X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

মারা গেলেন কিংবদন্তি সংগীত পরিচালক আলম খান

বিনোদন রিপোর্ট
০৮ জুলাই ২০২২, ১৩:১৮আপডেট : ০৮ জুলাই ২০২২, ১৯:৫২

না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন কিংবদন্তি সুরস্রষ্টা আলম খান। প্রয়াতর বড় ছেলে সংগীতশিল্পী আরমান খান জানান, শুক্রবার (৮ জুলাই) বেলা ১১টা ৩২ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তার বাবা।

আরমান খান বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই আব্বা বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন। ২০১১ সালে ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর ক্রমশ নরম হয়ে পড়েন। আজ সকালে চলেই গেলেন। আপনারা সবাই আমার বাবার রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করবেন।’

জানান, শুক্রবার বাদ আসর আলম খানের প্রথম জানাজা হবে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে। এরপর মরদেহ ঢাকা থেকে নিয়ে যাওয়া হবে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত মসজিদুল আউলিয়া হযরত খাজা শাহ মোজাম্মেল হক (রা.) প্রাঙ্গণে। সেখানে জান্নাতুল ফেরদৌস কমপ্লেক্সে স্ত্রীর কবরের পাশেই শায়িত করা হবে আলম খানকে।

জান্নাতুল ফেরদৌস কমপ্লেক্স

এক জীবনে আলম খান

আবদুল জব্বার খানের ‘কাঁচ কাটা হীরে’ সিনেমার মাধ্যমে ১৯৭০ সালে চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন আলম খান। তারও আগে ১৯৬৩ সালে রবিন ঘোষের সহকারী হিসেবে ‘তালাশ’ চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করেন। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে অসংখ্য সিনেমার মধ্য দিয়ে হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি। ধারাবাহিক সাফল্যের মধ্য দিয়ে তিনি সৃষ্টি করেন একের পর এক জনপ্রিয় গান। 

১৯৪৪ সালের ২২ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের বানিয়াগাতি গ্রামে আলম খান জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম খুরশিদ আলম খান। বাবা আফতাব উদ্দিন খান ছিলেন সেক্রেটারিয়েট হোম ডিপার্টমেন্ট-এর অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার ও মা জোবেদা খানম গৃহিণী। আলম খানের মা জোবেদা খানম ছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলার দরবারের এক শিল্পীর বংশধর। সিরাজগঞ্জে কয়েক বছর থাকার পর বাবার চাকরির সুবাদে তিনি কলকাতায় চলে যান। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর বাবার সাথে ঢাকায় ফিরে আসেন।

তারপর ঢাকাতেই স্থায়ী এবং সিদ্ধেশ্বরী স্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকেই ম্যাট্রিক পাস করেন। স্কুলে থাকাকালীন তার গানের প্রতি ঝোঁক সৃষ্টি হয়। বাবা আফতাব উদ্দিন প্রথমে অনাগ্রহ দেখালেও মায়ের উৎসাহে গানের চর্চা চালিয়ে যান। পরবর্তী সময়ে তার বাবাই তাকে ওস্তাদ ননী চ্যাটার্জির কাছে গানের তালিমের জন্য নিয়ে যান। পাঁচ ভাই তিন বোনের মধ্যে আলম খান মেজো। বাংলাদেশের প্রখ্যাত পপ সংগীত শিল্পী আজম খান ছিলেন তার ছোট ভাই।

আলম খানের সুরকৃত প্রথম জনপ্রিয় গান ছিল স্লোগান ছায়াছবির ‘তবলার তেড়ে কেটে তাক’। এরপর ১৯৭৭ সালে আবদুল্লাহ আল মামুন তার পরিচালিত সারেং বৌ চলচ্চিত্রের গান নিয়ে কথা বলার সময় তার ১৯৬৯ সালের সুর করা একটি মুখরা শুনালে ছবির পরিচালক তা নিতে আগ্রহী হন।

১৯৭৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সেই ছবির আবদুল জব্বারের কণ্ঠে ‘ওরে নীল দরিয়া’ গানটি তার এক অনন্য সৃষ্টি। ১৯৮২ সালে রজনীগন্ধা চলচ্চিত্রে তার সুরারোপিত সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো’ এবং সৈয়দ শামসুল হকের লেখা ও এন্ড্রু কিশোরের কণ্ঠে ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’ দর্শকদের মন কাড়ে। এমনি অসংখ্য কালজয়ী গানের এই সুরকার এ পর্যন্ত তিন শতাধিক ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন। তার সুর করা গানের সংখ্যা দুই হাজারের ওপরে।

আলম খান ১৯৭৬ সালে হাবিবুননেসা গুলবানুর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। গুলবানু একজন গীতিকার। আলম খানের সুরে সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে গাওয়া ‘তুমি তো এখন আমারই কথা ভাবছো’ গানটির গীতিকার গুলবানু। তাদের দুই ছেলে আরমান খান ও আদনান খান দুজনেই সংগীত পরিচালক এবং একমাত্র মেয়ে আনিকা খান।

আলম খানের সুর ও সংগীত পরিচালনায় হওয়া অসংখ্য জনপ্রিয় গানের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘কি জাদু করিলা’, ‘ওরে নীল দরিয়া’, ‘তুমি যেখানে আমি সেখানে’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘ভালোবেসে গেলাম শুধু’, ‘চাঁদের সাথে আমি দেবো না’, ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে’, ‘সাথীরে যেও না কখনো দূরে’, ‘কাল তো ছিলাম ভালো’, ‘চুমকি চলেছে একা পথে’, ‘তেল গেলে ফুরাইয়া’ ইত্যাদি।

আলম খান শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে ১৯৮২ সালে মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘বড় ভালো লোক ছিল’ সিনেমার মাধ্যমে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এরপর তিনি ‘তিন কন্যা’ (১৯৮৫), ‘সারেন্ডার’ (১৯৮৭), ‘দিনকাল (১৯৯২) এবং ‘বাঘের থাবা’ (১৯৯৯), ‘এবাদত’ (২০০৯) ছবিগুলোতে একই পুরস্কারে ভূষিত হন। শ্রেষ্ঠ সুরকার হিসেবে ২০০৮ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ‘কি জাদু করিলা’ ছবির জন্য।

/এমএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
‘দেওরা’ সফলতার পর ‘মা লো মা’ চমক
‘দেওরা’ সফলতার পর ‘মা লো মা’ চমক
জন্ম আর মৃত্যুর সুরেলা মেলবন্ধনের প্রতিধ্বনি
৩৫তম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসবজন্ম আর মৃত্যুর সুরেলা মেলবন্ধনের প্রতিধ্বনি
যে গল্পের জন্ম ওষুধের দোকান থেকে!
যে গল্পের জন্ম ওষুধের দোকান থেকে!
উদ্বোধক মেরিল স্ট্রিপ, পাচ্ছেন স্বর্ণপাম
কান উৎসব ২০২৪উদ্বোধক মেরিল স্ট্রিপ, পাচ্ছেন স্বর্ণপাম
ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র
ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র