X
বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
১৯ আষাঢ় ১৪৩২
গ্রেফতার পিয়নের জবানবন্দি

শিক্ষা অফিসের সুপারভাইজারের নির্দেশে সরকারি বই পাচার, নেওয়া হয়নি ব্যবস্থা

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:০১আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:০১

শেরপুরে পুলিশের হাতে আটক হওয়া মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে বিতরণের সাড়ে ৯ হাজার বই বিক্রির উদ্দেশ্যে কুড়িগ্রামের রৌমারী থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। রৌমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার মুকতার হোসেনের নির্দেশে গোডাউন খুলে ট্রাকে বই তোলা হয়েছিল বলে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জানিয়েছেন গ্রেফতার অফিস সহায়ক (পিয়ন) জামাল উদ্দিন।

শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবায়দুল আলম এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

গত ২২ জানুয়ারি রাতে শেরপুর সদর উপজেলায় ট্রাকভর্তি বই জব্দ করে পুলিশ। সেখানে ২০২৫ সালে সরকারিভাবে বিতরণের জন্য বরাদ্দকৃত মাধ্যমিক পর্যায়ের অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ের ৯ হাজার ৬৭০ বই রয়েছে। বইগুলো রৌমারী থেকে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানায় পুলিশ।

বই উদ্ধারের ঘটনায় শেরপুর থানা পুলিশ বাদী হয়ে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ট্রাকচালক সজল মিয়া এবং বই পাচারের সঙ্গে থাকা মাইদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রৌমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহায়ক (পিয়ন) জামাল উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়।

এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রৌমারী উপজেলা প্রশাসন ও জেলা শিক্ষা বিভাগ। তদন্তে রৌমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের গোডাউন থেকে বই পাচারের সত্যতা পায় কমিটি।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন পিয়ন জামাল উদ্দিন

গত ২৩ জানুয়ারি রৌমারী থেকে পিয়ন জামাল উদ্দিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২৪ জানুয়ারি শেরপুর আদালতে হাজির করা হলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে বই পাচারে জড়িত থাকার কথা জানিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি।

শেরপুর থানা পুলিশ, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, জামাল উদ্দিন জবাবন্দিতে বই পাচারে জড়িত কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কামরুল ইসলাম, একাডেমিক সুপারভাইজার মুকতার হোসেন এবং মাইদুল ইসলাম রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে ঢাকার মাতুয়াইলে অবস্থিত রেজা প্রিন্টিং প্রেসের ম্যানেজার পদে কর্মরত মনির নামে এক ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে। মনির এবং মাইদুলের বাড়ি রৌমারীতে।

জবানবন্দিতে যা বলেছেন জামাল

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, আদালতে জবানবন্দিতে জামাল উদ্দিন বলেছেন, ‘গত ২০ জানুয়ারি রাতে একাডেমিক সুপারভাইজার মুকতার হোসেন তাকে (জামালকে) বিতরণের পর অবশিষ্ট থাকা বইগুলো গাড়িতে তুলে দিতে বলেন। এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার কামরুল ইসলামের সঙ্গে তার কথা হয়েছে বলে জামালকে জানান মুকতার হোসেন। মুকতারের কথামতো গোডাউনের দরজার তালা খুুলে দেন জামাল। মাইদুল ইসলাম শ্রমিক দিয়ে বইগুলো গাড়িতে তুলে নিয়ে যান।’

‘কেষ্ট বেটাই চোর’

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, রৌমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের গোডাউনে রাখা বই সংরক্ষণ ও বিতরণের দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মুকতার হোসেন, অফিস সহকারী আখিরুল ইসলাম এবং পিয়ন জামাল উদ্দিন। এর মধ্যে মুকতার হোসেন ছয় বছর ধরে, আখিরুল এক বছর ধরে এবং পিয়ন জামাল উদ্দিন প্রায় ২০ বছরের বেশি সময় ধরে রৌমারীতে কর্মরত। প্রাথমিক তদন্তে তাদের প্রত্যেকের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ মিলেছে। তাদের হেফাজত থেকে এবারই প্রথম নাকি আগেও সরকারি বরাদ্দের বই পাচার হয়েছে, তা নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ।

বইয়ের দায়িত্বে থাকা তিন কর্মচারীর মধ্যে শুধুমাত্র জামাল উদ্দিন গ্রেফতার হয়েছেন। একাডেমিক সুপারভাইজার মুকতার এবং অফিস সহকারী আখিরুল বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর। পুলিশও তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।

যা জানালেন মুকতার হোসেন

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে একাডেমিক সুপারভাইজার মুকতার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুলিশ এবং আমার বিভাগ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে। এ বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না। আমার নাম বললেই তো হবে না। সে (পিয়ন জামাল) কোনও লিখিত দেখাতে পারবে?’

ঘটনার দিন ২০ জানুয়ারি কর্মস্থল রৌমারীতে ছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মুকতার হোসেন বলেন, ‘হ্যাঁ, সেদিন কর্মস্থলে ছিলাম।’

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কামরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রৌমারীতে অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। বই চুরি ঘটনার আগে শুধু একদিন ১২ জানুয়ারি রৌমারীতে গিয়েছিলাম। ২২ জানুয়ারি বিষয়টি জানতে পারি। বইয়ের দায়িত্বে তিন জন ছিলেন। আমি কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট নই। তদন্তে সত্য বেরিয়ে আসবে।’

এখনও তদন্ত চলছে

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শেরপুর থানার এসআই নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জামাল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বই পাচারে যাদের নাম এসেছে, তাদের বিষয়ে এখনও তদন্ত চলছে। সার্বিক বিষয় জানিয়ে কুড়িগ্রাম শিক্ষা বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

‘বিষয়টি তদন্তাধীন। প্রিন্টিং প্রেসের কর্মচারী মনির পলাতক। তাকে গ্রেফতার করলে আরও কেউ জড়িত রয়েছে কিনা এবং এর আগে বই পাচার হয়েছে কিনা, তা জানা যাবে’ উল্লেখ করেন এই এসআই।

যা বললেন জেলা শিক্ষা অফিসার

কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার মো. শামসুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুলিশ বিষয়টির তদন্ত করছে। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না বলে জানতে পেরেছি। একাডেমিক সুপারভাইজার এবং অফিস সহকারী দায়িত্বে অবহেলার কথা স্বীকার করেছেন। তারা ক্ষমা চেয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এখনও কোনও নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।’

/এএম/
সম্পর্কিত
ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি, এপিবিএন সদস্যসহ গ্রেফতার ৭
গাইবান্ধায় গৃহবধূ হত্যা মামলায় পলাতক ৫ আসামি গ্রেফতার
আলোচিত ‘অপারেশন ঈগল হান্টের’ ঘটনায় সাবেক এসপি আসাদুজ্জামান রিমান্ডে
সর্বশেষ খবর
দালাই লামার উত্তরসূরি, চীন-ভারত সংঘাত আর একটি সোনার কৌটো
দালাই লামার উত্তরসূরি, চীন-ভারত সংঘাত আর একটি সোনার কৌটো
খেলাপিতে ধসে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বিপদে আমানতকারীরা
খেলাপিতে ধসে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বিপদে আমানতকারীরা
তৃতীয় রাউন্ডে উঠে ‘আরও ইতিহাস গড়ার’ প্রত্যয় জোকোভিচের
তৃতীয় রাউন্ডে উঠে ‘আরও ইতিহাস গড়ার’ প্রত্যয় জোকোভিচের
বার ভাঙচুর: সেই যুবদল নেতা বহিষ্কার
বার ভাঙচুর: সেই যুবদল নেতা বহিষ্কার
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
অনুদান কমিটি থেকে অভিনেত্রীর অব্যাহতি!
অনুদান কমিটি থেকে অভিনেত্রীর অব্যাহতি!
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
বিবিয়ানায় ফুরিয়ে আসছে গ্যাসের মজুত: শঙ্কার মুখে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা
বিবিয়ানায় ফুরিয়ে আসছে গ্যাসের মজুত: শঙ্কার মুখে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা