আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মানবপাচারবিরোধী ডিজিটাল ক্যাম্পেইনে যোগ দিলেন জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পী মোশাররফ করিম এবং নুসরাত ইমরোজ তিশা।
গত শুক্রবার (৩০ জুলাই) ‘বিশ্ব মানবপাচার বিরোধী দিবস ২০২১’ উপলক্ষে তারা উভয়ই আলাদা ভিডিও বার্তায় তরুণ প্রজন্ম এবং সম্ভাব্য অভিবাসীদের মানবপাচার প্রতিরোধ এবং নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) ফেসবুক পেজে এই ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়। মোশাররফ করিমের ভিডিও বার্তা প্রচারিত হয় দুদিন আগে এবং তিশার ভিডিও বার্তা রবিবার (১ আগস্ট) প্রচারিত হয়।
ভিডিও বার্তায় মোশাররফ করিম বলেন, টিকটক সুপারস্টার বানানো, পার্টিতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ভয়ংকরভাবে মানবপাচার করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ অনেকদিন। খেলাধুলা, বাইরে যাতায়াত, সামাজিক কার্যক্রমও নেই। ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই বেশি সময় ব্যয় করছি আমরা। এই সুযোগটাই নিচ্ছে মানব পাচারকারীরা।
মানবপাচারের ভয়াবহ পরিণতির কথা তুলে ধরে জনপ্রিয় এই অভিনেতা বলেন, পাচারের শিকার ব্যক্তিরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। আর্থিক ঋণ, জোরপূর্বক বিয়ে, যৌন শোষণ এবং দাসত্বের বেড়াজালে আটকা পড়েন। তা ছাড়া মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।
টিকটক, হোয়াটঅ্যাপসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় পুরষ্কার বিজয়ী এ অভিনেতা বলেন, ফেসবুক, টিকটক, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তরুণ-তরুণীদের টার্গেট করছে পাচারকারীরা। চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে, প্রেমের ফাঁদে ফেলে পাচার করছে আপনার আমার আপনজনদের।
অনিরাপদ অভিবাসনের কুফল তুলে ধরে আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা ভিডিও বার্তায় বলেন, চাইলেই আমরা মানবপাচারের ঝুঁকি এড়িয়ে নিরাপদে বিদেশ যেতে পারি।
সম্ভাব্য অভিবাসীদের এই অভিনেত্রী দালালের খপ্পরে না পড়ে নিরাপদে অভিবাসন নিশ্চিতের আহ্বান জানান।
নিরাপদ অভিবাসনের নিশ্চিত করতে দর্শক-নন্দিত এ অভিনেত্রীর আহ্বান জানিয়ে বলেন, নিকটস্থ জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করুন। প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষতা বাড়ান। বিদেশ যাওয়া চূড়ান্ত হলে পাসপোর্ট, ভিসা, কাজের চুক্তিপত্রসহ সকল কাগজপত্র যাচাই করুন।
তিশার মতে, বিদেশে যাওয়ার অনেক অনিয়মিত পথ থাকলেও সেগুলো অবশ্যই পরিহার করতে হবে। নিয়ম মেনে বিদেশ গেলেই কেবল অভিবাসন নিরাপদ এবং সফল হবে।
বিশ্ব মানবপাচারবিরোধী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। এ উপলক্ষে গত বুধবার বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশ ইউনাইটেড নেশনস নেটওয়ার্ক অন মাইগ্রেশন (বিডিইউএনএনএম), সুশীল সমাজ এবং বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা একটি ভার্চুয়াল ওয়েবিনারে আলোচনায় যোগ দেন। এ ওয়েবিনারে মানবপাচারের শিকার হয়ে বেঁচে ফেরাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরার পাশাপাশি প্রতিবছর আনুমানিক ৭ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে অভিবাসনকালে যে ঝুঁকির সম্মুখীন হন, তার ওপর আলোকপাত করা হয়।
ওয়েবিনারে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো, বাংলাদেশে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক নেটওয়ার্ক- বিডিইউএনএনএম’র সমন্বয়ক এবং আইওএম বাংলাদেশের মিশন প্রধান গিওরগি গিগাওরি, জাতিসংঘে মানবপাচার বিষয়ক বিশেষ র্যাপোটিয়ার সিউবহান মুলালি প্রমুখ।
বাংলাদেশ ইউনাইটেড নেশনস নেটওয়ার্ক অন মাইগ্রেশনের অধীনে কাউন্টার ট্রাফিকিং ইন পার্সন টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ (সিটিআইপিটিডব্লিউজি) এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে। যাতে সহযোগিতা করেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অর্থায়নে পরিচালিত এবং ইউএনওডিসি ও আইওএম কর্তৃক বাস্তবায়িত গ্লো-অ্যাকট বাংলাদেশ প্রকল্প।
এই ওয়েবিনারের পাশাপাশি ডিজিটাল ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে ফেসবুকে একটি ইভেন্ট পেজ চালু করা হয়। বিশ্ব মানবপাচারবিরোধী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ইউনাইডেট নেশন নেটওয়ার্ক অন মাইগ্রেশন (বিডিইউএনএনএম) এর পৃষ্ঠপোষকতায় মানবপাচারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কার্যক্রম এবং সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে এই ইভেন্ট পেজটি করা হয়।
এই ইভেন্ট পেজ থেকে বিশ্ব মানবপাচারবিরোধী দিবসের কনটেন্ট ও বার্তা এবং মানবপাচার ও নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ক কনটেন্ট প্রচার করা হয়েছে বলে জানায় আইওএম।