X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

তারেক মাসুদের জীবনে এস এম সুলতানের ছায়া

আফতাব হোসেন
১৩ আগস্ট ২০১৮, ১০:৩৩আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০১৮, ১৫:৩২

এস এম সুলতান ও তারেক মাসুদ। ছবি- সংগৃহীত ‘মানুষের শেকড় সেখানেই, যেখানে সে বসবাস করে। আর সেখানেই সে ফেরে। মাঝে রয়ে যায় শুধু পথ ও পথের যাত্রা’- প্রসূন রহমান পরিচালিত ‘ফেরা’ প্রামাণ্যচিত্রে এভাবেই শেকড় ও বাংলার গ্রামে ফেরার কথা বলেছিলেন তারেক মাসুদ। এক্ষেত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি সুলতানের (এস এম সুলতান) চোখ দিয়েই বাংলাদেশের গ্রাম ও গ্রাম-বাংলাকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেছি।’
বাংলাদেশের অন্যতম সফল নির্মাতা প্রয়াত তারেক মাসুদের চলচ্চিত্রগুলোতে বারবার ফিরে এসেছে শেকড়ের সন্ধান। যেমন- ‘মাটির ময়না’য় আমরা দেখি, বাহাসের মধ্য দিয়ে ব্যক্তি ও সৃষ্টিকর্তার সন্ধানের মাধ্যমে নিজেকে খোঁজা। একইভাবে ‘অন্তর্যাত্রা’য় শিরিন ও তার ছেলের নিজেদের জীবনকে নতুন করে আবিষ্কার অথবা ‘রানওয়ে’তে দিনশেষে মায়ের কাছে রুহুলের অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন।
প্রতিটি চলচ্চিত্রকে আলাদাভাবে বিচার করলে নিজের শেকড়ের কাছে ফিরে আসার ব্যাপারই পরিলক্ষিত হয় সবসময়। নির্মাতা তারেক মাসুদকে নিয়ে লিখতে গেলে যেমন ক্যাথরিন মাসুদের কথা চলে আসে, তেমনই তার চলচ্চিত্র নির্মাণের পেছনের ভাবনা নিয়ে কিছু লেখার ক্ষেত্রে ‘সুলতান’ ছাড়া তা অসম্পূর্ণ।
তারেক মাসুদ। ছবি- সংগৃহীত। চলচ্চিত্রকর্মী তারেক মাসুদ থেকে চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদকে আলাদা করেছে তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘আদম সুরত’। প্রায় সাত বছর ধরে চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের সঙ্গে থেকে ছবিটি নির্মাণ করেন তিনি। তখন শিল্পী সুলতানের নির্মাণপূর্ব শর্ত ছিল, তার জীবন নিয়ে নয়, তার ক্যানভাসে আঁকা বাংলার গ্রাম, মানুষ ও নৈসর্গিক বিষয়গুলো হতে হবে মুখ্য। আর চিত্রশিল্পী এখানে হবেন গৌণ। শিল্পী হিসেবে সুলতান নিজেকে সফল মনে করতেন তখনই যখন তার আঁকা ছবি দেখে গ্রামের একজন কৃষক বলবেন, ‘আমার মাচার লাউ কিংবা আমার হালের বলদ।’
সুলতানের চোখ দিয়ে বাংলার মানুষ ও জীবনের সন্ধান দেখেন তারেক মাসুদ। এর মাধ্যমে তিনি খুঁজে পান গহীন বাংলার মেলা ও সংস্কৃতি। রাতভর শুনেছেন বিজয় সরকারের গান, যা কখনও আমরা জাতীয় পর্যায়ে দেখিনি, শুনিনি। অথচ বিজয় সরকারের বাড়িতে গিয়ে তারেক মাসুদ দেখেছেন তার জনপ্রিয়তা। অদেখা অচেনা এই আমাদের মতোই তারেক মাসুদ যখন সুলতানের সঙ্গে বাংলার গ্রামকে আবিষ্কার করছিলেন, তখনই তার মধ্যে তৈরি হয় নিজেকে খুঁজে পাওয়ার তাড়না।

বাড়িতে এস এম সুলতান

‘মাটির ময়না’য় তারেক মাসুদ বারবার ফিরে গেছেন তার ছোটবেলায়। এ ছবিতে ফিরে এসেছে তার শৈশবকে প্রভাবিত করা মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মাদ্রাসার জীবন। আমরা দেখেছি পারিবারিক জীবনে তার সেই সময়কার স্মৃতি ও প্রভাবগুলো। যেখানে সঠিক চিকিৎসার অভাবে একজন বোন হারানো ভাইয়ের আর্তনাদ কিংবা লালবাগের মাদ্রাসায় কাটানো শৃঙ্খলাবদ্ধ কঠোর জীবনযাপনকে খুঁজে পাই আমরা।

তারেক মাসুদের এই ফেরা শুধু ‘মাটির ময়না’, ‘অন্তর্যাত্রা’ কিংবা ‘রানওয়ে’র গল্পেই নয়; তার চলচ্চিত্রগুলোর আবহসঙ্গীতে গ্রাম-বাংলার লোকসঙ্গীতের ব্যবহারেও তা খুঁজে পাই। নির্মাতা তারেক মাসুদের নির্মাণগুলো সত্যিকার অর্থেই আমাদেরকে নিয়ে যায় জীবনের শেকড়ের কাছে। যেখানে কাজের সন্ধানে ঘুরে বেড়ানো রুহুলের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পায় অনেক তরুণ।

তারেক মাসুদ। ছবি- সংগৃহীত সবশেষে বলি, তারেক মাসুদের অসমাপ্ত একটি প্রামাণ্যচিত্রের কথা। এর মাধ্যমে নিজের গ্রাম ও এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে ফিরে গিয়েছিলেন তিনি। যেখানে এখনও অব্যক্ত রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের অনেক ইতিহাস। প্রায় ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজটি করছিলেন তিনি।

তারেক মাসুদকে আমরা বারবার ফিরে যেতে দেখি তার শেকড়ের সন্ধানে, যেখানে প্রতিটি অংশেই আমরা খুঁজে পাই শিল্পী সুলতানের ছায়া। এজন্যই হয়তো ‘আদম সুরত’-এর নির্মাণ নিয়ে তিনি বলেছিলেন, “সুলতানের ছায়া আমার জীবনে, আমার কাজে, আমার মৃত্যুতে।”

লেখক আফতাব হোসেন

লেখক: চলচ্চিত্র সংগঠক; প্রভাষক, সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগ (ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি)

/জেএইজ/এম/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
প্রেক্ষাগৃহ থেকে না নামতেই উঠলো পাঠ্যসূচিতে!
প্রেক্ষাগৃহ থেকে না নামতেই উঠলো পাঠ্যসূচিতে!
গানে গানে সরকারের সমালোচনা, ইরানি গায়কের মৃত্যুদণ্ড
গানে গানে সরকারের সমালোচনা, ইরানি গায়কের মৃত্যুদণ্ড
ঢাকাই নির্বাক ছবির মস্কো জয়, যেমনটা বললেন নির্মাতা
ঢাকাই নির্বাক ছবির মস্কো জয়, যেমনটা বললেন নির্মাতা
ফুরফুরে মেজাজে পান্নু
ফুরফুরে মেজাজে পান্নু