X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিয়ে রেজিস্ট্রি নিয়ে দুই কাজীর টানাটানি

ছনি চৌধুরী, হবিগঞ্জ
২৭ মার্চ ২০২৩, ১০:১৪আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৩, ১১:৫৭

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে নিকাহ রেজিস্ট্রি করা নিয়ে দুই রেজিস্টারের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। এই দ্বন্দ্ব ছড়িয়েছে দুই ইউনিয়নে। ফলে নিকাহ ও তালাক রেজিস্টার বিষয়টি নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দেওয়া হলেও বিষয়টি সুরাহা হচ্ছে না।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নবীগঞ্জ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের নিকাহ ও তালাক রেজিস্টারের জন্য ১৩ জন কাজী দায়িত্ব পালন করছেন। মুসলিম বিবাহ এবং বিবাহ বিচ্ছেদ (নিবন্ধন) বিধিমালা ২০০৯ অনুযায়ী একজন কাজী দায়িত্বরত এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন। দায়িত্বরত এলাকার বাইরে বিবাহ-তালাক রেজিস্ট্রি করা নিয়ম পরিপন্থি ও আইনের লঙ্ঘন।

উপজেলার ২ নম্বর বড় ভাকৈর (পূর্ব) ইউনিয়নের কাজীগঞ্জ বাজারে ২০০৪ সালে ময়মনা কমিউনিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন আছকির মিয়া। দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে ময়মনা কমিউনিটি সেন্টারের ট্যাক্স ২ নম্বর বড় ভাকৈর (পূর্ব) ইউনিয়নে পরিশোধ করে আসছেন তিনি। এ ছাড়া ইউনিয়ন থেকে সংগ্রহ করা ট্রেড লাইসেন্স প্রতি বছর নবায়নও করা হয়। প্রতি বছর উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক হাট বাজার ইজারা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে কাজীগঞ্জ বাজারকে ২ নম্বর বড় ভাকৈর (পূর্ব) ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেখানো হয়। এই ইউনিয়নের নিকাহ ও তালাক রেজিস্টার (কাজী) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কাজী মাওলানা গুলজার আহমেদ। ময়মনা কমিউনিটি সেন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ায় ২ নম্বর বড় ভাকৈর (পূর্ব) ইউনিয়নের বিবাহ-তালাক রেজিস্ট্রি করে আসছেন কাজী মাওলানা গুলজার আহমেদ।

৩ নম্বর ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নে নিকাহ ও তালাক রেজিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কাজী ছালিম উদ্দিন। ২০১৩ সালে ময়মনা কমিউনিটি সেন্টার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের একটি মৌজার অন্তর্ভুক্ত দাবি করে বড় ভাকৈর (পূর্ব) ইউনিয়নে নিকাহ ও তালাক রেজিস্টার কাজী মাওলানা গুলজার আহমেদকে বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রিতে বাধা দেন ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের কাজী ছালিম উদ্দিন। বিষয়টি সমাধানে চেষ্টা করে জাতীয় কাজী সমিতি নবীগঞ্জ উপজেলা শাখা। কিন্তু সমাধান আসেনি।  

পরে ২০১৩ সালে কাজী ছালিম উদ্দিন বাদী হয়ে হবিগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে দুটি মামলা করেন। মামলায় কাজী ছালিম উদ্দিন ময়মনা কমিউনিটি সেন্টার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের অন্তভুক্ত উল্লেখ করেন। কমিউনিটি সেন্টারে বিবাহ রেজিস্ট্রিতে বড় ভাকৈর (পূর্ব) ইউনিয়নে কাজী মাওলানা গুলজার আহমেদের বিরুদ্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

২০১৮ সালে আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নুরুল হুদা চৌধুরী কাজী ছালিম উদ্দিনের দুটি মামলা খারিজ করে দেন। পরে জেলা জজ আদালতে কাজী ছালিম উদ্দিন আপিল করেন। কিন্তু কিছুদিন পর মামলা পরিচালনা করবেন না মর্মে আপিল তোলে নেন।

২০২২ সালের ১০ অক্টোবর বড় ভাকৈর (পূর্ব) ইউনিয়নে কাজী মাওলানা গুলজার আহমেদ ময়মনা কমিউনিটি সেন্টারে একটি বিবাহ রেজিস্ট্রি করার সময় ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের কাজী ছালিম উদ্দিন বাঁধা দেন এবং হুমকি দেন। এ নিয়ে ২৩ অক্টোবর ইউএনও বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন কাজী মাওলানা গুলজার আহমেদ। অভিযোগের তদন্ত শেষে ইউএনও ইমরান শাহরীয়ার কাজী ছালিম উদ্দিনকে ময়মনা কমিউনিটি সেন্টারে বিবাহ রেজিস্ট্রির নির্দেশ দেন।

গত ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর আদালতের আদেশ অমান্য করার অভিযোগ এনে ইউএনও ইমরান শাহরীয়ারের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন কাজী মাওলানা গুলজার আহমেদ। কিন্তু তিন মাস অতিবাহিত হলেও এর কোনও সুরাহা হয়নি। অন্যদিকে অভিযোগ দেয়ার বিষয়টি জানা নেই বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
 
কাজী মাওলানা গুলজার আহমেদ বলেন, ‌‌‌‌‌‌‌‌'ইউএনও স্যার আদালতের আদেশ অমান্য করেছেন। আমি এতদিন এই কমিউনিটি সেন্টারে নিকাহ রেজিস্ট্রি করেছি এখন জোর করে বাধা দেওয়া হচ্ছে।'

কাজী ছালিম উদ্দিন বলেন, ‌‌‌‌‌‌‌‌'আমি বৈধ কাজী হিসেবে তাকে বাঁধা দিয়েছি। প্রশাসন তদন্ত করে পেয়েছেন ময়মনা কমিউনিটি সেন্টার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নে অবস্থিত তাই আদেশ আমার পক্ষে আসার পরও সেই কাজী গোলজার জোর করে এখানে এসে বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে চান। তাই আমরা বাধা দিয়েছি।'

আগনা গ্রামের রহিম উল্লাহ বলেন, ‘এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই ইউনিয়নের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে যেকোনো মুহূর্তে সংঘর্ষ হতে পারে।’

এ প্রসঙ্গে বড় ভাকৈর (পূর্ব) ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খালেদ মোশারফ বলেন, ‘কাজীগঞ্জ বাজার ২ নম্বর বড় ভাকৈর (পূর্ব) ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত, ২০০৪ সালে ময়মনা সেন্টার প্রতিষ্ঠার পর থেকে ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স এই ইউনিয়ন থেকেই নবায়ন করা হয়ে আসছে। আমাদের ইউনিয়নের প্রায় সব বিয়ে এই সেন্টারে হয়। আদালতের আদেশ থাকার পর ইউএনও সাহেব আবার কীভাবে এ বিষয়ে আদেশ দেন বিষয়টি বোধগম্য নয়। এখানে ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের কাজী বিবাহ রেজিস্ট্রি করলে ইউনিয়নবাসী চরম দুর্ভোগে পড়বেন।’

ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নোমান আহমদ বলেন, ‌‘ময়মনা সেন্টারের জায়গাটি ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের আগনা মৌজায় পড়েছে। জায়গাটি যেহেতু ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের একটি মৌজার অন্তর্ভুক্ত তাই ইনাতগঞ্জের কাজী সাহেব ওই সেন্টারে বিবাহ রেজিস্ট্রি করবেন মর্মে ইউএনও সাহেব একটি আদেশ দিয়েছেন।’

ইউএনও ইমরান শাহরীয়ার বলেন, ‌'আমি আদালতের কোনও আদেশ অমান্য করিনি। আদালত আদেশ দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবেন, সেই আলোকে আমরা তদন্ত করে আদেশ দিয়েছি। এখন কাজী গোলজার আহমদ বিভিন্ন জায়গায় আদালতের ভুল তথ্য দিচ্ছেন। প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করছেন আমরা তার নিকাহ রেজিস্ট্রি বাতিলের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি।'

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, ‘এ নিয়ে কোনও আবেদন আমার কাছে দেওয়া হয়েছে বলে আমার মনে নেই। যদি তাদের কাছে আবেদনের কপি থাকে তারা যেন আমাকে দেয়, আমি পরবর্তী ব্যবস্থা নেবো।’

/এসএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা