের এখান থেকে কোনও প্রতিবন্ধকতা নেই। তবে সেক্ষেত্রে দায়দায়িত্ব তারা নিজেদের বহন করতে হবে।’
শনিবার রংপুরে বিএনপির সমাবেশ, শুক্রবার থেকে বাস ধর্মঘট‘আমরা ভৌগলিক কারণে শেষ প্রান্তের জেলা হওয়ায় আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে,’ যোগ করেন মোটর মালিক সমিতির এই সাধারণ সম্পাদক।
রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির ডাকা পরিবহন ধর্মঘটের কারণ হিসেবে কুড়িগ্রাম জেলায় ‘প্রশাসনিক হয়রানির’ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে লুৎফর রহমান বলেন, ‘বুধবার কুড়িগ্রামের ত্রিমোহনীতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে কিছু মিনিবাসের জরিমানা করা হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গ টেনে এটা (হয়রানি) বলা হয়েছে বলে জেনেছি।’
ধর্মঘটে সমর্থন দিয়ে কুড়িগ্রাম জেলাতে পরিবহন ধর্মঘট না ডাকলেও মোবাইল কোর্টে জরিমানার সমালোচনা করে মোটর মালিক সমিতির এই নেতা বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে সড়ক-মহাসড়কে অনেক অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে। কিন্তু মোবাইল কোর্ট বসলে সেসব অবৈধ যানবাহনের কোনও জরিমানা করে না। অথচ সেসব যান তাদের সামনে দিয়েই চলাচল করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের গাড়ি তো অবৈধ নয়। কোনও গাড়ির কাগজপত্রের মেয়াদ কয়েকদিনের ফেইল থাকলেই মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা গুনতে হয়। বিষয়গুলো প্রশাসনে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।’
এদিকে কুড়িগ্রাম মোটর মালিক সমিতির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রংপুরের ডাকা ধর্মঘটে আমাদের কিংবা লালমনিরহাটের কোনও সমর্থন নেই। এটা রাঙ্গা সাহেব একক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
রংপুর মালিক সমিতির ডাকা ধর্মঘটে কুড়িগ্রাম থেকে পরিবহন চলাচল করবে কিনা, এমন প্রশ্নে মালিক সমিতির এই নেতা বলেন, ‘ আমরা রংপুরে গাড়ি পাঠালেই সেগুলো তারা আটকে দিচ্ছেন। এখনও (বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা) রংপুরে আমাদের ৯টি গাড়ি আটকানো আছে। এ অবস্থায় আমরা গাড়ি চালাবো কিনা তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি।’
এদিকে ‘জেলা প্রশাসনের হয়রানি’ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘ বিআরটিএ চাহিদা দিলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। প্রসিকিউশনের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনানুগভাবে মোবাইল কোর্টে জরিমানা করা হয়। আমরা যাত্রীদের কথা বিবেচনায় আইনের মধ্যে থেকে কাজ করি। এখানে হয়রানির বিষয়টি সঠিক নয়।’
মোবাইল কোর্টের সামনে দিয়েই অবৈধ যানবাহন চলাচল করে সেগুলোর বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, মোটর মালিক সমিতির পক্ষ থেকে এমন অভিযোগের বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো। পরবর্তীতে তারা যেন বিষয়গুলো খেয়াল রাখে।’
এদিকে আগামী শনিবার (২৯ অক্টোবর) রংপুরে মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। তবে খুলনার মতো এখানেও একদিন আগে শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রংপুরে পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে জেলা মোটর মালিক সমিতি। বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করছেন মহাসমাবেশকে ব্যর্থ করতেই পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।
তবে জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার, নসিমন, করিমনসহ লাইসেন্সবিহীন অবৈধ যান চলাচল বন্ধ ও কুড়িগ্রামে প্রশাসনিক হয়রানির প্রতিবাদে শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রংপুরের সব রুটে বাস, ট্রাক, মিনিবাস ও মাইক্রোবাস চলাচল বন্ধ থাকবে।
