X
সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩
১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩০

অবৈধ নিয়োগ প্রমাণের পরও বেতন-ভাতা পাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক

এস এম আববাস
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:০০আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:১০

প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ অবৈধ প্রমাণিত হয়েছে ২০২০ সালে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বেতন-ভাতার সরকারি অংশ গ্রহণ করছেন নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল কুদ্দুছ। শুধু তাই নয়, বৈধ শিক্ষকদের এমপিও না দিয়ে জাল সনদধারীদের এমপিওভুক্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তিনি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কথা না বলে প্রথমে পাশ কাটাতে চেষ্টা করেন প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল কুদ্দুছ। নিয়োগ অবৈধ প্রমাণিত হওয়ার পরও কীভাবে বেতন-ভাতার সরকারি অংশ পাচ্ছেন জানতে চাইলে ওই প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমি প্রধান শিক্ষক হিসেবে সাত বছর ধরে চাকরি করছি।‘

অভিযোগ প্রসঙ্গে আরও জানতে চাইলে মো. আব্দুল কুদ্দুছ পাল্টা প্রশ্ন করেন— আপনি কোথায় থাকেন? ‘ঢাকায় থাকি’ শোনার পর তিনি বলেন, ‘আপনার যদি দরকার হয় তাহলে আপনি আসেন, সাক্ষাতে কথা হবে। আমি ব্যস্ত আছি এখন।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মো. আব্দুল কুদ্দুছ সহকারী শিক্ষক হিসেবে নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন ১৯৯৪ সালের ১৫ জুন। সহকারী শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্তও হয়েছেন একই দিনে। যোগদানের দিন এমপিওভুক্ত হওয়ার বিষয়টি নিয়েও রহস্য দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক না থাকাকালে প্রধান শিক্ষক হওয়ার জন্য কৌশলের আশ্রয় নেন তিনি। ম্যানেজ করেন ওই সময়ের ম্যানেজিং কমিটিকে।

এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবৈধভাবে নিয়োগ নেন এবং প্রধান শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্তও হন। এমপিওভুক্ত হওয়ার পর থেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে সরকারি বেতন-ভাতার অংশ গ্রহণ করছেন।

এই ঘটনার পর প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের নিয়োগ জালিয়াতি নিয়ে অভিযোগ উঠে ২০১৮ সালে। অভিযোগের তদন্ত শুরু করে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর। ওই সময়ের  শিক্ষা পরিদর্শক এ এইচ এম জাহাঙ্গীর আলম ও শিক্ষা পরিদর্শক মো. মুকিব মিয়া তদন্ত করে ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর প্রতিবেদন দাখিল করেন।

প্রতিবেদনে তিনজন শিক্ষকের জাল সনদের প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি। এসব শিক্ষকের বেতন-ভাতা স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া এমপিওভুক্তথাকাকালে সরকারি বেতন-ভাতার অংশ হিসেবে নেওয়া অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত নেওয়া সুপারিশ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

অন্যদিকে প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ অবৈধ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে— প্রধান শিক্ষক না থাকলে সহকারী প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব পালন করবেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক না থাকলে সিনিয়র শিক্ষক দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু বিধি তোয়াক্কা না করে চতুর্থ নম্বর সিনিয়র শিক্ষক মো. এসলাম উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করা হয় এবং তাকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে পরে শিক্ষক মো. আব্দুল কুদ্দুছকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মো. আব্দুল কুদ্দুছ প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নিতে প্রথমে চতুর্থ নম্বর সিনিয়র শিক্ষক মো. এসলাম উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত করা হয় এবং পরে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে তিন নম্বর সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে নিজে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ নেন। নিয়োগ পাওয়ার পর আগের নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সুযোগ না দিয়ে হয়রানি করছেন তিনি। তার হয়রানির শিকার হয়ে আট বছরের বেশি সময় এমপিও-বঞ্চিত হয়েছেন সহকারী শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামান।

এদিকে, পরিদর্শন ও নিরীক্ষণ অধিদফতরের তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, এমপিওবঞ্চিত সহকারী শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামানসহ ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ সালে চার জন শিক্ষক নিয়োগ পান। মো. মনিরুজ্জামান শূন্যপদে নিয়োগ পান ২০১৩ সালের ৩০ নভেম্বর। এর মধ্যে শুধু একজন শিক্ষক এমপিওভুক্ত হতে পেরেছেন। এতে করে শিক্ষকরা পেশায় মনোযোগ হারাচ্ছেন। এছাড়া শিক্ষক সংকট তো রয়েছেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মনিরুজ্জামান এমপিওভুক্ত হতে পারেননি কিছু শিক্ষকের জাল সনদে চাকরি পাওয়া ও এমপিওভুক্তির কারণে। সনদ জালিয়াতির অভিযোগে শিক্ষকরা বরখাস্ত হলেও এসব শিক্ষকদের এমপিও কোড বহাল আছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ থাকলেও বরখাস্ত শিক্ষকদের এমপিও কোড বহাল রয়েছে অদৃশ্য কারণে। আর জালিয়াত শিক্ষকদের এমপিও কোড বর্তমান থাকলেও প্রধান শিক্ষক এসব শিক্ষকদের এমপিও কোড স্থায়ীভাবে বাতিলের আবেদন জানাচ্ছে না।

বঞ্চিত শিক্ষক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘তদবির করার সক্ষমতা আমার নেই। দীর্ঘ দিন বিনা বেতনে চাকরির কারণে আমি সংসার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। দুই থেকে তিন জন শিক্ষকের ক্লাস নিতে প্রধান শিক্ষক আমাকে বাধ্য করেন।’

সহকারী শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামানের এমপিওভুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে এর আগে  রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন, দুইজন শিক্ষকের এমপিও কোড বিদ্যমান থাকায় এমপিও দেওয়ার সুযোগ নেই। জাল সনদের কারণে দুই জন শিক্ষকের এমপিও স্থগিত থাকলেও এমপিও কোড ডিলিট হয়নি। আর সে কারণে এমপিওভুক্তি সম্ভব হচ্ছে না। এমপিও কোড ফাঁকা হলে এমপিওভুক্তি পাবেন।

জালিয়াতি করা শিক্ষকদের নামে চালু থাকা এমপিও কোড বাতিলের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল কুদ্দুছ এর আগে বলেছিলেন, ‘আমি চেষ্টা করছি।’

 তবে এখন পর্যন্ত ওই প্রধান শিক্ষক এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নেননি।

আরও পড়ুন:

ভুয়া সনদে এমপিওভুক্ত তিনজন, বৈধ শিক্ষক বঞ্চিত আট বছর ধরে

 /এমএস/
সম্পর্কিত
খালেদা জিয়ার কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার চার্জ শুনানি পেছালো
বাণিজ্যিক ভবনের পার্কিংয়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা, অনুমতি পেলো কীভাবে?
রংপুর-বুড়িমারী মহাসড়ক সম্প্রসারণের কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ
সর্বশেষ খবর
গাইবান্ধার ৫ আসনে মনোনয়নপত্র বাতিল ১৬, স্থগিত ১৮
গাইবান্ধার ৫ আসনে মনোনয়নপত্র বাতিল ১৬, স্থগিত ১৮
মুন্সীগঞ্জে তিন আসনে বর্তমান এমপিসহ ৮ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল
মুন্সীগঞ্জে তিন আসনে বর্তমান এমপিসহ ৮ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল
পিরোজপুরের ৩ আসনে বাদ পড়েছেন ১০ প্রার্থী
পিরোজপুরের ৩ আসনে বাদ পড়েছেন ১০ প্রার্থী
সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল
সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল
সর্বাধিক পঠিত
একবছরে এক শিক্ষকের ১০২টি গবেষণাপত্র, প্রতিটি তৈরিতে লেগেছে তিন দিন!
একবছরে এক শিক্ষকের ১০২টি গবেষণাপত্র, প্রতিটি তৈরিতে লেগেছে তিন দিন!
কক্সবাজার সৈকতে ভেসে আসা ২ লাশের পরিচয় মিলেছে
কক্সবাজার সৈকতে ভেসে আসা ২ লাশের পরিচয় মিলেছে
আজকের আবহাওয়া: গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউমে’ পরিণত
আজকের আবহাওয়া: গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউমে’ পরিণত
ক্রেডিট কার্ডের টাকা না দেওয়ায় ডলি সায়ন্তনীর মনোনয়নপত্র বাতিল
ক্রেডিট কার্ডের টাকা না দেওয়ায় ডলি সায়ন্তনীর মনোনয়নপত্র বাতিল
নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ব্যাপক মিথ্যাচার করা হচ্ছে: শিক্ষামন্ত্রী
নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ব্যাপক মিথ্যাচার করা হচ্ছে: শিক্ষামন্ত্রী