X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

১৮ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া দিনাজপুর পৌরসভার

দিনাজপুর প্রতিনিধি
৩০ নভেম্বর ২০২২, ২৩:২০আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২২, ২৩:২০

১৮ কোটি টাকা বিল বকেয়া থাকায় দিনাজপুর পৌরসভার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো)। এতে জন্মনিবন্ধনসহ নানা ধরনের নাগরিক সুবিধা নিতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন পৌরবাসী। 

শুধু নাগরিকরা নন, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় দাফতরিক কাজেও পড়েছে ভাটা। সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছেন টিকা স্টোর রুমের সংশ্লিষ্টরা। তাদের শঙ্কা বিদ্যুৎ সংযোগ না পেলে স্টোরে থাকা আট হাজার ডোজ করোনার ভ্যাকসিন ও তিন হাজার পিস ইপিআই টিকা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

নেসকোর কর্মকর্তারা বলছেন, ১৮ কোটি টাকা বিল বকেয়া থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বলছেন, আগে থেকে তাদের কিছু না জানিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে ৭০ কোটি টাকা পাবে পৌরসভা। বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে এরই মধ্যে নেসকোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মিনারুল ইসলাম খান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকাল থেকে হঠাৎ পৌরসভার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় নেসকো। দীর্ঘ সময় অন্ধকারে থাকার পর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন নেসকোর কর্মকর্তারা তাদের জানিয়েছেন, বিদ্যুতের বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

এদিকে, মঙ্গলবার অফিস সময়ের পর জানতে পারায় ওই দিন তেমন সমস্যা না হলেও বুধবার সকাল থেকে দুর্ভোগে পড়েন পৌর কর্তৃপক্ষ ও পৌরবাসী। 

দুপুরে পৌরসভায় গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যুৎহীন রয়েছে পৌরসভা ও আশপাশের এলাকা। শুধুমাত্র কর্মকর্তাদের কক্ষের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে জেনারেটর চালু রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় জন্মনিবন্ধন হচ্ছে না। ফলে এই সেবা নিতে আসা সবাইকে ফেরত যেতে হয়েছে। আশপাশের এলাকায় আলো না থাকায় বাইরে সেবা গ্রহণ করতে হচ্ছে নাগরিকদের। কর আদায় শাখাতেও আদায়কৃত কর কম্পিউটারে অ্যান্টি দেওয়া যাচ্ছে না।

তবে এসব থেকে বেশি বিপাকে পড়েছেন পৌরসভার টিকা স্টোর রুমের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও টিকাদানকারীরা। তাদের স্টোর রুমে টিকা কার্যক্রমের জন্য প্রায় আট হাজার ১৩০ ডোজ করোনার টিকা রয়েছে। একইসঙ্গে ইপিআই ভ্যাকসিন রয়েছে তিন হাজার ২৩০টি। সঠিক তাপমাত্রায় এসব টিকা সংরক্ষণ করা না হলে সেগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে। 

বিকাল থেকে জেনারেটর দিয়ে এসব টিকা সংরক্ষণের নির্দিষ্ট তাপমাত্রা বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে জেনারেটর দিয়ে রেফ্রিজারেটরের তাপমাত্রা সঠিক রাখা যাচ্ছে না। এভাবে বিদ্যুৎহীন থাকলে সেসব টিকার গুণগত মান খারাপ কিংবা নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা করেছেন তারা।

পৌরসভার বাসিন্দা মিনা আক্তার বলেন, ‌‘ছেলের জন্মনিবন্ধন করতে এসেছি। এখানে এসে দেখি বিদ্যুৎ নেই। কখন আসবে বলা যাচ্ছে না। বিল পরিশোধ না করায় বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটির জন্য তো আমরা দায়ী নই। জন্মনিবন্ধন না পেলে ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারবো না।’

স্টোর কক্ষের অফিস সহকারী হামিদুর রহমান বলেন, ‘কাল থেকে বিদ্যুৎ নেই। করোনার টিকাগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে। জেনারেটর চালু করে রেফ্রিজারেটরের তাপমাত্রা ঠিক রাখা হয়েছে। কিন্তু এভাবে বিদ্যুৎ বন্ধ থাকলে তো সমস্যা।’

পৌরসভার ইপিআই সুপারভাইজার মোমরেস সুলতানা বলেন, ‘এখানে করোনার ভ্যাকসিন ও ইপিআই টিকা রয়েছে। করোনার ভ্যাকসিন ও শূন্য থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুদের টিকাও রয়েছে। চারটি রেফ্রিজারেটরে টিকা সংরক্ষিত করা হয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্রিজগুলো বন্ধ হয়ে আছে। এভাবে তো সেগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে।’

পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জুলফিকার আলী স্বপন বলেন, ‘আমি দুই বছর ধরে কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এই দুই বছরে ২৪টি মাসিক সমন্বয় সভা করা হয়েছে। কিন্তু কোনও মাসিক সমন্বয় সভায় বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার ব্যাপারে আমাদের কিছুই বলা হয়নি। এখন আমরা অন্ধকারে। জনগণের সমস্যা তো আমাদেরই সমস্যা। এই যে বদনাম হলো পৌরসভার, এর জন্য মেয়র দায়ী। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার দায় মেয়রকে নিতে হবে।’

বিকালে পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের কার্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার রুমটি বাইরে থেকে তালা লাগানো ছিল। এ ব্যাপারে জানতে মেয়রকে কল দিলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে ফোন কেটে দেন।

পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মিনারুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগ বিষয়টি অবহিত না করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। তারা জানিয়েছে আমাদের কাছে ১৮ কোটি টাকা পাবে। কিন্তু আমরাও স্থাপনা ভাড়া বাবদ তাদের কাছে ৭০ কোটি টাকা পাবো। বিদ্যুতের অভাবে আমরা নানামুখী সমস্যায় পড়েছি। জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। স্টোরে যে করোনার ও ইপিআই টিকা রয়েছে সেগুলো নষ্ট হওয়ার পথে। আমরা যোগাযোগ করছি, যাতে তারা বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়। এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির দিনাজপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম শাহাদত হোসেন বলেন, ‘১৫ বছর ধরে পৌরসভা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছে না। বারবার বিষয়টি জানালেও কোনও সুরাহা হয়নি। অবশেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি। জমিজমা বা স্থাপনা ভাড়ার ব্যাপারে বলা হলেও সেই সংশ্লিষ্ট কোনও কাগজপত্র আমাদের দেখাতে পারেনি তারা। কাজেই তারা যে টাকা পাবে বলে দাবি করছে তা সঠিক নয়।’

জেলা সিভিল সার্জন ডা. বোরহন-উল হক বলেন, ‘পৌরসভায় আমাদের টিকা রয়েছে। রেফ্রিজারেটর থাকলে ৭২ ঘণ্টা টিকা ঠিক থাকে। পৌরসভার কাছে থাকা টিকাগুলো বিকল্প জায়গায় ফ্রিজার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

/এএম/
সম্পর্কিত
বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড
নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি কার্যক্রম দ্রুত শেষ করার তাগিদ
বিদ্যুতে স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা, লোডশেডিং নেমেছে শূন্যে
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা