পাওনার দেড় লাখ টাকা না দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে করা মামলায় নিম্ন আদালত থেকে দুই মাসের সাজা দেওয়া হলে আপিল করেন আসামিপক্ষ। আপিলে দুই মাসের সাজাকে বৃদ্ধি করে দুই বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আদালতপাড়ায় তোলপাড় চলছে।
এই নিয়ে আইনজীবীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজা বৃদ্ধি করে রায় দেওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন এবং আইনবহির্ভূত বলে আখ্যা দিয়েছেন আইনজীবীরা। রংপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ কৃষ্ণ কান্ত রায়ের আদালত আসামিপক্ষের করা আপিলে এই আদেশ দিয়েছেন।
আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন, মামলার বাদী আলী আহামেদ আসামি আফছার আলীর বিরুদ্ধে দেড় লাখ টাকা ধার নেন। নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে টাকা নেন। কিন্তু পাওনা টাকা পরিশোধ না করে উল্টো মামলার বাদীকে গালাগাল ও হুমকি দেন। এ ঘটনায় বাদী রংপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নালিশি মামলা করেন। বিচারক শুনানি শেষে আসামি আফসার আলীর বিরুদ্ধে সমন জারির আদেশ দেন এবং তাকে আদালতে হাজির হতে সমন জারির আদেশ দেন। এরপর আসামি আফসার আলী ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে জামিনের প্রার্থনা করলে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।
এরপর ২০২১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর আদালত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এরপর বাদীপক্ষের সাক্ষ্য ও জেরা শেষে আসামি আফসার আলীকে ৪২০ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৪ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে রংপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ কৃষ্ণ কান্ত রায়ের আদালতে আপিল করেন আসামি। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত আপিল শুনানি শেষে আসামির বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতের দেওয়া দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ যথাযথ হয়েছে বলে রায় দিয়ে আসামির দুই মাসের সাজা বৃদ্ধি করে দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানার আদেশ বৃদ্ধি করে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) আসামিপক্ষের আইনজীবী আপিল আদেশের কপি পাওয়ার পর আদালতপাড়ায় তোলপাড় শুরু হয়। আইনজীবীরা বলছেন, বাদীপক্ষ মামলায় আপিল করেনি। তারা সাজা বৃদ্ধির কোনও আবেদনও করেনি। বরং আসামি তাকে দেওয়া দুই মাসের সাজার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। সেখানে আসামির সাজা দুই মাস থেকে বৃদ্ধি করে দুই বছর দেওয়াটা আইনের ব্যত্যয় হয়েছে।
এ বিষয়ে রংপুরের সিনিয়র আইনজীবী ও রংপুর আইন মহ্যাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সাজেদ হোসেন তাতা বলেন, যেহেতু বাদীপক্ষ মামলায় আসামির সাজা বৃদ্ধির কোনও আবেদন করেনি, আসামি তার বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতের দেওয়া দুই মাসের সাজা আইন সম্মত হয়নি বলে অভিযোগ করে আপিল করেছেন। এ ক্ষেত্রে আপিল আদালত আপিল আবেদন নামঞ্জুর করতে পারতেন। কিন্তু সাজা বৃদ্ধি করা আইনসম্মত হয়নি। এর মাধ্যমে আপিলকারী ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
জেলার আরেক সিনিয়র আইনজীবী ও ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ রইছ উদ্দিন বাদশা বলেন, বাদী যদি সাজা বৃদ্ধির আবেদন করতো সেক্ষেত্রে আদালত সেই আবেদন বিবেচনা করতে পারতেন। কিন্তু আপিল করেছেন আসামি। ফলে তার সাজা দুই মাস থেকে বৃদ্ধি করে দুই বছর করা নজিরবিহীন ঘটনা। এটা আইনের ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
রংপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মালেক জানান, আসামি তার বিরুদ্ধে ন্যায় বিচার করা হয়নি বলেই আপিল দায়ের করেছেন। অথচ তার সাজা বৃদ্ধি করা আইনত ন্যায্য হয়নি বলে আইনজীবীদের সেন্টিমেন্টের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন না।