X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

এদেশের মানুষ পাগল, আন্তরিকতায় এবং গানে: জয়তি চক্রবর্তী

ওয়ালিউল মুক্তা
০৮ মে ২০১৭, ০০:০৮আপডেট : ০৮ মে ২০১৭, ১৭:২০

জয়তি চক্রবর্তী জয়তি চক্রবর্তী। রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী হিসেবে সমাদৃত। কলকাতার আধুনিক গানে এখন অন্যতম আস্থার নামও তিনি। এ পর্যন্ত ১৪টি অ্যালবাম প্রকাশ পেয়েছে তার। যার  প্রায় অর্ধেক কবিগুরুর গান। সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছিলেন গানের দাওয়াতে। আর বাংলা ট্রিবিউনের আমন্ত্রণে ৬ মে দুপুরটা কাটিয়েছেন কার্যালয়ে এসে। গল্পের ছলে শৈশব আর বর্তমানের সময় দিয়ে বেঁধেছিলেন কথামালা। কবিগুরুর ১৫৬তম জয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ এই কথামালার অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো এখানে-

জয়তি চক্রবর্তী বাংলা ট্রিবিউন: প্রথমেই জানতে চাই, আপনার রবীন্দ্রভাবনা নিয়ে। রবীন্দ্রনাথ আপনাকে কীভাবে ভাবায়?
জয়তি চক্রবর্তী: ভীষণ। ভীষণভাবে ভাবায়। আমি রবীন্দ্রপ্রেমী। শুধু যে গান করার জন্য তা নয়। রবীন্দ্র সাহিত্য নিয়মিত পড়ি। বলা যায়, বুঁদ হয়ে থাকি।
বাংলা ট্রিবিউন: আমরা শুধু আপনার গানটিই শুনি। এর বাইরে আপনাকে জানার সুযোগ তো কম। তাই এবার শুরুর গল্পটাও শুনতে চাই।
জয়তি চক্রবর্তী: সুপ্রিয়া ঘোষের হাত ধরেই আমার সারেগামা শেখা। এরপর শুভংকর বন্দোপ্যাধায়ের কাছে রবীন্দ্রনাথের গান, সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের কাছে খেয়াল শেখা। সনাতন বন্দোপাধ্যায়ের কাছে দীর্ঘদিন খেয়াল শিখেছি। শেখা হয়েছে সুভাষ চৌধুরী, জটিলেশ্বর মুখোপ্যাধায়ের কাছে আধুনিক গান, বিমান ঘোষের কাছে নজরুলেরও তালিম নেওয়া হয়েছে।
বাংলা ট্রিবিউন: আমরা ইউটিউবের কল্যাণে আপনাকে আধুনিক ও রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী হিসেবেই জানি। নজরুলের গান নিয়ে আপনার চর্চার কথা সেভাবে আসেনি।
জয়তি চক্রবর্তী: এখন খুব একটা গাই, তাও না কিন্তু।
জয়তি চক্রবর্তী বাংলা ট্রিবিউন: আচ্ছা, আমরা ফিরে আসি শুরুতে।
জয়তি চক্রবর্তী: গানের বিষয়ে আমি পারিবারিক অনুপ্রেরণার কথা প্রায় সময়ই বলি। মা ভীষণ ভালো গান গাইতেন। যা হয় আরকি, যৌথ  পরিবার মানে অনেক বড় সংসার। সে জন্য সেটা চালিয়ে যাওয়া হয়নি। আমার বাবা মাউথ ওয়ার্গান বাজাতেন। তিনি কোনওদিন কারও কাছে এটা শিখেননি। কিন্তু খুব ভালো বাজাতেন। এটা একটা বিশাল বড় ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল আমার জন্য। আমাদের পরিবারে আমি প্রথম এভাবে পেশাদার শিল্পী হিসেবে গান বাজনা করছি। তারাই আমার বড় অনুপ্রেরণা।
বাংলা ট্রিবিউন: কোনও ঘটনা কি অনুপ্রেরণা হিসেবে আসতে পারে? যা আপনার সংগীত জীবনকে ঘুরিয়ে দিয়েছে।
জয়তি চক্রবর্তী: বেশ মজার ঘটনা আছে। আমাদের পাড়ায় বড় জলসা হতো। আমি তো কলকাতার হাওড়ায় বড় হয়েছি। সেখানে প্রতি বছরই এমন অনুষ্ঠান হয়। গরমের ছুটিতে একবার সবাই মিলে গান-বাজনা করছিলো। আমার মা পুরো বিষয় লিড করছিলেন, গান তোলা থেকে শুরু করে সব কিছু। তখন আমাদের ওখানের একটি বড় পত্রিকা সে অনুষ্ঠানের ছবি ও লেখা ছেপেছিল। সেখানে সবার নাম ছিল, ছবি ছিল। কিন্তু আমার নাম বা ছবি ছাপা হয়নি। অদ্ভুতভাবে আমি সে অনুষ্ঠানে কবিতা ও নাচ করেছিলাম। খুব অভিমান হয়েছিল তখন। এরপর থেকে আমার ধারণা হয়- নাচ বা আবৃত্তি করলে পত্রিকায় নাম আসে না। আমি তখন অনেক ছোট তো, পাঁচ বছর হবে। তাই হয়তো এমন ভাবনা এসেছিল। কিন্তু ঘটনাটি আমার মধ্যে প্রভাব ফেলেছিল। এরপর আমি গানের দিকে ঝুঁকে পড়ি। মনে হতে থাকে গান গাইলেই বোধহয় পত্রিকায় নাম ও ছবি ছাপা হয়।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনার প্রথম দুটো অ্যালবাম আধুনিক গানের। পরের প্রায় সব রবীন্দ্রনাথের অ্যালবাম? কিন্তু আপনি তো রবীন্দ্রসংগীতেই বেশি তালিম নিয়েছেন।
জয়তি চক্রবর্তী: ‘দূরের পাড়ি’ (২০০২) আমার প্রথম অ্যালবাম। এরপর আরও একটি আধুনিক গানে অ্যালবাম করি। তারপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান করেছি। এটা নিয়ে আলাদা কোনও পরিকল্পনা ছিল না। আর এখন আরও একটি অ্যালবামের কাজ করছি। আধুনিক গানের হিসেবে এটি আমার ৮ নম্বর অ্যালবাম। সব মিলেয়ে খান ১৪ হবেই। তাই রবীন্দ্র বলুন আর আধুনিক- দুটোতেই আমি কাজ করে যাচ্ছি।
বাংলা ট্রিবিউন: নতুন অ্যালবামটি প্রসঙ্গে একটু বলবেন?
জয়তি চক্রবর্তী: নতুন অ্যালবামটি নচিকেতা চক্রবর্তীর সুরে। যার সব কথা লিখেছেন বাংলাদেশের রাসেল (গীতিকবি জুলফিকার রাসেল)। মূলত রাসেলই পুরো বিষয়টি দেখভাল করেছে। তার সঙ্গে আমার পরিচয় অন্যভাবে। আমি আগে রাসেলের গানগুলো পড়তাম। তার গানের যে মিষ্টি ভাব, সেটার সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলাম। সেভাবেই ধরে নিয়েছিলাম, সে বোধহয় বেশ আন্তরিক ধরনের। আর গান করার পর তার সঙ্গে আমার সামনাসামনি দেখা। একবারে মাই ডিয়ার, সবাইকে আপন করে নেয়।
জয়তি চক্রবর্তী বাংলা ট্রিবিউন: আর একটা বিষয়, অ্যালবাম করার সময় যখন ভাবা হচ্ছিল, কে গাইবে গানগুলো- তখন নচিকেতাই নাকি আপনার নাম প্রস্তাব করে। জীবনমুখী বাংলা গানের এ দিকপালের কাছ থেকে এমন প্রচ্ছন্ন সমর্থন কেমন লাগে?
জয়তি চক্রবর্তী: আসলে নচি দার সঙ্গে খুব যে কাজ করেছি বা হৃদ্যতা আছে- তা নয়।  আমার ওভাবে যোগাযোগ হয় না। ২০০০ সালের দিকে আমার সঙ্গে পরিচয়। আমি একটি  অনুষ্ঠানের প্রতিযোগী ছিলাম। নচি দা তার হোস্ট ছিলেন। সেবারই প্রথম তিনি আমার গান শোনেন। নতুন অ্যালবামের কৃতিত্ব রাসেলের। এর আগে ওদের তিনজনের কৃতিত্বে কাজ হয়েছে। নচি, রাসেল, ও দেবাশীষ একসঙ্গে কাজ করেছেন। এবারও তারা কাজ করছেন। আমার পরম সৌভাগ্য যে নচি দা আমার নাম বলেছেন। এ অ্যালবামে গান থাকছে ৮টি। এটিতে রাসেলের কথা, নচি দার সুর ও দেবাশীষ গাঙ্গুলির অ্যারেঞ্জমেন্ট। সব গানের কাজ শেষ। সত্যি বলতে, এখন একক অ্যালবামে ৮টা গানে ৮ রকম করাটা খুব কঠিন। এ অ্যালবামে সে বৈচিত্র রাখা হয়েছে। এর কৃত্বিত তাদের। গানের কথা আমাকে নাড়িয়েছে। আমি ওকে (জুলফিকার রাসেল) চিনেছি ওই লাইনগুলো থেকে। গানের কথাগুলো শুনলে মনে হবে আপন। সুর তো অসাধারণ, সঙ্গে রয়েছে সংগীতায়োজন।
বাংলা ট্রিবিউন: অ্যালবামের দিক দিয়ে আপনার শুরু ২০০২ সালে। প্রায় ১৫ বছর ধরে আপনি গান করছেন। তখন আর এখনকার মধ্যে পার্থক্য আছে নিশ্চয়ই। এখন টেকনোলজির অতিরিক্ত ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া যায়।
জয়তি চক্রবর্তী: টেকনোলজির সুফল তো থাকবেই। আগে আমি যখন গান গাইতাম তখন, একসঙ্গে সবাই বসে করা হতো। তার মধ্যে একটা আনন্দ ছিল। এখন ব্যস্ততা বেড়েছে। তাই সবাই মিলে বসা হয় না। রাসেল যখন কলকাতায় যায় আমি তখন হয়তো ব্যস্ত থাকি। দেখা হয় না। সে গান পাঠায়। দেবাশীষ দা (দেবাশীষ গাঙ্গুলি) অ্যারেঞ্জ করে আমাকে পাঠায়। প্রাথমিকভাবে আমরা সবাই ফোনে ফোনে যোগাযোগ করি। আমাদের ব্যস্ততার জন্যও হয়তো এভাবে এখন কাজ হচ্ছে। তাই আমি ভালোমন্দের কথা বলতে চাই না। আমি বলতে চাই, যেকোনও কাজ অন্তর থেকে হওয়াটা জরুরি। অনেক গান একসঙ্গে বসেও ভালো হয় না। আমি কিন্তু পিচ কারেশন জাতীয় টেকনোলজিকে সাপোর্ট করি না, যেখানে বেসুরোকে সুর দেওয়া যায়।
বাংলা ট্রিবিউন-এর সম্পাদক ও গীতিকবি জুলফিকার রাসেলের সঙ্গে জয়তি চক্রবর্তী বাংলা ট্রিবিউন: এবার একটু বসত-সংসারের কথা শুনতে চাই।
জয়তি চক্রবর্তী: সংসারে আমার স্বামী ও ১১ বছরের সন্তান আছে। আমার শ্বশুর, শাশুড়ি আছেন। মা, দাদা-বৌদি রয়েছেন।
বাংলা ট্রিবিউন: মানুষ জয়তি আসলে কেমন, কতটা রোমান্টিক। রবীন্দ্রনাথের গানের মতোই কী?
জয়তি চক্রবর্তী: এটা হয়তো মানুষ বলবে। তবে আমি বললে বলব, আমি ভীষণ রোমান্টিক। আমি আকাশে ভাসা মানুষের মতো। মাঝে মাঝে মাটিতে পা দিতে ইচ্ছে হয় না। ভাসতে ইচ্ছে হয়, উড়ে বেড়াতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। সংসারে যাঁতাকলে পড়লে যা হয়।
বাংলা ট্রিবিউন: আর রোমান্টিকতার উদাহরণ কী দেবেন?
জয়তি চক্রবর্তী: তাহলে অনেক আগের একটা কথা বলতে হয়। আমার স্বামীর সঙ্গে আমার পরিচয় সূত্র গানের হাত ধরে। যদিও তিনি একেবারেই গানের মানুষ নন। কিন্তু একটা সূত্র আছে। একবার একটি পূজো বাড়িতে আনতাকাসারি খেলছিলাম। টানা আড়াই দিন ধরে এটি চলে। কারণ আমরা কেউ হারছিলাম না। খাওয়া-দাওয়ার ছুটিতে যেতাম। আবার খেলা শুরু হতো। এভাবেই গানে গানে আমাদের পরিচয়। তখন আমি স্কুলে পড়ি আর তিনি কলেজে। আমাদের ৭ বছরের দেখা সাক্ষাৎ। এরপর আমাদের বিয়ে। পরিচয় পর্বটি বেশ অন্যরকম।
জয়তি চক্রবর্তী বাংলা ট্রিবিউন: বাংলাদেশে কতবার হলো আসা হয়েছে। কেমন সে অভিজ্ঞতাগুলো?
জয়তি চক্রবর্তী: তাও তো ১৬ থেকে ১৭বার হবেই। ২০০৯ সালে এসেছিলাম বোধহয়। এরপর নিয়মিত, গান সূত্রে। এদেশের মানুষ পাগল, সেটা আন্তরিকতায় ও গানে। আমরা যারা গান-বাজনা করি তারা তাড়িয়ে তাড়িয়ে এমন গান বোঝার মানুষকেই খুঁজে। গান-বাজনা করে যে শান্তি বা আরাম তা কিন্তু এখানকার শ্রোতাদের কাছেই পেয়েছি।
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

/এম/এমএম/

সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
ঢাকায় পুনর্মিলন সেরে ক্যাঙ্গারুর দেশে...
ঢাকায় পুনর্মিলন সেরে ক্যাঙ্গারুর দেশে...
ঢাকার জ্যাম আর গরম নিয়ে প্রেমের গান!
ঢাকার জ্যাম আর গরম নিয়ে প্রেমের গান!
তামান্নার শুভ সূচনা
তামান্নার শুভ সূচনা
ওটিটিতে মঞ্চনাটক ‘নেতা যে রাতে নিহত হলেন’
ওটিটিতে মঞ্চনাটক ‘নেতা যে রাতে নিহত হলেন’
আমিরাতের গোল্ডেন ভিসা পাচ্ছেন শাকিব খান!
আমিরাতের গোল্ডেন ভিসা পাচ্ছেন শাকিব খান!