অপ্রয়োজনে ভবন নির্মাণ না করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) ইউজিসি অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) মোতাবেক কর্মসম্পাদন, প্রমাণ সংরক্ষণ ও কমিশনে পাঠানো সংক্রান্ত কর্মশালায় এ আহ্বান জানানো হয়।
ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের কর্মশালায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক, প্রশাসনিক ও আবাসিক ভবন নির্মাণের বিষয়টি প্রয়োজন ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেনে। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নির্দিষ্ট সময়ে ও পরিকল্পনামাফিক বাস্তবায়ন করতে হবে। এ ধরনের প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে সম্পন্ন করতে তদারকি জোরদার করবে ইউজিসি।
কোনও কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জন্য নির্মিত ভবনের অনেকাংশেই খালি পড়ে থাকে উল্লেখ করে আবু তাহের বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক ভবন ও হল নির্মাণ করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, কোনও কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জন্য নির্মিত বহুতল ভবনের অধিকাংশ ফ্ল্যাটই খালি পড়ে আছে। অন্যদিকে আবাসিক সংকটের কারণে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বাইরে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। এমতাবস্থায়, যে ভবনটি প্রকৃত প্রয়োজন সেটি উন্নয়ন প্রকল্পে যুক্ত করতে হবে। অপ্রয়োজনে ভবন নির্মাণ করা হলে শুধু রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হবে।
যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক ভবন খালি পড়ে রয়েছে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন করে উন্নয়ন প্রকল্পে একই ধরনের ভবন নির্মাণের বিষয়টি যুক্ত না করার পরামর্শ দেন তিনি।
উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীর গতি নিয়ে অধ্যাপক মো. আবু তাহের বলেন, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকল্পের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে বারবার তারা সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করছেন। এতে সরকারের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।
উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মকর্তারা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এসব অনিয়মের তদন্ত অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
নব-প্রতিষ্ঠিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবনের নকশা নান্দনিক করা এবং পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস প্রবাহের ব্যবস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুম এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে যেন এসি লাগবেই। সেখানে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন রাখা হচ্ছে না। এতে করে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ছে এবং সরকারের খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সড়ক বার বার সংস্কার প্রসঙ্গে প্রফেসর আবু তাহের বলেন, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রাস্তা বছরে তিনবার রাস্তা সংস্কার করারও উদাহরণ আছে। নিম্নমানের নির্মাণ সমগ্রী ব্যবহারের ফলেই এ ঘটনা ঘটছে।
এছাড়া, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ যাতে ইন্টারেক্টিভ হয় সেভাবে তৈরি করা, পরীক্ষার হল ও লেকচার থিয়েটার রাখা, পাঠাগার ভবন ছোট ও ই-রিসোর্স সমৃদ্ধ করা, ল্যাবরেটরি আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর করা, পদবি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রাধিকারের ভিতিত্তে আসবাবপত্র পরিবর্তন থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন অধ্যাপক আবু তাহের।
কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ও যথাসময়ে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। সঠিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা না গেলে বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের অগ্রগতি ব্যহত হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে নেতিবাচক খবর যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানান তিনি।
ইউজিসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক ও এপিএ’র ফোকাল পয়েন্ট গোলাম দস্তগীরের সঞ্চালনায় কর্মশালায় আলোচক ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও এপিএর ফোকাল পয়েন্ট নূর-ই আলম এবং ইউজিসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক রবিউল ইসলাম। প্রশিক্ষণে ১৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক ও ইউজিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নেন।