X
শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫
২৬ বৈশাখ ১৪৩২

‘মানুষ’ শেখ হাসিনাকে নিয়ে জয়া আহসানের কিছু স্মৃতি

বিনোদন ডেস্ক
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪:৫৯আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮:৩৩

আজ (২৮ সেপ্টেম্বর) আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক নানা কর্মকাণ্ডের বাইরেও তিনি মানবিক মানুষ হিসেবে নানা অঙ্গনে প্রশংসিত। ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই তার সংস্পর্শে গিয়ে হয়েছেন মুগ্ধ। এবার তেমনই এক স্মৃতিচারণ করেছেন দুই বাংলার অন্যতম অভিনেত্রী জয়া আহসান।

‘‘এত বছর আগের একটা দিন, কিন্তু শেখ হাসিনার সেই ছবিটি এখনও উজ্জ্বল হয়ে আছে মনে। কিশোরীবেলার অনেক ঝলমলে স্মৃতি একসঙ্গে মিলেমিশে আছে বলেই হয়তো। উত্তুঙ্গ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জেনারেল এইচ এম এরশাদের সবেমাত্র পতন হয়েছে। সেনা শাসকের পতনের পর (১৯৯০ সালের দিকে) মনে হলো, বদ্ধ দরজা খুলে আবার আলো এলো। বাবা (এ এস মাসউদ) বললেন, ‘চল, আমার সঙ্গে। তোদের একটা জায়গায় নিয়ে যাই।’ কোন জায়গায়? কার কাছে? কিছুই জানি না। আমি আর আমার ছোট বোন কান্তা চললাম বাবার সঙ্গে। কান্তা চড়ে বসলো বাবার কাঁধে। আমি ধরলাম তার হাত।

মানুষের উজান ঠেলে পল্টন হয়ে বাবা আমাদের নিয়ে সোজা উঠলেন ৩২ নম্বর ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস ভরা বাড়িটিতে। যেন বেশ চেনা একটা আত্মীয়ের বাড়ি, এমনই নিশ্চিন্তে গিয়ে হাজির হলেন একটা ঘরের সামনে। দরজা ঠুকে বললেন, ‘বুবু, আসবো?’ শেখ হাসিনা কে, কী, সেসব কিছু বুঝিনি তখন। মনে মনে শুধু ভেবেছি, ও... ইনিই তাহলে বঙ্গবন্ধুর মেয়ে! বিছানায় ‘দ’–এর ভঙ্গিতে কিছুটা অর্ধশায়িত। ঘরোয়া মেজাজ। কিছুটা কি ক্লান্ত? আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে সেনা শাসনবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলনের ঝড়ঝাপটা বয়ে গেছে তার ওপর দিয়ে। কিন্তু কোথাকার কী? আমাদের দেখেই সস্নেহ একটা হাসির রেখা ফুটে উঠলো মুখে। সোজা হয়ে বললেন, ‘কাকে নিয়ে এসেছ, বাবলা? তোমার মেয়ে বুঝি?’

সেই তাকে প্রথম দেখা। গায়ে সাধারণ একটা বেগুনি-ঘিয়ে রঙের ডুরে শাড়ি। মাথায় সামান্য ঘোমটা টানা। একেবারেই বাঙালি নারীর চিরচেনা আটপৌরে ছবি। শেখ হাসিনার চোখের রঙ আর দশজন সাধারণ বাঙালির মতো নয়। সেদিকে চোখ না পড়ে উপায়ই নেই। তবু সব ছাপিয়ে চোখ আঠার মতো আটকে গেলো তার চুলে। ঘন কালো চুলের এক মোটা গোছা। ঘোমটার আড়াল থেকে বেরিয়ে পিঠ বেয়ে এঁকেবেঁকে নেমে গেছে কোমর পর্যন্ত। এমন দীর্ঘ আর চওড়া চুলের গোছাও হয় মানুষের? মনে খচিত হয়ে গেলো উজ্জ্বল ও চিরন্তন সেই বাঙালি ছবিটি।

এরপর তো পদ্মা নদী দিয়ে বহু পানিই গড়িয়ে গেছে। বড় রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেত্রী থেকে তিনি এ দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন কয়েকবার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার নিজেরও বাহ্যিক রূপান্তর কম হয়নি। কিন্তু চুলের মোটা গোছাসহ তার যে ছবিটা সেদিন দেখেছিলাম, মনের গভীরে এখনও উজ্জ্বল হয়ে আছে সেই ছবিটিই। আমার কাছে সেটিই তাঁর স্থায়ী রূপাবয়ব।

প্রধানমন্ত্রীর গুরুদায়িত্বভার তাকে বহন করতে হয়। ছোটখাটো বিষয়ে মন দেওয়ার অবকাশ কোথায়? কিন্তু তার সঙ্গে ছোট ছোট দুয়েকটি অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সামান্য বিষয়ের দিকেও তিনি সযত্ন দৃষ্টি রাখেন। প্রধানমন্ত্রী নন, নিতান্ত আপনজনের মতো। সেসব তার না রাখলেও চলে, তার হয়ে অন্য কেউ রাখলেই যথেষ্ট। তবু তিনি রাখেন। এ তার অসামান্য এক গুণ। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব তার ভেতরের মানুষটিকে এখনও মোটেই পিষ্ট করে দিতে পারেনি।

একটা ঘটনা বলি। সেবার আমাকে ‘জিরো ডিগ্রি’ ছবিটির জন্য সেরা অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেওয়া হবে। পুরস্কার সবার হাতে তুলে দেওয়া হবে একটি অনুষ্ঠান করে। ঘটনাচক্রে সে বছর পশ্চিমবঙ্গেও আমাকে ‘মহানায়ক উত্তম কুমার’ সম্মাননা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। সেবারই প্রথম কোনও নারী অভিনয় শিল্পীকে আয়োজকেরা এ পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই আলাদা একটা মর্যাদার ব্যাপার হয়ে উঠেছিল পুরস্কারটি। অর্থমূল্যও ছিল যথেষ্ট। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে উপস্থিত থেকে পুরস্কার দেবেন।

ভালোই প্যাঁচ লেগে গেলো। দুটো পুরস্কার দেওয়ার তারিখ পড়লো একই দিনে। শুধু কি একই দিনে? পড়লো একই দিনের কাছাকাছি সময়ে, এক-দেড় ঘণ্টার এদিকে-ওদিকে। সকালে আর বিকালে হলেও সামাল দেওয়া যেত। একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে চলে যাওয়া যেতো আরেকটি অনুষ্ঠানে। আয়োজকদের অনুরোধ করে সময়টাকে আগ-পিছ নানা চেষ্টাচরিত্র করেও ফল হলো না। হবে যে না, সেটা এক রকম অনুমানও করেছিলাম। এত এত মানুষের সময়সূচি আবার মিলিয়ে সব ঠিক করা কি সহজ? কিন্তু জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার যে আমার দেশের সম্মাননা। তাছাড়া এর মর্যাদাও আলাদা। প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে এ পুরস্কার শিল্পী-কুশলীদের হাতে তুলে দেবেন। এই পুরস্কার না নিয়ে কি পারা যায়?

দেশেই রয়ে গেলাম। অনুষ্ঠানে যথারীতি আমার নাম ডাকা হলো। মঞ্চে উঠলাম পুরস্কার নিতে। প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নেওয়ার সময় কোমল গলায় তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘জয়া, তুমি কলকাতায় যাওনি?’ তার মুখে এই প্রশ্ন? এত ব্যস্ততার মধ্যে এই অকিঞ্চিৎকর তথ্যটুকু তিনি শুনেছেন, শুনে মনেও রেখেছেন? শুধু এখানেই তো শেষ নয়। আগে কয়েকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া সত্ত্বেও যে আন্তর্জাতিক একটা সম্মাননার মায়া ছেড়ে দিয়ে আমি রয়ে গেছি, বক্তৃতা দিতে উঠে বললেন সে কথা। বললেন, এই হলো দেশের প্রতি ভালোবাসা। আমি তো বাকরুদ্ধ।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার মঞ্চে প্রধামন্ত্রীর হাত থেকে পদক নিচ্ছেন জয়া আহসান আমি গভীরভাবে অভিভূত হয়েছিলাম আরও একটি ঘটনায়। প্রকৃতি আর প্রাণীর প্রতি আমার প্রাণের টান। প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করে, এমন কিছু সংগঠনের সঙ্গে তাই সক্রিয় যোগাযোগ রাখি। এ রকমই এক সংগঠন থেকে একবার খবর এলো, গণভবন লাগোয়া একটি জায়গা থেকে তারা একটি কুকুর উদ্ধার করেছে। গণভবনের চিফ সিকিউরিটি এসডিএন কবীর সাহেবের কাছে পরে শুনেছিলাম, গণভবনের বিস্তীর্ণ জায়গাজুড়ে অর্ধশতাধিক কুকুর আছে। আছে বেড়ালেরও দল। পোষা নয়। স্বাধীন ও ছন্নছাড়া। এত গাছপালা ভরা সবুজ একটা জায়গা। পাখপাখালিও সে কারণে এন্তার। যা হোক, দলছুট সারমেয় মহাশয় কোনও ফাঁকফোকর গলে গণভবনের বাইরে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ে ছিল পথে।

সেই দলছুট মহাশয়ের একটা হিল্লে করা হলো। কিন্তু কবীর সাহেবের কাছ থেকে আরও যে তথ্য পেলাম, তাতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ভালোবাসায় বুকটা ভরে গেলো। সেই কুকুরগুলোর জন্য তিনি নিজেই খাবারের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। ওদের জন্য ফার্ম থেকে মুরগির মাংস আসে। সেই মুরগির সঙ্গে চাল মিশিয়ে রোজ খাবার তৈরি হয়। বেড়ালগুলোর জন্য প্রতিদিনের বরাদ্দ ২০ লিটার করে দুধ। গণভবনের ভেতরের গাছগুলো থেকে ফল পাড়তে দেওয়া হয় না। ওইসব ফলপাকুড় পাখিদের ভোজ্য। তার নির্দেশে পশুপাখিগুলোর জন্য আলাদা একটা ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। রাষ্ট্র নিয়ে যার শত ব্যস্ততা, তার মনের একটি ভাগ তিনি এদের জন্যও দিয়ে রেখেছেন। ভেতর থেকে উপচে আসা গভীর ভালোবাসা ছাড়া কি আর এটি সম্ভব?

রাষ্ট্র আর রাজনীতি কোটি মানুষকে নিয়ে কাজ করে। তার তাই হাজার পথ, হাজার মত। সে নিয়ে জটিল বিতর্কের শেষ হবে না কোনও দিন। কিন্তু যৎসামান্য স্মৃতির গুচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে মানুষী রূপ দেখেছি, তার তুলনা মেলা ভার। এখনও যখনই তাকে দেখি, তখনই মনে ফিরে আসে কিশোরবেলায় দেখা মোটা চুলের গোছায় উজ্জ্বল সেই সস্নেহ মুখটি। অন্তরঙ্গ, নিবিড়, মমতামাখা।’’

প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে জয়া আহসানের পুরো লেখাটি:

/এম/এমএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ট্রেলারে আগ্রহ বাড়ালেন জয়া-মহসিনা, মুক্তি ১৬ মে
ট্রেলারে আগ্রহ বাড়ালেন জয়া-মহসিনা, মুক্তি ১৬ মে
অপেক্ষা ঘুচিয়ে আসছে ‘জয়া আর শারমিন’
অপেক্ষা ঘুচিয়ে আসছে ‘জয়া আর শারমিন’
কেমন কাটছে জয়ার এবারের নববর্ষ?
কেমন কাটছে জয়ার এবারের নববর্ষ?
মুক্তি পেল ‘জিম্মি’
মুক্তি পেল ‘জিম্মি’
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
নতুন গানে টিনা রাসেলের ব্যাকুলতা
নতুন গানে টিনা রাসেলের ব্যাকুলতা
ট্রেলারে ‘গুলমোহর’ যেমন
ট্রেলারে ‘গুলমোহর’ যেমন
কান ক্ল্যাসিকসে চার্লি চ্যাপলিনের সঙ্গে সত্যজিৎ রায়
কান ক্ল্যাসিকসে চার্লি চ্যাপলিনের সঙ্গে সত্যজিৎ রায়
বাবাকে ‘মিথ্যাবাদী’ বললেন নওয়াজ!
বাবাকে ‘মিথ্যাবাদী’ বললেন নওয়াজ!
একসঙ্গে আফজাল-শাকিব
একসঙ্গে আফজাল-শাকিব