বাংলাদেশে চাকমা ভাষায় নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘মাই বাইসাইকেল’ দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে। ছবিটির পরিচালক অং রাখাইন অভিযোগ করলেন কালক্ষেপণের। জানালেন, বেশ কয়েকটি কারণ দেখিয়ে এটি ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে।

এর মধ্যে অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আপত্তি। এছাড়াও পরিচালক অভিযোগ করছেন যে, চলচ্চিত্রটি অবাণিজ্যিকভাবে প্রদর্শনকে তারা ভিন্ন চোখে দেখছেন।

এদিকে পাল্টা অভিযোগ রয়েছে বিষয়টি নিয়ে। সেন্সর বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ছবির পরিচালক তার ‘মর থেঙ্গারি’ বা 'আমার বাইসাইকেল' চলচ্চিত্রটি কোনওরকম অনুমতি ছাড়াই দেশে প্রদর্শন করেছেন। এ নিয়ে তদন্ত চলছে। আর এ কারণেই সেন্সর প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা।

চাকমা ভাষার প্রথম এ ছবিটির সেন্সরে আটকে থাকা নিয়ে এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের কথা উঠেছে। সোমবার বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক একটি জার্নালে খবর প্রকাশ হয়। আর আজ (মঙ্গলবার) বিষয়টির বিশদে লিখেছে বিবিসি বাংলা।
পুরো বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা চাইতে অংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা নিয়ে কথা হওয়াটা স্বাভাবিক। তারা নানা কারণ দেখিয়ে ছয় মাস ধরে এটি আটকে রাখছে। কোনও ‍সিদ্ধান্তে আসছে না।’

সেন্সর বোর্ডের অভিযোগ সম্পর্কে অংয়ের বক্তব্য, ‘ছবিটি সেন্সর বোর্ডে জমা দেওয়ার বেশ কিছুদিন পর বোর্ড আমাকে একটি চিঠি পাঠায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ছবিটি নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি চিঠির মাধ্যমে তাদের কাছে আপত্তি জানিয়েছে। সেনাবাহিনীর চিঠির কোনও অনুলিপি আমার কাছে পাঠানো হয়নি। এছাড়া সেন্সর বোর্ড জানিয়েছে, তাদের অনুমতি ছাড়া আমি কেন দেশের মধ্যে ছবিটি প্রর্দশন করেছি? এক্ষেত্রে বিষয়টি হচ্ছে, ছবিটি কোনও বাণিজ্যিক প্রদর্শনী কিন্তু হয়নি। সেন্সর বোর্ডের অনুমতি নিতে হয় বাণিজ্যিক প্রদর্শনীর বিষয়ে।’

ছবিটির ট্রেলার:

 

তবে সেন্সর বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বোর্ডের সচিব মুন্সী জালালউদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‌বাণিজ্যিক ও অবাণিজ্যিক- দুটো ক্ষেত্রেই অনুমতি লাগবে।
এমনকি তিনি উদহরণ দাঁড় করান আগামী বছরের জানুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য একটি চলচ্চিত্র উৎসবের কথা বলে। জানান, সে চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য ছবির সেন্সরের কাজ এখন চলছে।

এদিকে সেনাবহিনীর আপত্তির সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলো কী- জানতে চাইলে অং বলেন, ‘সেন্সর বোর্ড চিঠিতে উল্লেখ করেছে, ছবির সংলাপ ও কিছু দৃশ্য আর্মির সুনাম ক্ষুন্ন করেছে।’

এ বিষয়ে বোর্ড সচিবের ভাষ্য, ‌'চিঠিটি আমাদের কাছে সরাসরি এসেছে, তা নয়। এটি তথ্যমন্ত্রণালয় মারফত আমাদের কাছে আসে এবং সঙ্গে সঙ্গে আমাদের করণীয় যা, তাই আমরা করেছি। পরিচালককে দ্রুত একটি চিঠি পাঠিয়েছি।'
তবে কেন এত কালক্ষেপণ ও ছবিটির অবস্থা কী- প্রশ্নে তিনি যোগ করেন, 'ছবিটি প্রদর্শনী এখনও হয়নি। আমাদের কাছে যে ছবিগুলো জমা দেওয়া হয়, সেগুলো সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যান (তথ্যসচিব মর্তুজা আহমেদ) কাছে সূচি আকারে প্রদান করা হয়। জমা দেওয়ার পর চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, এটি আপতত হোল্ড (সেন্সরের জন্য প্রদর্শন স্থগিত) করতে। কারণ তথ্যমন্ত্রণালয় থেকে অভিযোগ আছে। এটির সুরহা হওয়ার পর তিনি সিদ্ধান্ত দেবেন। ছবিটি তিন মাস ধরে হোল্ড করা আছে।'

তিনি আরও জানান, ছবিটির বিষয়ে দেশে প্রদর্শনীর তদন্ত ও সেনাবাহিনীর আপত্তি নিষ্পত্তি হলে সেন্সরের কাজ এগুবে।
অং রাখাইন বাংলাদেশের একটি সংখ্যালঘু রাখাইন গোষ্ঠীর সদস্য। ‘মাই বাইসাইকেল' নামের এই ছবিটির জন্য তিনি গত দশ বছর ধরে কাজ করছেন। এটির দৃশ্যধারণ শুরু হয় ২০১২ সালে এবং ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ঢাকার একটি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথম এটি প্রদর্শিত হয়।

সেনাবাহিনীর আপত্তিতে আটকে গেল ‘মাই বাইসাইকেল’?

/এম/