X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ধানের চেয়ে ঢেঁড়স চাষ লাভজনক!

হিমাদ্রি শেখর ভদ্র, সুনামগঞ্জ
১৬ জুন ২০১৯, ১৩:৫৪আপডেট : ১৬ জুন ২০১৯, ১৫:২১

ঘরে মজুত করে রাখা ধান ধানের দাম বাড়ার অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন হাওর পাড়ের কৃষকরা। এজন্য ঘরে ধান মজুত করে রেখেছেন সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার আলীপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম। তার মতো হাওর এলাকার লাখো কৃষক একই আশায় আছেন। ধানের দাম না পাওয়ায় হাওরের অনেকেই অন্য ফসল আবাদ করছেন। এমনই একজন সলুকাবাদ ইউনিয়নের জগন্নাথপুরের হানিফ মিয়া। তিনি বলেন, ‘গেলবার ধান কইরা মাইর খাইছি। এবার ধানের বদলে ঢেঁড়স আবাদ করছি। ৬ হাজার টাকা খরচ করে ১ বিঘা জমিতে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজার টাকার ঢেঁড়স বিক্রি করছি। আমি এখন থেকে ধান চাষ করবো না। এর চেয়ে ঢেঁড়স আবাদ লাভজনক।’

পলাশ ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের আব্দুল বারিক বলেন, ঘরে ধান থাকলেও বাজার করার মতো টাকা হাতে নেই। তাই এক মণ ধান বাজারে এনেছেন বিক্রি করতে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এক মণ ধানের দাম ৫০০-৫৫০ টাকা দিতে চায়। অথচ এই টাকা দিয়ে এক ব্যাগ বাজার করে বাড়ি নিতে পারেন না।

ঘরে মজুত করে রাখা ধান জগন্নাথপুর গ্রামের কৃষাণি কমলা খাতুন বলেন, ‘ঘরে চাইল ছাড়া আর কিছু নাই। নুন, তেল, হলদি, মরিচ, পান, সুপারি, কাপড়চোপড়সহ সংসারের সব বাজার সদাই ধান বিক্রি করে আনতে হয়। ছেলেকে এক মণ ধান বিক্রি করে সংসারের বাজার করতে পাঠিয়েছি। এক মণ ধান বেচলে পাওয়া যায় ৫০০ টাকা। এ  টাকার বাজারে ৭ দিন চালানো যায় না। বস্তা ভরে ধান নিয়ে বাজারে গেলেও ব্যাগ ভরে বাজার নিয়ে আসতে পারে না কেউ।’

বাজিতপুর গ্রামের ব্রজেন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘বাজারে শুধু ধানের দাম কম। অন্য সবকিছুর দাম অনেক বেশি। তাই বাজার করলেও ব্যাগ ভরে না।’

জগন্নাথপুর গ্রামের শুক্কুর বানু বলেন, ‘গেলবার এমন দিনে ৭০০-৭৫০ টাকায় প্রতিমণ ধান বিক্রি করেছি। এবার ৬০০ টাকার ওপরে দাম ওঠেনি। তাই ক্ষেত গিরস্তি কইরা এখন বাঁচা-মরা সমান লাগে।’

ঘরে মজুত করে রাখা ধান মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ধানের দর না থাকায় হালের একটি বলদ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে কামলা বিদায় করেছি। যদি ধান বিক্রি করে কামলা বিদায় করতে হতো, তাহলে আমার ১০০ মণ ধানের মধ্যে ৬০ মণ বিক্রি করে দিতে হতো।’

মিল মালিক সফর আলী বলেন, ‘কেউ এখন আর চাল কিনে খায় না। সবাই ঘরের ভাত খায়। সবাই ধান বিক্রি করতে চায়। কিন্তু ক্রেতার পরিমাণ কম। এসব কারণে স্থানীয় বাজারগুলোয় ধানের দাম উঠছে না।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে ২ লাখ ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছে ১৩ লাখ টন ধান।

বিক্রির জন্য বাজারে ধান নিয়ে এসেছেন কৃষকরা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে ৬ হাজার ৫০৮ টন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এখন পর্যন্ত জেলার ১২ এলএসডির মাধ্যমে ৫ হাজার ১২০ কৃষকের কাছ থেকে ২৫০ টন ধান কিনেছে সরকার।

জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ বলেন, এ বছর মিল মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তারা একটি খাতা মেনটেইন করে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনবে। তাহলে স্থানীয় বাজারগুলোয় ধানের দাম কিছুটা হলেও বাড়বে। 

/এসটি/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
অসংক্রামক রোগে মরছে ৭০ শতাংশ মানুষ, বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি
অসংক্রামক রোগে মরছে ৭০ শতাংশ মানুষ, বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
আরও তিনটি গ্রাম থেকে পিছু হটলো ইউক্রেনীয় সেনারা
আরও তিনটি গ্রাম থেকে পিছু হটলো ইউক্রেনীয় সেনারা
বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি নিতে আগ্রহী অস্ট্রিয়া
বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি নিতে আগ্রহী অস্ট্রিয়া
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ