X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

অনলাইনে উগ্রবাদী রচনা পড়ে সন্ত্রাসে জড়ান ফয়জুল

তুহিনুল হক তুহিন, সিলেট
২৬ এপ্রিল ২০২২, ১৭:৩০আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২২, ১৯:২১

ফয়জুল হাসান দেশ ও আন্তর্জাতিক কোনও সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য হিসেবে আদালতে প্রতীয়মান হয়নি। তবে শিক্ষাবিদ, লেখক এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) সাবেক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল হত্যাচেষ্টা মামলার এই প্রধান আসামি ইন্টারনেটে বিভিন্ন সাইট থেকে জিহাদি আর্টিকেল, বই ডাউনলোড করে সবসময় পড়তেন। সেইসঙ্গে বিভিন্ন উগ্রবাদী বক্তার বক্তব্য শুনে জিহাদি তথা সন্ত্রাসী কাজে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন বলে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল হত্যাচেষ্টা মামলার প্রায় চার বছর পর মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। সব আসামিদের উপস্থিতিতে সিলেটের সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক নুরুল আমীন বিপ্লব এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ফয়জুলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

একইসঙ্গে তার বন্ধু সোহাগ মিয়াকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এদিকে, এই মামলা থেকে চার জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন- ফয়জুলের বাবা মাওলানা আতিকুর রহমান, মা মিনারা বেগম, মামা ফজলুর রহমান ও ভাই মো. এনামুল হাসান।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ‘কিছু স্বার্থান্বেষী গ্রুপ কৌশলে ভার্চুয়াল জগতে তাদের উগ্রবাদী সন্ত্রাসী মতবাদ ছড়িয়ে, বেহেশতে যাওয়ার শর্টকাট প্রলোভন দেখিয়ে তরুণ প্রাণে সন্ত্রাসবাদের বীজ বপন করছে। ফলে উচ্চ শিক্ষিত ও প্রযুক্তিতে দক্ষ তরুণরা সহজেই তাদের পাতানো ফাঁদে পা দিচ্ছেন। সাইবার জগতে এসব উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড উৎসাহ প্রদানকারী বিভিন্ন সাইট বা গ্রুপকে চিহ্নিত করে তাদের প্রচারিত তথ্যের প্রবাহ বন্ধ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও জোরালো ও কার্যকর পদ্ধতি নেওয়া জরুরি। হামলার নৃশংসতা এবং বীভৎসতার মাধ্যমে লেখক, মুক্তবুদ্ধি, প্রগতিশীলতা, বিজ্ঞান, সমাজে প্রচলিত ধর্মীয় কুসংস্কার বিষয়ে যারা বক্তব্য রাখেন তাদের মধ্যে ভীতি, শঙ্কা ছড়িয়ে দেওয়াই মূল উদ্দেশ্য ছিল।’

আদালত আরও বলেন, ‘ফয়জুল হাসান মুফতি জসীম উদ্দিন আর রাহামীর লেকচার, বিভিন্ন বই, অডিও, ভিডিও ক্লিপ দেখে জিহাদি ও উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ হন। শিক্ষকতার বাইরেও ড. জাফর ইকবাল বিজ্ঞান ও শিশুতোষ গ্রন্থ রচনা করে জাতির মনন গঠনে ভূমিকা পালন করে চলেছেন। মামলার প্রধান আসামি জাফর ইকবালের লেখা শিশুতোষ বই ‘‘ভূতের বাচ্চা সোলায়মান’’র বিরুদ্ধে কাল্পনিক অভিযোগ তুলে অর্থাৎ মুসলমানদের প্রিয় নবী সোলায়মানকে (আ.) অপমান ও কটাক্ষ করা হয়েছে বলে ধারণা পোষণ করে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা অনুসারে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে  হত্যার চেষ্টা করে। এই হামলায় ছাত্র, শিকক্ষ, জনতাসহ দেশবাসীকে হতভম্ব করেছে। ইসলাম ধর্মের প্রকৃত  মর্মবাণীকে না বুঝে নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করাকে পুণ্যের কাজ মনে করে ফয়জুল এই বর্বর হামলা চালায়।’

বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি মমিনুর রহমান টিটু জানান, গত ১০ মার্চ চাঞ্চল্যকর এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়। এই মামলায় মোট ৫৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এরপর ২১ ও ২২ মার্চ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। মামলার ছয় জন আসামির সবাই বর্তমানে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচ জন জামিনে থাকলেও যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন তাদের কারাগারে পাঠান বিচারক। আমরা আদালতের এই রায়ে সন্তুষ্ট।’

আসামী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোতাহের আলি বলেন, ‘আমরা রায়ের সব কাগজপত্র পাওয়ার পর উচ্চ আদালতে আপিল করবো। আমরা মক্কেল ফয়জুল ও সোহাগ ট্রাইব্যুনালে ন্যায় বিচার পাননি বলে আমাকে জানিয়েছেন।’

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩ মার্চ বিকালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবি) ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে একটি অনুষ্ঠান চলাকালে ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলা হয়। ফয়জুল হাসান নামে এক মাদ্রাসাছাত্র ছুরি দিয়ে তার মাথা ও ঘাড়ে উপর্যুপরি আঘাত করে। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্র-শিক্ষকরা হামলাকারী ফয়জুলকে হাতেহাতে ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেন। পরে জাফর ইকবালকে আহত অবস্থায় প্রথমে নগরের এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এই ঘটনায় শাবি রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে পরদিন মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা করেন। ২০১৮ সালের ১৬ জুলাই ফয়জুলসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জালালাবাদ থানার তৎকালীন ওসি শফিকুল ইসলাম। ওই বছরের ৪ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়।

/এফআর/
সম্পর্কিত
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
দাফনের ১৫ দিন পর তোলা হলো ব্যাংক কর্মকর্তার মরদেহ
হাসপাতালের ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১০ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
সর্বশেষ খবর
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলাতে চান ম্রুনাল
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলাতে চান ম্রুনাল
পিএসজির অপেক্ষা বাড়িয়ে দিলো মোনাকো
পিএসজির অপেক্ষা বাড়িয়ে দিলো মোনাকো
অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে আটকা পড়েছে শতাধিক পাইলট তিমি
অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে আটকা পড়েছে শতাধিক পাইলট তিমি
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি