X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১
৩ পেরিয়ে বাংলা ট্রিবিউন

এক বিকেলে জয়ার ছাদে

বন্যা মির্জা
১৩ মে ২০১৭, ০০:০৯আপডেট : ১৩ মে ২০১৭, ১৪:০০

বন্যা মির্জা ও জয়া আহসান। ছবি- সাজ্জাদ হোসেন ‘ইশ্, আমাদের সব কথা, আড্ডাগুলো যদি জমা থাকত! আমরা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে আবার মেলে দেখতাম।’  ঠিক এভাবেই কথা মেলে ধরা হয়েছিল, সেটা নিকট ওপারে, কলকাতা শহরে। জয়া আহসানের সঙ্গে সাউথ সিটি মলে, কফি-আড্ডায়। তখনই ঠিক করে নিই আমরা ঢাকায় ফিরে আবারও বসব। যেখানে বুনন হবে আমাদের আড্ডা সংরক্ষণের উদ্যোগ। খোলা আকাশের নিচে ঝকঝকে একটা বিকেলে জয়ার ছাদে হলো আমাদের সেই প্রাণের আড্ডা।  যার অংশবিশেষ সংরক্ষিত করলাম এখানে-
বন্যা মির্জা: দুই দেশের নিরন্তর আসা-যাওয়া, কেমন লাগে  তোমার?
জয়া আহসান: আসলে অদ্ভুত অনুভূতি হয়। কলকাতায় অনেকদিন আছি। ওখানেও আমার নিজের মতো অভ্যাস আছে। আবার কখনও কোনও এক সকালে ঘুম ভেঙে নিজেকে আবিষ্কার করি ঢাকায়। এই যে জোন চেঞ্জ হয়, এই অনুভ‚তিটা খুব অদ্ভুত। এই অনুভবটা ঠিক বোঝানোর নয়।
আমি যখন কোথাও থাকি, সেখানেই থাকি। সেখানে থাকার সাথে সাথে কিছু জিনিস খুব নিজের হয়ে ওঠে, আসবাবও। আমি সেসব জিনিসও খুব মিস করি, যেসব কিছুর সাথে আমার বসবাস। কখনও হয়তো তা মানুষের থেকেও বেশি।
বন্যা মির্জা: বাংলাদেশের সঙ্গে পার্থক্য তো আছেই কাজের,  সেটা কেমন? জয়া আহসান। ছবি- সাজ্জাদ হোসেন
জয়া আহসান: বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নটা অনেক বড়, কিন্তু গল্প বলায় কোথাও একটা অসামঞ্জস্যতা আছে। তাই বিচ্ছিন্ন মনে হয়। কিন্তু কলকাতায় তারা যা পারেন ততটুকুই দেখান। প্রপার এক্সিউশন হয়। কলকাতা থেকে অনেক ভালো গল্পে আমি কাজ করেছি বাংলাদেশে। কিন্তু এখানকার গল্পটা শেষ পর্যন্ত সেভাবে দাঁড়ায় না। কলকাতার ছবিতে সেই ছন্দপতনগুলো সচরাচর হয় না।  
বন্যা মির্জা: তোমার কেমন মনে হয় দুই জায়গার মিডিয়ার পার্থক্য কেমন, ধরো প্রিন্ট মিডিয়া?
জয়া আহসান: সাক্ষাৎকারের ক্ষেত্রে আমি বলব- যা বলি  তেমন করেই ওরা লেখে। আমি ওদের ছবির সমালোচনা করলে তা ওরা নিতে পারে। আবার আমাদের ছবির ভালোমন্দও বলতে পেরেছি। কিন্তু সবসময় বাংলাদেশে এতটা অকপট থাকা যায় না। কিছু বললেই অনেক সময়  দেখা যায় মানুষ তা ঠিকমত নিতে পারে না।
বন্যা মির্জা: ছবি করার ক্ষেত্রে কী কী দেখ, ভাবনাটা কেমন থাকে?
জয়া আহসান: অবশ্যই ডিরেক্টর, গল্প এবং আমার চরিত্রটা আমি কীভাবে করব তা নিয়ে। যে চরিত্রগুলো করি তার জন্য খুব পরিশ্রম করতে হয়, সময় লাগে।
বন্যা মির্জা: সব ডিরেক্টর কি অভিনয়কে সমানভাবে গুরুত্ব  দেন? নাকি প্রোডাকশনের নানান দিক নিয়েও তিনি ভাবেন?
জয়া আহসান: না, সবাই তা করেন না। ডিরেক্টর ছবিটি আঁকেন, আবার সব দিকে তাঁর খেয়াল রাখা লাগে। দিনের  শেষে ছবির যে দর্শন তিনি তৈরি করতে চান, তা যদি তিনি মানুষকে বোঝাতেই না পারেন তাহলে তো ছবিটা ছবি হয়ে ওঠে না। তখন ছবিটা বিক্ষিপ্ত লাগে।
বন্যা মির্জা: বাংলাদেশে প্রি-প্রোডাকশনে অনেকে খুব ভালো করে কাজ করলেন, তাতেও কি আসলে তার পক্ষে সম্ভব একটি পূর্ণ ছবি নির্মাণ? নাকি কিছু ত্রুটি থেকেই যায়?
জয়া আহসান: না মানে আসলে অনেক কিছুরই তো অভাব আছে। একটা মেকআপ ডিপার্টমেন্ট নেই ঠিকঠাক। থাকলেও তারা আধুনিক উপস্থাপনা করে না। দুর্বল কস্ট্যুম। অ্যাডে হয়তো এসব আছে, কিন্তু অ্যাড তো সিনেমা নয়। সিনেমা হলো সিনেমা। ফলে প্রি-প্রোডাকশনে ভালো হলেও তার পক্ষে এসব সাপোর্ট ছাড়া ছবি ভালো করে তোলা কঠিন। তবু বাংলাদেশে অনেকেই এই সীমিত পরিস্থিতির মধ্যেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
বন্যা মির্জা: বাজেট নিয়ে বল তো! সবাই বলেন বাজেট নেই বলে ভালো ছবি বানাতে পারেন না।
জয়া আহসান: হ্যাঁ কী অদ্ভুত! ছবি বানাতে টাকা তো লাগেই। কিন্তু এত টাকা লাগে না। কম টাকায়ও ছবি হয়।
বন্যা মির্জা: ইন্ডিপেনডেন্ট ছবি বা মিডল ছবি- এই ধরনের ছবিই বেশি করো তাই তো?
জয়া আহসান: হ্যাঁ, তাই-ই। আমি তো এই কাজটাই করি। অভিনয়টাই আমার পেশা। তবে এই ছবিগুলোতে বাজেট খুব কম থাকে। সে ক্ষেত্রে আমাকে তো কাজটা করেই যেতে হয়, চলতে পারতে হয়, তাই না?
বন্যা মির্জা: বাংলাদেশের লোকজনের একটা অভিযোগ আছে যে, তুমি কলকাতায় বেশি কাজ করো, সে কারণে তোমাকে দেশে বেশি পাওয়া যায় না- তুমি কী বলবে?
জয়া আহসান: এমন অভিযোগ থাকা উচিত নয়। আমি তো গত বছর, এ বছর মিলিয়ে বাংলাদেশে অনেকগুলো ছবি করেছি- ‘পুত্র’, ‘খাঁচা’, ‘পেয়ারার সুবাস’, ‘মেসিডোনা’, ‘বিউটিসার্কাস’ এবং ‘দেবী’। একটা বিষয় বলতে চাই, যখন আমাকে কলকাতায় আমন্ত্রণ জানানো হয় সেটা আমার ও দেশের জন্য সম্মানের। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিউজ মিডিয়া খুব সংকীর্ণ কথাবার্তা লেখে। সহকর্মীরাও বলেন কম- বেশি। তাতে অসম্মান হয়। যখন সাকিব আল হাসানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়, তখন কিন্তু সবাই সম্মানের সঙ্গেই বিবেচনা করেন, তাই না? আমি বলবো, এটা পরিষ্কারভাবে জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশন। জয়া। ছবি- সাজ্জাদ হোসেন
বন্যা মির্জা: নতুন ছবি নিয়ে বলো।
জয়া আহসান: ‘খাঁচা’ ছিল চার পৃষ্ঠার একটা গল্প, একটা ছবি হয়ে গেল। অসাধারণ! সকলেই খুব ভালো অভিনয় করেছেন। আর ‘পেয়ারার সুবাস’! আতিক যখন গল্পটা শেয়ার করল, আমি খুবই এক্সাইটেড হয়েছি। আতিক একা কোনোকিছুর সাপোর্ট ছাড়া একটানে ছবিটা শেষ করে ফেলল। আতিক আসলে দুর্দান্ত পরিচালক। ‘খাঁচা’ ছবিটি হাসান আজিজুল হককে ট্রিবিউট করা। ছবিটি দেখে তিনি আমাকে ফোন করেছিলেন। প্রশংসাও করেছেন। অভিনেতা হিসেবে আসলে আর কীইবা চাইবার আছে! আমাদের আড্ডা তারপরও চলছিল। শিল্প, দর্শন, নানা অনুভব। পরেরবার দেখা হওয়া অবধি আরও কিছু প্রসঙ্গ শিকেয় তুলে রাখলাম। জয় হোক জয়ার!
লেখক: অভিনেত্রী
/এমএম/

সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
স্বর্ণপামে ৯ বিচারক: সর্বকনিষ্ঠ আদিবাসী লিলি, আছেন বন্ডকন্যাও
কান উৎসব ২০২৪স্বর্ণপামে ৯ বিচারক: সর্বকনিষ্ঠ আদিবাসী লিলি, আছেন বন্ডকন্যাও
কানাডার স্টেডিয়ামে রেকর্ড গড়লেন দিলজিৎ
কানাডার স্টেডিয়ামে রেকর্ড গড়লেন দিলজিৎ
আট গল্পের প্রদর্শনী ‘অল দ্যাট ওয়েদারস’
আট গল্পের প্রদর্শনী ‘অল দ্যাট ওয়েদারস’
অপু-বুবলীর ‘কথাযুদ্ধ’ চলমান, মাঝে শাকিবের বিয়ে গুঞ্জন!
অপু-বুবলীর ‘কথাযুদ্ধ’ চলমান, মাঝে শাকিবের বিয়ে গুঞ্জন!
ইরফান খান: জীবনের মোড় ঘুরেছিল ২০০ রুপির অভাবে!
প্রয়াণ দিনে স্মরণইরফান খান: জীবনের মোড় ঘুরেছিল ২০০ রুপির অভাবে!