X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আবদুল জব্বারকে শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধা বৃহস্পতিবার

বিনোদন রিপোর্ট
৩০ আগস্ট ২০১৭, ১৪:৪৬আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০১৭, ১৯:৪৮

আবদুল জব্বার (ছবি: সংগৃহীত) স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা আবদুল জব্বারকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে। বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) সকাল ১১টা থেকে দেশের সবস্তরের মানুষ এখানে তার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করবেন। এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। সংগঠনটির সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আবদুল জব্বারের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তবে তাকে কোথায় সমাহিত করার হবে তা এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, বুধবার (৩০ আগস্ট) রাতের মধ্যে দাফনের স্থান নির্ধারণ করা হবে। এর আগ পর্যন্ত মরদেহটি রাখা হচ্ছে বারডেম হাসপাতালের হিমাগারে। 
দরাজ কণ্ঠের শিল্পী আবদুল জব্বার বুধবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। মৃত্যুর পরপরই তাকে রাজধানীর ইস্কাটনের নিজ বাসায় নেওয়া হয়েছিল। সেখানে ভিড় জমায় শোকার্ত মানুষেরা। 
এদিকে, আবদুল জব্বারের মৃত্যুতে দেশীয় সংগীতাঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারা মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রী তার শোকবার্তায় বলেন, ‘একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট এই শিল্পীর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে গাওয়া গান ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করার সঙ্গে বাড়িয়েছিল মনোবল।’
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন আবদুল জব্বার। হারমোনিয়াম কাঁধে কলকাতায় বাংলাদেশি শিবির ও মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পগুলোতে গান শুনিয়ে উদ্বুদ্ধ করেছেন মানুষকে। তাঁর গানে অনুপ্রাণিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন অনেকেই। এছাড়া প্রখ্যাত ভারতীয় কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে মুম্বাইয়ের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরিতে কাজ করেন তিনি।

মুক্তিসেনাদের রণাঙ্গনে উৎসাহ দিতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে আবদুল জব্বার গেয়েছেন ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’সহ অংসখ্য গান। পথে পথে গণসংগীত গেয়ে পাওয়া ১২ লাখ টাকা তিনি দান করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ তহবিলে।

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন গোলাম কুদ্দুছ (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন) দীর্ঘদিন ধরে কিডনি, হৃৎপিন্ড, প্রস্টেটসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগেছেন আবদুল জব্বার। এ কারণে গত ৩১ মে থেকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। গঠন করা হয়েছিল চিকিৎসা সহায়তা কমিটি। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে সবার চেষ্টা।

বিএসএমএমইউর কেবিন ব্লকের ৬২০ নম্বর কক্ষে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ডা. দেবব্রত বণিকের তত্ত্বাবধানে ছিলেন আবদুল জব্বার। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে সংকটাপন্ন অবস্থা ছিল তার। রক্তচাপ দ্রুত নেমে যাওয়ায় মৃত্যুর কাছে হার মানতে হলো যোদ্ধা মানসিকতার এই মানুষটিকে।

১৯৩৮ সালে ৭ নভেম্বর কুষ্টিয়ায় জন্মেছিলেন আবদুল জব্বার। ১৯৫৮ সাল থেকে তৎকালীন পাকিস্তান বেতারে গান গাইতে শুরু করেন তিনি। ১৯৬২ সালে চলচ্চিত্রে প্রথম গান গাওয়ার সুযোগ আসে তার কাছে। ১৯৬৪ সালে জহির রায়হান পরিচালিত পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম রঙিন ছবি ‘সংগম’-এর গানে কণ্ঠ দেন। একই বছর থেকে তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে নিয়মিত গাইতেন তিনি।

সংগীত জীবনে ছয় হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন আবদুল জব্বার। এর মধ্যে কালজয়ী হয়ে আছে ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘ওরে নীল দরিয়া’, ‘তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়’, ‘এক বুক জ্বালা নিয়ে বন্ধু তুমি’, ‘পীচঢালা এই পথটারে ভালোবেসেছি’, ‘বন্ধু তুমি শত্রু তুমি’ প্রভৃতি। বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক (১৯৭৩), একুশে পদক (১৯৮০) ও স্বাধীনতা পদকসহ (১৯৯৬) অনেক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।

ব্যক্তিজীবনে তিনবার বিয়ে করেন আবদুল জব্বার। তার প্রথম স্ত্রী হালিমা জব্বার একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাদের দুই ছেলে মিথুন জব্বার ও বাবু জব্বার এবং মেয়ে মুনমুন জব্বার। দ্বিতীয় স্ত্রী শাহীন জব্বার ছিলেন গীতিকার। তার তৃতীয় স্ত্রী ডলি জব্বার বাংলাদেশ বেতারের একজন কর্মকর্তা।

/এম/জেএইচ/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
বোনকে নিয়ে সনু নিগমের প্রথম গান!
বোনকে নিয়ে সনু নিগমের প্রথম গান!
বলিউডে কোণঠাসা প্রিয়াঙ্কা!
বলিউডে কোণঠাসা প্রিয়াঙ্কা!
একসঙ্গে এই অভিনেতারা...
একসঙ্গে এই অভিনেতারা...
শিল্পীদের সমস্যাগুলো সংসদে চিহ্নিত করতে চাই: ফেরদৌস
শিল্পীদের সমস্যাগুলো সংসদে চিহ্নিত করতে চাই: ফেরদৌস
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…