X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

কবরস্থান ও সড়ক সংস্কার না করেই কয়েক কোটি টাকা লোপাট

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ২১:৩৬আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ২১:৩৬

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) ও কাজের বিনিময় খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির অধীনে প্রকল্প বাস্তবায়ন না করেই অর্থ লোপাটের ঘটনা ঘটেছে। ‘নাম আছে কাজ নেই’ ধরনের এসব প্রকল্পের বেশিরভাগ কাজ বাস্তবায়ন না করেই বিল দিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) দফতর। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ (পিআইও) সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের যোগসাজশে সরকারি এসব প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ২০২১-২০২২ অর্থবছরে টিআরের ১৯০টি প্রকল্পে তিন কোটি ছয় লাখ ৭৬ হাজার ২১৮ টাকা, কাবিটার ৩৩টি প্রকল্পে এক কোটি ৩৭ লাখ ৯৯ হাজার ১৬৮ টাকা এবং কাবিখার ৩৪টি প্রকল্পে ৩৬০ দশমিক ৯৮৯৫ মেট্রিক টন চাল এবং ২৫টি প্রকল্পে ২৯১ দশমিক ৯৮৫৭ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেয় সরকার। এসব বরাদ্দে কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, সংশ্লিষ্ট পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয়ে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়। কাজের তদারকি করেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলায় বেশিরভাগ প্রকল্পের কাজ হয়নি, আবার চোখে ধুলা দেওয়ার উদ্দেশ্যে কোথাও কোথাও নামমাত্র কাজ করে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। তদারকি ও বাস্তবায়নকারীদের ভাগ-বাটোয়ারার ফলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন না করে সিংহভাগ অর্থ চলে গেছে সংশ্লিষ্টদের পকেটে। নিরপেক্ষ তদন্ত করলে এসবের সত্যতা বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন প্রকল্প এলাকার বাসিন্দারা।

সরেজমিনে কয়েকটি প্রকল্প এলাকা ঘুরে স্থানীয়দের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তবকপুর ইউনিয়নের সাদুল্যা চাচিয়ারপাড় ইফসুফ আলী নুরানি মাদ্রাসায় মাটি ভরাটের জন্য কাবিটা প্রকল্পে চার লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও কোনও কাজ হয়নি।

মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সামছুল হক বলেন, ‘আমরা প্রকল্পের কোনও টাকা পাইনি। মাদ্রাসায় মাটি ভরাটের কোনও কাজও হয়নি।’

হাতিয়া ইউনিয়নের দিঘলহাইল্যা হিন্দুপাড়া থেকে চৌধুরীকুঠি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের জন্য এক লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেখানো হলেও সরেজমিনে এই রাস্তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

দিঘলহাইল্যা হিন্দুপাড়ার বাসিন্দা নীরদ দাস জানান, তাদের গ্রাম থেকে চৌধুরীকুঠি যাওয়ার কোনও রাস্তা নেই। তাই সংস্কারের প্রশ্নই আসে না। 

তাছাড়া কাদেরের বাড়ি থেকে মাঝিপাড়া পর্যন্ত রাস্তা গত ১০ বছরেও কেউ এক কোদাল মাটি ফেলেনি বলে দাবি করেন স্থানীয় বাসিন্দা আফসার আলি ও আজিজুল হক।

ইফসুফ আলী নুরানি মাদ্রাসায় মাটি ভরাটের জন্য কাবিটা প্রকল্পে চার লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও কোনও কাজ হয়নি

উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইসলাম বাজার থেকে সরকার বাজার পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের জন্য কাবিটা প্রকল্পের চার লাখ টাকা, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে টিআর প্রকল্পের আওতায় ফকির মোহাম্মদ করবস্থানের মাঠি ভরাটের জন্য তিন লাখ টাকা, ফকির মোহাম্মদ মন্ডলপাড়া জামে মসজিদের মাঠ ভরাটের জন্য তিন লাখ টাকা, কামারপাড়া মসজিদ সংস্কারের জন্য ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও বরাদ্দের কোনও হদিস পাননি সংশ্লিষ্ট মসজিদ-মাদ্রাসা কমিটির সভাপতিসহ সংশ্লিষ্টরা। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব প্রকল্পের কোনও কাজ হয়নি। অথচ কাগজ-কলমে কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে গত জুন মাসের মধ্যেই টাকা উত্তোলন দেখিয়েছেন পিআইও সিরাজুদ্দৌলা।

বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ফকির মোহাম্মদ কবরস্থান কমিটির সভাপতি হযরত আলী বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। কবরস্থানের মাটি ভরাটের জন্য বরাদ্দের কোনও টাকা পাইনি। কোনও কাজও বাস্তবায়ন হয়নি।’ 

উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নেও এসব প্রকল্পের কোনও কাজ বাস্তবায়ন হয়নি বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যরা বলেন, বরাদ্দের অংশ স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও পিআইওকে দেওয়ার পর সামান্য কাজ করা ছাড়া উপায় থাকে না। ভাগ-বাটোয়ারার পর আর কাজের কোনও টাকা অবশিষ্ট থাকে না। ভাগাভাগিতে জটিলতা দেখা দেওয়ায় গত বছর কয়েকটি প্রকল্পের টাকা ফেরতও গেছে।’

উলিপুর উপজেলার পিআইও সিরাজুদ্দৌলা বলেন, ‘কুড়িগ্রাম বন্যাপ্রবণ এলাকা হওয়ায় জুন-জুলাই মাসের দিকে রাস্তা সংস্কার বা মাঠ ভরাটের কোনও মাটি পাওয়া যায় না। এজন্য অধিকাংশ কাজ শেষ করতে পারিনি। জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, তাই প্রতিটি প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন দেখিয়ে চেক ইস্যু করে টাকা তুলে রাখা রাখা হয়েছে। এখন শুষ্ক মৌসুমে কাজ শুরু হয়েছে, যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে সেই প্রকল্পের টাকা প্রদান করা হবে।’ 

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাজ বাস্তবায়ন না করে এভাবে টাকা তুলে রাখার কোনও সুযোগ নেই।

এসব বিষয়ে জানতে উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করে তার মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।

কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য এম এ মতিন বলেন, ‌‘এই কাজগুলো সাধারণত সংশ্লিষ্ট মসজিদ কমিটি, কবরস্থান কমিটি এবং রাস্তার কাজ হলে আমাদের দলের লোকজন করে থাকেন। সুপারভাইজার হিসেবে পিআইও থাকেন। আমি শুধু কাজের বরাদ্দ দিয়ে থাকি। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখবো।’

/এএম/
সম্পর্কিত
রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিক্রির অভিযোগবিজেএমসির চেয়ারম্যানসহ তিনজনের দুর্নীতি অনুসন্ধান করবে দুদক
ব্র্যাক ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ৭ লাখ টাকা গায়েব
বাড়ি লিখে না দেওয়ায় বাবাকে ছুরিকাঘাত
সর্বশেষ খবর
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
সর্বাধিক পঠিত
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি