মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ‘জঙ্গি আস্তানা’ সন্দেহে শুক্রবার (১১ আগস্ট) রাত থেকে ঘিরে রাখা বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এখন পর্যন্ত চার নারীসহ ১০ জনকে আটক করেছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। শনিবার (১২ আগস্ট) সকাল ৭টায় ওই বাড়িতে অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলার সংস্থাটি।
এর আগে, রাত সাড়ে ৮টা থেকে উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা টাট্টিউলি গ্রামের বাইশালীবাড়ি এলাকার ওই বাড়িটি ঘিরে রাখে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই এলাকায় সিটিটিসির সোয়াট টিম ‘অপারেশন হিল সাইড’ নামে অভিযান চালাচ্ছে।
কুলাউড়া থানা ওসি আব্দুস ছালেক জানান, ওই বাড়িতে শনিবার সকাল পর্যন্ত নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে চার জন পুরুষ ও ছয় জন নারী। তবে আটকের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
জেলা পুলিশ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযানে কোনও হতাহতের ঘটনা ছাড়াই চার পুরুষ ও ছয় নারী জঙ্গিকে আটক করা হয়। এ সময় সঙ্গীয় তিন শিশুকে হেফাজতে নেওয়া হয়। অভিযানে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সার্বিক সহায়তা প্রদান করছে। সেখান থেকে ২.৫ কেজি বিস্ফোরক, ৫০টি ডেটোনেটর, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল, কমান্ডো বুটসহ অন্যান্য প্রশিক্ষণ সরঞ্জামাদি, ছুরি-রামদাসহ অন্যান্য ধারালো অস্ত্র এবং নগদ তিন লাখ ৬১ হাজার টাকা ও স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযান চলমান রয়েছে।
আটক অভিযুক্তরা হলেন- সাতক্ষীরার তালার উপজেলার নলতা গ্রামের ওমর আলীর ছেলে শরীফুল ইসলাম (৪০), তার স্ত্রী আমিনা বেগম (৪০), তাদের মেয়ে হাবিবা বিনতে শফিকুল (২০), কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার কালনার আবুল কাশেমের ছেলে হাফিজ উল্লাহ (২৫), নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানা এলাকার রসুলপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে খায়রুল ইসলাম (২২), তার স্ত্রী মেঘনা (১৮), সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার মাইজবাড়ী গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে রাফিউল ইসলাম (২২), পাবনার আটঘরিয়ার শ্রীপুর গ্রামের আব্দুস ছাত্তারের স্ত্রী শাপলা বেগম (২২), নাটোরের চাঁদপুর গ্রামের সোহেল তানজীম রানার স্ত্রী মাইশা ইসলাম (২০) ও বগুড়ার সারিয়াকান্দির নিজবলাই গ্রামের সুমন মিয়ার স্ত্রী সানজিদা খাতুন (১৮)।
জেলা পুলিশ সুপার মো. মনজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, অভিযান চলছে। অভিযান শেষে গণমাধ্যমকে বিস্তারিত জানানো হবে।
কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদ বলেন, ‘পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামের বাইশালীবাড়ি এলাকায় টিলার ওপর সম্প্রতি বাড়ি নির্মাণ করে কিছু লোক বসবাস করছেন। নবনির্মিত ওই বাড়িটি জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে রাত থেকে ঢাকা থেকে আসা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি টিম ঘিরে রেখেছে। তাদের সহযোগিতায় ঘটনাস্থলে মৌলভীবাজার জেলা ও কুলাউড়া থানা পুলিশ রয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তার জন্য ওই এলাকা কর্ডন করে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কাউকে ওই এলাকায় যেতে দেওয়া হচ্ছে না।’
পূর্ব টাট্টিউলি বাজারের চা দোকানদার শফিক মিয়া জানান, ওই বাড়ির বাসিন্দারা প্রায় দুই মাস আগে এখানে এসে নতুন বাড়ি করেছেন। তার দোকানে এসে অল্প বয়সের দুই পুরুষ মানুষ নিয়মিত চা খেতেন। তারা বলেছিল, তাদের বাড়ি বগুড়ায়। নদী ভাঙনে তাদের বাড়ি চলে গেছে, তাই এখানে এসে বসতি করেছেন। আরও পরিবার আসবে।