X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

৫ সাংবাদিককে নিজ কার্যালয়ে আটকে রাখলেন এসিল্যান্ড, জেলে পাঠানোর হুমকি

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
১৪ মার্চ ২০২৪, ২০:৪৮আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৪, ২০:৪৮

জমি খারিজ সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাওয়ায় পাঁচ সাংবাদিককে নিজ কার্যালয়ে আটকে রেখে জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন লালমনিরহাটের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল নোমান সরকার।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। ওই পাঁচ সাংবাদিককে আটকে রাখার প্রায় ৪০ মিনিট পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টি. এম. এ. মমিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে কার্যালয়ের গেটের তালা খুলে তাদের মুক্ত করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সেখানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতেও এসিল্যান্ড সাংবাদিকদের অপদস্থ করেন। এ সময় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে অবস্থান নিলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পরিস্থিতি শান্ত করেন এবং জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। সাংবাদিকসহ সবাই ঘটনাস্থল থেকে চলে যাওয়ার পর সবার শেষে ঘটনাস্থল ত্যাগ করা এক টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসনের মোটরসাইকেল আটকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন এসিল্যান্ড।

এ ঘটনার পর সাংবাদিকরা শহরের মিশন মোড়ে লালমনিরহাট-বুড়িমারী সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। দুপুর ২টার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টি. এম. এ. মমিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অভিযুক্ত এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে ধর্মঘট তুলে নেন সাংবাদিকরা।

সাংবাদিকরা জানান, সকাল থেকে এসিল্যান্ড অফিসের তিন জন অফিস সহকারী ভূমি সংক্রান্ত শুনানি করছিলেন। সেখানে এসিল্যান্ড উপস্থিত ছিলেন না। মাইটিভি ও ডেইলি অবজারভার পত্রিকার প্রতিবেদক মাহফুজ সাজু ওই শুনানির ভিডিও ধারণ করেন। এতে অফিস সহকারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে এসিল্যান্ডকে ডেকে আনেন। এসিল্যান্ড আসার পর মাহফুজ সাজু জানতে চান যে, এসিল্যান্ডের অনুপস্থিতিতে অফিস সহকারীরা ভূমি সংক্রান্ত শুনানি করতে পারেন কিনা। এই প্রশ্ন করায় এসিল্যান্ড ক্ষিপ্ত হন এবং তার নির্দেশে মাহফুজ সাজুকে আটকে রাখা হয়। এই খবর পেয়ে প্রেসক্লাব থেকে সাংবাদিক নিয়ন দুলাল, এসকে সাহেদ, ফারুক আহমেদ ও কাওছার আহমেদ ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরকেও আটকে রাখা হয়।

মাহফুজ সাজু বলেন, সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত খারাপ আচরণ করা হয় এসিল্যান্ড অফিসে। এ বিষয়ে তথ্য নিতে গিয়ে সত্যতা পাই। সেইসঙ্গে দেখতে পাই যে এসিল্যান্ডের অনুপস্থিতিতে শুনানি হচ্ছে। এ বিষয়ে তথ্য চাইতেই এসিল্যান্ড আমাকে এবং পরবর্তীতে আমার সহকর্মীদেরও আটকে রাখেন। এসিল্যান্ড সাংবাদিকদের সম্পর্কে খুবই অপ্রীতিকর মন্তব্য করেছেন। তিনি আমাদের জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন।

এশিয়ান টেলিভিশনের লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি নিয়ন দুলাল বলেন, এসিল্যান্ডের সঙ্গে সঙ্গে তার অফিসের সহকারীরাও আমাদের গালিগালাজ করেছেন। এডিসি রেভিনিউ আমাদের মুক্ত না করলে এসিল্যান্ড হয়তো এতক্ষণে আমাদের জেলে পাঠিয়ে দিতেন। তিনি বলছিলেন যে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে আমাদের কারাদণ্ড দেবেন।

দৈনিক কালবেলার লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি এসকে সাহেদ বলেন, এসিল্যান্ড খুবই বাজে আচরণ করেছেন। সাংবাদিক সম্পর্কে এত কুরুচিকর মন্তব্য একজন সরকারি কর্মকর্তা করতে পারেন, তা ভাবতেও পারিনি। সেবা নিতে আসা মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার তথ্য সংগ্রহ করায় তিনি সাংবাদিকদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

চ্যানেল আইয়ের ক্যামেরাপারসন আব্দুল মান্নান বলেন, আমার মোটরসাইকেলের সব কাগজপত্রই আছে। কিন্তু ঘটনার সময় সেগুলো সঙ্গে ছিল না। আমি এসিল্যান্ডের কাছে মাত্র ১০ মিনিট সময় চেয়েছিলাম কাগজগুলো আনাতে। কিন্তু তিনি সাংবাদিকদের ওপর ক্ষুব্ধ থাকায় আমাকে সেই ১০টা মিনিট সময়ও দেননি, পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।

এ ঘটনার পর সাংবাদিকরা শহরের মিশন মোড়ে লালমনিরহাট-বুড়িমারী সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন

এ ব্যাপারে লালমনিরহাট প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক এবং এটিএন বাংলা টেলিভিশন ও দৈনিক সমকালের জেলা প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। শনিবারের মধ্যে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আমরা আন্দোলনে যাবো।

সাংবাদিকদের আটকে গালিগালাজ ও জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে এসিল্যান্ড আব্দুল্লাহ আল নোমান সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এসব অভিযোগ পুরাপুরি সত্য নয়। একজন সাংবাদিক আমার অফিসে অন্যের কাজ নিয়ে এসেছিলেন। তখন আমি অফিসে ছিলাম না। অফিস সহকারী তাকে অপেক্ষা করতে বলেছেন। এতেই রেগে যান। সেইসঙ্গে তিনি অফিস সহকারীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন। পরে আমি ঘটনাস্থলে গেলে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন সাংবাদিকরা। তখন তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়েছে।’

ক্যামেরাপারসনের মোটরসাইকেল আটকে জরিমানা আদায়ের প্রসঙ্গে আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘কাগজপত্র দেখাতে না পারায় এক মোটরসাইকেল আরোহীকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছি।’

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টি. এম. এ. মমিন বলেন, সহকারী কমিশনারের অনুপস্থিতিতে অফিস সহকারীরা কোনোভাবেই জমির খারিজ শুনানি করতে পারেন না। বিষয়টি জেলা প্রশাসক খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন বলেছেন।’

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, ‘আমি পুরো ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

/এএম/ 
সম্পর্কিত
সড়ক নিরাপদ করতে প্রযুক্তিনির্ভর সমন্বিত সমাধান প্রয়োজন: মেয়র আতিক
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের নির্বিঘ্ন প্রবেশাধিকার দাবি ডিআরইউর
বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদকর্মীদের প্রবেশে বাধা: উদ্বিগ্ন টিআইবি
সর্বশেষ খবর
মেক্সিকোতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত অন্তত ১৮
মেক্সিকোতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত অন্তত ১৮
বরিশালে গরমে শ্রেণিকক্ষে ৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ
বরিশালে গরমে শ্রেণিকক্ষে ৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন নস্যাৎ সম্ভব না: দুদু
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন নস্যাৎ সম্ভব না: দুদু
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ